স্বদেশের জন্য গর্বিত এক ব্লগার কেন কাজ করি? এরকম কিছু সাংঘাতিক দার্শনিক জিজ্ঞাসা নিয়ে একদিন বসেছিলাম নিমগ্ন ধ্যানে। যা পেয়েছি, ধ্যানে পেয়েছি। তাই এখানে যা লেখা হয়েছে, তাতে কোন গলদ থাকলে তা ধ্যানের দায়, আমার নয়। তবে বলে রাখছি, দু’একজন মহান ব্যক্তির দু’একটি জ্ঞানের কথা ধ্যানের বিষয় থেকে বাদ যাবে।
“জীবনের উদ্দেশ্য হলো সমস্ত মন-প্রাণ দিয়ে জীবনের উদ্দেশ্যকে খোঁজা।
” সিদ্ধার্থ গৌতম
“৭টি মহাপাপ হলো: শ্রমহীন সম্পদ, বিবেকহীন আনন্দ, মানবতাহীন বিজ্ঞান,চরিত্রহীন জ্ঞা্ন, নীতিহীন রাজনীতি, নৈতিকাবিবর্জিত বাণিজ্য এবং ত্যাগহীন উপাসনা। ” মহাত্মা গান্ধী
“যখন তুমি খেলো আন্তরিকভাবে খেলো; কিন্তু যখন কাজ করো তখন যেন খেলো না!" থিউডর রুজভেল্ট
“কাজ ৩টি মন্দকে দূরীভুত করে - বিরক্তি, পাপ ও দারিদ্র্য। ” ভলটেয়ার
পৃথিবীতে মানুষের আগমন কি উদ্দেশ্যহীন? মানুষের জন্ম কি কোন দুর্ঘটনার ফল? সৃষ্টিকর্তা, যিনি বলেছেন যে তিনি কথিত জ্ঞানী ও দার্শনিকদের দৃষ্টি থেকে তাঁর সৃষ্টি রহস্য গোপন রেখেছেন, তিনি প্রত্যেক মানুষকেই একটি উদ্দেশ্য দিয়ে পাঠিয়েছেন; রোপন করে দিয়েছেন একেকটি স্বপ্ন। প্রত্যেক আত্মার জন্যই তাঁর একটি পরিকল্পনা আছে। তাঁর প্রধান পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয় যখন আমরা মানুষের জন্য কিছু করি, কারণ মানুষ সৃষ্টিকর্তার প্রিয়তম সৃষ্টি।
ইবাদত বা উপাসনা সৃষ্টিকর্তাকে কখনও সন্তুষ্ট করতে পারে না, কারণ কেউই পরিপূর্ণভাবে তা করতে পারে নি।
কাজই উপাসনা (মহাত্মা গান্ধী ও টমাস কারলাইল)।
উপাসনাও কোন কর্মহীন প্রক্রিয়া নয়। কাজ দ্বারাই আমরা তাঁর উপাসনা করতে পারি এবং অন্যকে সেবাও করতে পারি, কারণ কাজ সবসময়ই অন্যের উদ্দেশ্যে করা হয়। ডাক্তার কাজ করেন তার রোগীর রোগমুক্তির জন্য; নাপিত বা ঝাড়–দার কাজ করেন অন্যদের পরিচ্ছন্নতা বিধানের জন্য; দর্জি কাজ করেন অন্যের পোশাক তৈরির জন্য; শিক্ষক শিক্ষাদান করেন যাতে অন্যের সন্তান শিক্ষিত হয় এবং কৃষক মাঠে সফল ফলান যাতে তার উদ্বৃত্ত অন্যের কাছে বিক্রি করতে পারেন।
আমরা দেখতে পাই যে, আমরা যা কিছুই করি, তা অন্যকে উপকৃত করে; আর সেটাই সৃষ্টিকর্তার প্রধান পরিকল্পনাকে বাস্তবায়ন করে। কাজ শুধুই আমাদের খাবারের সংস্থান করার জন্য নয়। তাই আমাদের কাজের প্রথম এবং শেষ উদ্দেশ্য হলো সৃষ্টিকর্তার পরিকল্পনাকে বাস্তবায়ন করা এবং তার মধ্য দিয়ে তাঁর উপাসনা করা।
আমরা কাজ ছাড়া থাকতে পারি না। কেন পারি না?
