আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এই বন্ধুত্ব থাক চিরদিন

পৃথিবীটা কত সহজেই বদলে যায়। চেনা মানুষগুলো সময়ের ব্যবধানে হারিয়ে যায় অনেক অনেক দূরে। যে যাই বলুক , দূরত্বই সব সুতোর বাধন আলগা করে দেবার জন্য যথেষ্ঠ। জীবনে এখনও কারও সাথে প্রেমের বাধনে জড়াতে পারিনি, কিন্তু সময়ের ব্যবধানে হারিয়েছি অনেক বন্ধুকে। কিন্তু এমন কিছু বন্ধু পেয়েছি যাদের কারনে আমি সত্যিই গর্বিত।

অনেক তদবির করার পর হলে সিট পেলাম। সাথে পেলাম ফ্রী তিনটা রুমমেট। এ এন, রাফি, শাহিনুর আমার তিন রুমমেট। রুমে প্রথমদিন এসেই ব্যাটা রাফি তার পাশের ইলেকট্রিক সুইচ ঠিক করতে গেল। ফলাফল ঃ পুরো রুম অন্ধকার।

শেষেমেষ মিস্ত্রী ডেকে সেই যাত্রায় রক্ষা। প্রথমদিন বলে তাকে কিছু বলা হয়নি। কিন্তু তার জীবনে সে আকিকা বাদেই পাগল উপাধি পেল। শাহিনুর, যে তার ডিপার্টমেন্টে বিজি ম্যান নামে পরিচিত। সকল কাজেই তার শুধু তাড়াতাড়ি করা।

অবশ্য তার কল্যানেই আমরা প্রতিদিন সকালে উঠতে পেতাম। ধন্যবাদ, বিজি ম্যান। এ এন, যার সাথে পরিচয় সেই কলেজ লাইফ থেকে, আমরা সবসময় একই বেঞ্চে বসতাম, কপাল গুনে আবার আমরা একই ভার্সিটিতে। ব্যাটা আবার কয়েককাঠি বেশী সরেস। তার লুলীয় কারবারের জন্য মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানেই রমনীমোহন উপাধিতে ভুষিত করা হল।

অবশেষে হল লাইফ শুরু করলাম। আমি আর রাফি, দুইটা টেবিল ব্যবহার করার জন্য ভুমিদস্যু উপাধি পেয়ে গেলাম। এই হল আমাদের সংসার, ভুমিদস্যু, রমনীমোহন, বিজি ম্যান কি নেই! আরে বাবা, একইরুমে থাকি বলে কি আমাদের প্রাইভেসি থাকবেনা?? রাফির ভাষ্যমতে, “আমি যখন রুমের অধিবাসি, তখন রুমের প্রতিটা ইঞ্চিতে আমার ভাগ আছে। ” থাক ব্যাটা তোর ভাগ নিয়ে। এ এনকে তার লুলীয় ব্যাপারে কিছু বললেই, রাফির গলাই আগে শোনা যাবে, “ছেলে মানুষ একটু আধটু থাকবেই।

” সাথে সাথেই সে এ এন এর কাছে যাবে এবং বলবে “ দোস্ত তুই যাই করিস, আমাকে একটু ভাগ দিস, না মানে তুই যার সাথে প্রেম করবি তার বান্ধবীর সাথে আমার একটু কিছু হইলেই হবে। ” এই এ এনকে নিয়ে আমার স্মৃতির শেষ নেই। একদিন ফ্লাইওভার পার হচ্ছি। অসম্ভব মানুষের ভিড়। শেষমেষ রেগে গিয়ে সে বলে, এত মানুষ যে কই থেকে আসে? আমি তখন তাকে সুন্দর ভাবে জিজ্ঞাসা করি, “দোস্ত তোরা যেন কয়ভাইবোন”? বলাবাহুল্য, ভাইরা সব প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় সে জবাব দেয় চার ভাই।

আমি মুচকি হেসে বলি, আমি কিন্তু একাই, এখন চিন্তা করে দেখ তোর বাপের মত কিছু লোকের কারনেই আজ দেশের জনসংখ্যা এত বেশী। যাইহোক ভিড়ের কারনে মারের হাত থেকে বেচে গেলাম। আমাদের রুমে দুইটি গ্রুপ হয়ে গেছি। প্রয়োজন নাকি সবকিছুর ব্যবস্থা করে দেয়। আমি আর শাহিনুর একদিকে, রমনীমোহন আর তার সাগরেদ একদিকে।

