আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

‘কোমরে বাঁধা শার্ট দেখে লাশ চিনে নিয়ো’

ভালো কিছু করতে চাই ----------------------------------------------------------------------------- বাবা, মা, ভাই, ভাবি—আশুলিয়ার আগুনে এই চার প্রিয়জনকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছে শিশু রতন। সান্ত্বনা জানানোর ভাষা জানা নেই, তাই রতনকে ধরে নির্বাক সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা এক সহপাঠীর। গতকাল রংপুরের লতিফপুর ইউনিয়নের বড়বাড়ি গ্রাম থেকে তোলা ছবি ----------------------------------------------------------------------------- ‘মা, আমি মনে হয় আর বাঁচতে পারব না। আমাদের গার্মেন্টসে আগুন লেগেছে। এখান থেকে বের হতেও পারব না।

ধোঁয়ায় আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। আমার কোমরে পরনের শার্টটি বাঁধা থাকল। এটি দেখে লাশ চিনে নিয়ো। ’ মাকে ফোন দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে এ কথাগুলো বলছিলেন পলাশ। বলতে বলতেই ফোনের লাইন কেটে যায়।

গতকাল সোমবার আহাজারি করতে করতে এসব কথা বলছিলেন পলাশের মা গোলাপী বেগম। আশুলিয়ায় তৈরি পোশাক কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে মৃত ১১১ জনের মধ্যে একজন রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার বড়বাড়ি গ্রামের মো. পলাশ (২৪)। গতকাল তাঁর মরদেহ বড়বাড়ি গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। এই অগ্নিকাণ্ডে মিঠাপুকুরের আরও কমপক্ষে ১৭ জন মারা গেছেন। ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় গোলাপী বেগমের সঙ্গে আর কথা বলা সম্ভব হয়নি।

তাঁদের গ্রামের নজরুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে স্বজনদের মধ্যে মাতম দেখা যায়। নজরুল, তাঁর স্ত্রী আমেনা খাতুন, ছেলে নয়ন ও ছেলের বউ মনিরাও পুড়ে যাওয়া কারখানায় কাজ করতেন। বাড়িতে নজরুলের শাশুড়ি সোবেরা খাতুন হাউমাউ করে কাঁদছেন। মাঝেমধ্যে বিলাপ করছেন, ‘বাবারে তোমরাগুলা একেসাথে মরি গেইনেন। মরা মুখটাও দেইখপার পানু না।

’ মা, বাবা, ভাই, ভাবিকে হারানোর খবর পাওয়ার পর থেকে শুধুই কাঁদছে নজরুলের ছোট ছেলে রতন। নজরুলের শ্বশুর আহমেদ আলী গতকাল মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘লাশ আইনবার জন্যে ঢাকায় গেছিনু। কিন্তু লাশ না পায়া বাড়ি (রংপুর) ফিরি আসতোছি। লাশ আইনবার যায়া লাশও পাইনো না ইয়ার চায়া আর কী দুঃখ হবার পারে। ’ একই কারখানায় কাজ করতেন মিঠাপুকুরের মির্জাপুর গ্রামের রিপুল।

তাঁর লাশও পাননি স্বজনেরা। তবে তাঁর স্ত্রী আনোয়ারী বেগমের লাশ পাওয়া গেছে। গতকাল আনোয়ারীর মরদেহ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। মণ্ডলপাড়া গ্রামের সীমা বেগম জানালেন, তাঁর ছেলে শাহীন মিয়া ও ছেলের বউ জান্নাতী বেগমের লাশ পাওয়া যাচ্ছে না। তাঁরাও ওই কারখানায় কাজ করতেন।

মিঠাপুকুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু হেনা মোস্তফা কামাল জানান, আশুলিয়ায় অগ্নিকাণ্ডে মিঠাপুকুরের ১৮ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে লতিফপুর ইউনিয়নের ১৪ জন বাসিন্দা রয়েছেন। অন্যদের মধ্যে রানীপুকুরের দুই, মিলনপুরের এক ও কাফ্রিখাল ইউনিয়নের একজন রয়েছেন। আশুলিয়ার কান্না নবাবগঞ্জে: দিনাজপুর অফিস ও বিরামপুর প্রতিনিধি জানান, আশুলিয়ায় তৈরি পোশাক কারখানার অগ্নিকাণ্ডের কান্না ছুঁয়েছে দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলায়ও। ওই অগ্নিকাণ্ডে নবাবগঞ্জের বিনোদনগর ইউনিয়নের দুজনের মৃত্যু হয়েছে।

অন্য একজনকে খুঁজে পাচ্ছেন না স্বজনেরা। ওই তিন পরিবারে এখন চলছে মাতম। মৃত দুজন হলেন: বিনোদনগরের বড় মাগুরা গ্রামের আবদুল হালিমের ছেলে আবু শাহিন (২২) ও কলমদারপুর গ্রামের মোর্শেদ আলমের স্ত্রী মৌসুমী আক্তার (১৮)। গত রোববার তাঁদের মরদেহ এনে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন কলমদারপুর (খিয়ারপাড়া) গ্রামের আনোয়ারুল ইসলামের ছেলে সিরাজুল ইসলাম (২২)।

গতকাল সিরাজুলদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তাঁর মা দৌলতুন নেছা ছেলের ছবি বুকে নিয়ে বাড়ির আঙিনায় বসে আছেন। থেমে থেমে তিনি হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন। সন্তানকে ফিরে পেতে বিলাপ করে ফিরছেন সবার কাছে। সিরাজুলের ছোট বোন খাদিজা খাতুন (১৫) জানায়, সিরাজুল ওই কারখানায় কাজ করতেন। তাঁর স্ত্রী পাশের একটি কারখানায় কাজ করেন।

অগ্নিকাণ্ডের খবর শোনার পর তাঁর বাবা আনোয়ারুল ইসলাম আশুলিয়া গেছেন, কিন্তু গতকাল পর্যন্ত সিরাজুলের খোঁজ পাননি।  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।