কাজ কি শুধুই আমাদের জীবিকা অর্জনের জন্য? তাহলে অবসর গ্রহণ করার পরও কেন মানুষ কাজ খুঁজে বেড়ায়? কয়েদিরা কেন কাজের জন্য ব্যাকুল হয়? প্রথমত, কাজ ছাড়া আমরা থাকতে পারি না, কারণ এটা স্বভাব বিরুদ্ধ।
কাজ মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। নিষ্ক্রিয়তা হলো মৃত্যু। কর্মহীনতা আমাদের দেহে রোগের সৃষ্টি করে, যার পরিণতি হয় অকাল মৃত্যু। মানুষকে কাজ ছাড়া থাকতে বাধ্য করা হলে, কাজের জন্য সে উম্মাদ হয়ে যায়। কাজ ছাড়া থাকা যায় না বলে কারাগারের কয়েদি সমস্ত ধর্মগ্রন্থ মুখস্থ করে ফেলতে পারে।
এডল্ফ হিটলার তার বিপ্লব সৃষ্টিকারী গ্রন্থ ‘মেইন কেম্প’ (আমার সংগ্রাম) লিখেছিলেন কারাগারে থেকে। আমাদের দেশের একজন সাবেক রাষ্ট্রপ্রধান কবিত্ব অর্জন করেছেন কারাগারে থেকে। দ্বিতীয়ত, শুধু জীবিকা অর্জনের জন্য মানুষ কাজ করে না। সে কাজ করে মানবিক উৎকর্ষতার জন্য এবং তার আত্মার সন্তুষ্টির জন্য। অমরত্ব লাভের এক অদম্য ইচ্ছা থেকে এটা হয়।
মানুষ অনেকের মধ্যে বিশিষ্টতা চায়, মহান হতে চায়। মানুষ এ ইচ্ছা পেয়েছে তার সৃষ্টিকর্তা থেকে, যিনি নিজেও মহান ও চিরন্তন এবং যিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন নিজ কাঠামোতে সকল প্রাণীর রক্ষক ও তদারক হিসেবে। সৃষ্টিকর্তা চান যেন মানুষ শুধু প্রাণী থেকে নয়, মানুষ যেন মানুষের মধ্যেও মহান হয়। তিনি চান যেন মানুষ মানুষকে ভালবাসে, দয়া করে ও সাহায্য করে। তিনি বিশ্বের আলো হিসেবে মানুষকে দেখতে চান, যাতে তাঁর নাম আলোকিত হয়।
কিন্তু একমাত্র কাজ দ্বারাই মানুষ নিজেকে উৎকর্ষতা দিতে পারে এবং অন্যের জন্য নিজেকে প্রয়োজনীয় করে তুলতে পারে, অকর্মন্যতা দিয়ে নয়। তাই কাজ মানুষের আদিম এবং জন্মগত প্রবণতা, কারণ সে সৃষ্টিকর্তার প্রতিনিধি।
কীভাবে কাজে মহত্ব ও অমরত্ব অর্জন করা যায়?
কাজই মানুষের জীবনকে দেয় অর্থ। পৃথিবীর সকল ধর্মে, সকল সংস্কৃতিতে, সকল সভ্যতায় কাজকে উপাসনার সাথে তুলনা করা হয়েছে। সভ্যতার সকল সৃষ্টি কাজের ফল।
কাজ হলো ভালবাসার দৃশ্যমান প্রকাশ (খলিল গিবরান)।
কীভাবে কাজ দ্বারাউপাসনা করা যায়?
কাজকে যদি সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত দায়িত্ব মনে করা হয় তবে সেটাই হয় সত্যিকার উপাসনা। সৃষ্টিকর্তা চান যেন আমরা যে কাজই করি তা তাঁর উদ্দেশ্যে করি। তাই, আমাদের সামনে যে কাজ আছে, বিশ্বস্তভাবে করলে সেটা দিয়েই মহত্ব অর্জন করা যায়। প্রয়োজন শুধু বিশ্বস্ততা এবং সততা।
বাদশাহ সলোমন বলেছেন, নিজের কাজে সন্তুষ্ট থাকা ছাড়া মানুষের আর কিছুই করার নেই। সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্যের কাছে আমাদের নিজেদের উদ্দেশ্যকে সমর্পণ করলেই আমাদের কাজ মহৎ হয়। সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্যের কাছে নিজেকে সমর্পন করা মানে হলো মহৎ এবং বৃহত্তর লক্ষ্যে নিজের কাজকে পরিচালিত করা। মহৎ-বৃহৎ কাজে মানে যে কাজ মানবসেবা, দেশের সেবা, বঞ্চিত জনগোষ্ঠির অধিকার আদায় ইত্যাদি।
ঈশ্বর অবিনশ্বর।
তিনি তার অবিনশ্বরতা দিয়ে তৈরি করেছেন মানুষ। সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস ছাড়া মানুষের উদ্দেশ্য মহৎ হতে পারে না। অলৌকিক কিছু করার জন্য চাই অলৌকিক ঈশ্বরের শক্তিতে আস্থা। আপনি মানুষকে ভরসা করলে মানুষে যা দিতে পারে সেপর্যন্ত আশা করতে পারেন, কিন্তু ঈশ্বরে আস্থা রাখলে আপনি যা লাভ করেন তা অসীম।
[গভীর ধ্যানের আপাতত সমাপ্তি ।
]
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।