শাহিনুর কিছু বললেই আমি তাকে সাপোর্ট দিব, আর এদিকে বাকীদুইজন সবসময় আমাদের পেছনে লেগে থাকবেই। শাহিনুর যদি বলে চোরে চোরে মাসতুতো ভাই। তখন বাকী দুই জন বলবে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে থাকলে লোকজন সবসময় উল্টাপাল্টা বলবেই! এরা যে কেমন ন্যায়ের কথা বলে তার একটা উদাহরন দেই............... এদের ন্যায়ের কথার অত্যাচারে আমাদেরকে রুমে আইন জারী করতে হল। বাংলা বর্নমালার “ক” , “খ” এর পরের অক্ষর দিয়ে কিংবা “ঙ” এর পরের অক্ষর দিয়ে রুমে কোন বাজে কথা বলা যাবেনা। হতে হতে বাংলা বর্নমালা শেষ করে শেষপর্যন্ত ইংরেজীর সব অক্ষর নিয়ে রুমে আইন জারী হল........................ না তবুও হলনা...... এবার তারা শুরু করল অন্যভাবে, এতদিন যা বলেছে তাই নাকি আপ্লাই করা হবে।

রমনীমোহন বাবুকে আমি অনেকদিন আগে থেকেই চিনি, আমার জীবনে তার প্রভাব অনেকখানি। সে আমার সেরা একজন মেন্টর। সেরা একজন সাপোর্টার। আমি সবচেয়ে অবাক হয়ে যাই, ছেলেটাকে আমি কোনও কটু কথা বললেও সে কখনও আমাকে রাগারাগি করবেনা। সত্যিই অবাক হয়ে যাবার মতনই।

আমার প্রতি সে অনেক অনেক অনেক কেয়ারিং । এবার আসি বিজি ম্যানের কথায়। সে বিজি ম্যান হলেও আগে অনেক অন্তর্মুখী ছেলে ছিল। হটাত এই নিয়ে আমাদের মধ্যেও অনেক কানাঘুষা হত। অথচ সেই ছেলেটিই আজ আমাদের সাথে সবচেয়ে ফ্রী হয়ে মিশতে পারে।

যেকোন জায়গায় যাওয়ার জন্য নিজে থেকে উদ্যোগ নিতে পারে। মানুষকে মুগ্ধ করতে একটি অসাধারনত্বই যথেষ্ঠ। বন্ধুরা পাগলা উপাধি দিলে কি হবে? রাফি ছেলেটা সত্যিই অসাধারন। মানুষকে আপন করে নিতে যার জুড়ি নেই। সে নিয়মিত তার উল্টাপাল্টা ঘটনা ঘটিয়ে আমাদের তটস্থ করে রাখে।

সেই আমাদের রুমের প্রানভোমরা। হোকনা উল্টাপাল্টা ঘটনার জনক, এমন একজনকে রুমমেট হিসেবে পেয়ে আমরা একই সাথে ভীত ও আনন্দিত। আমাদের মধ্যে গ্রুপিং থাকলেও সেটা শুধুমাত্র মজার জন্যই, অথচ আমাদের সবাই একাত্মা। মাঝে মাঝে বলি দোস্ত আমার হৃদয়ের চারটি প্রকোষ্ঠ। তিনটি তোদের জন্য।

যদি কখনও লাগে বলিস। আর একটা তোদের ভাবীর জন্য, ঐ টা কোনও দিনও আবার চেয়ে বসিসনা। এমন সময়ে উত্তর পাই, এইটা কোনও ব্যাপার হইল। আমাদের হৃদয় আছেনা? দরকার হইলে আমরা আমাদের হৃদয়ের বারোটি প্রকোষ্ঠ দিয়েই ভাবীকে ভালবাসব। শালারা বলে কি????????????? এই হল আমার রুমমেটরা।

যাদের ভালোবাসায় আমি প্রতিনিয়ত মুগ্ধ হচ্ছি। যাদের অনুপ্রেরণা আমাকে প্রতিনিয়ত পথ চলতে , নতুনকে বরণকরে নিতে সাহায্য করছে। আমি সত্যিই তোদের কাছে অনেক কৃতজ্ঞ। পরিশিষ্ট ঃ আর মাত্র কয়েকদিন আমরা একসাথে রুমে আছি। এরপর হয়ত আর এভাবে আনন্দ করা হবেনা, কিংবা নতুন কোন নিয়ম আর আসবেনা।

আচ্ছা, সারাজীবন কি সবাইকে কাছে রাখা সম্ভব? সকালের পৃথিবী তো বিকেলেই অন্যরুপ ধারন করে। ক্ষণে ক্ষণে সবকিছু বদলায়। হয়তো আমাদের এই সম্পর্ক একদিন আর এই রকম থাকবেনা। কিন্তু তাতে কি? তোদের যতটুকু ভালবাসা আমি পেয়েছি, আমি সত্যিই গর্বিত তোদের নিয়ে। জানিনা, তোরা এই লেখা পড়বি কিনা? তবুও আমিতো আমার মনের কথাটুকু সামনাসামনি না বলতে পারলেও কাগজে লিখেছি।

অন্তত এটা ভেবে শান্তি পাব, আমি আমার কথাটা মনের ভিতরে নয়, বাইরে আনতে পেরেছি। দোস্ত আমি তোদের ভালবাসি। হ্যা, অনেক অনেক ভালবাসি। আজীবন যেন আমি তোদের বন্ধু হয়ে থাকতে পারি। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।