মানুষের জীবনটা এক চলমান নদীর মতো। নদীর স্রোত যেমন থেমে থাকেনা, তেমনি মানুষের জীবন কারো জন্য থেমে থাকেনা। মানুষের জীবনে অনেক বাধা-বিপত্তি আসে, অনেকে বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে নিজেকে গুছিয়ে নিতে পারে, অনেকে বাধা-বিপত্তির মায়াজালে এমনভাবে জড়িয়ে যায় যে তা থেকে সে বেরিয়ে আসতে পারেনা। ফলে অনেকে হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে খারাপ পথে ধাবিত হয় এবং এই হতাশা থেকে মুক্তি পেতে অনেকে সিগারেট, মাদকেরে মত প্রানবিনাশি জিনিসের সাথে জড়িয়ে পড়ে। কিন্তু তারা ভুলে যায় জীবনে যা ঘটে গেছে, তা হয়তো আমার কোন পাপের সামান্য শাস্তি।
হতে ও পারে আমাদের জন্য ভবিষ্যতে সুন্দর কিছু অপেক্ষা করছে। আমার জীবনে ও একজন এসেছিল, যদিও আমায় প্রত্যাখ্যান করেছে, তবুও আমি হার মানিনি কারণ আমি জানি আমার জীবনে প্রেম আসবে, জানিনা কবে, তার জন্য অপেক্ষায় আছি…।
প্রেমের হাতে ধরা দিব
তাই রয়েছি বসে
বিধিবিধান- বাঁধন- ডোরে
ধরতে আসে, যাই যে সরে
তার লগি যা শাস্তি নেবার
নেব মনের তোরে।
জীবন থেকে পাঁচটি বছর অতিবাহিত হয়ে গেল কি করে তা আমার জানা নেই। আমি আশাই ছেড়ে দিয়েছিলাম যে আমার জীবনে ভালোবাসা আসবেনা।
২০১১, অগাস্ট মাস, আমার ৩য় বর্ষ পরীক্ষা শেষ হল। রোজার সময় তখন,রাতে ২টায় জেগে উঠতাম তাহাজ্জুদ পড়ে পিসিতে নেট চালাতাম। ইমেইল চেক করে ফেসবুক এ বসে গ্রুপে আড্ডা দিতাম। একদিন ১৬ রোজার পরে একদিন ঐ গ্রুপে এক ললনার পোস্ট দেখলাম। খুবই ভালো লাগল।
প্রায়ই ওর পোস্টগুলো লাইক দিয়ে কমেন্ট করতাম, আড্ডায় অংশগ্রহণ করতাম। মাঝে মাঝে দেখতাম যে ওর পোস্টগুলো হতাশাজনক থাকত। আমার মনে এই ভাবনাগুলো আমার মনে জাগত- ১। সে কেন এতো রাত জেগে থাকে,সকালে ঘুমায়? ২। তার মনে কি এমন কষ্ট যে তার পোস্টগুলো হতাশাময় হয়? মাঝে মাঝে তার পোস্টে লাইক,কমেন্ট দিয়ে ঝগড়া যুদ্ধ শুরু করতাম, যখনি ওরা চরমহারে ফাজলামি করতে থাকতো।
আমিতো আগে থেকে সিরিআস ধরনের মানুষ, কেউ আমার কথায় ফাজলামি করলেই লেগে যেত। এইভাবে একমাস অতিবাহিত হল। ওর প্রতি মনে আস্তে আস্তে ভালোলাগা তৈরি হতে লাগলো। যখনি ওর সাথে গ্রুপ পোস্টে ঝগড়া অথবা কথা কাটাকাটি হত, আমার মন কেমন যেন ছটফট করত, বলা চলে পাগল হয়ে যেতাম।
ও প্রিয়জন...... ও প্রিয়জন...... ও প্রিয়জন
দু'চোখে ঝড়ালে কেন ব্যাথার শ্রাবণ,
আমাকে করলে একা রাতের মতন।
এতো ব্যাথা এ বুকে স্বইতে যে পারি না
এতো স্মৃতি এ মনে ভুল তে যে পারিনা,
কাটেনা কিছুতে বিরহ লগন।
দু'চোখে ঝড়ালে কেন ব্যাথার শ্রাবণ ??
এভাবে কিছুদিন কেটে গেল। অক্টোবর ৪ তারিখে সে আমার নাম্বার নিল। অক্টোবর ৬, দশমীর রাতে, ৭ টার দিকে আমি আমার বান্ধবিকে ফোন দেয়ার জন্য আমার ওয়ারিদ নাম্বার চালু করলাম, দেখি একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে এসএমএস এসেছে। তাতে লেখা-
Hi,amake cinte parso? Amar id ta hack hoye gese tai tomr sathe jogajog korte parini.
তখন আমি তাকে বললাম তুমি অমুক।
সে আমায় ফিরতি এসএমএস করল যে আমি তাকে চিনলাম কি করে? আমি বললাম আমায় কেউ অপরিচিত নাম্বার থেকে এসএমএস করেনা সেভাবে। এভাবে এসএমএস চলতে থাকল। আমি ১০ টার দিকে ঘুমিয়ে পড়লাম ওকে এসএমএস দিয়ে। রাতে ২ টায় তার এসএমএস এ আমার ঘুম ভাঙল। এসএমএস এ লেখছে- ai, ki koro? আমি ফিরতি এসএমএস দিলাম যে আমার তার এসএমএস এ ঘুম ভাঙল।
সে এসএমএস করল যে আমি ভাত খাই…তুমি হা কর…তোমায় খাওায় দেই। এভাবে এসএমএস আদান-প্রদান চলতে থাকল। একদিন তাকে মিসকল দিয়েছিলাম টিএনটি থেকে। আমি তাকে বলছি তাকে মিসকল দিয়েছিলাম ,কেন বললাম সে আমার উপর রাগ করে আমাকে ২দিন এসএমএস করেনি। তার রাগ ভাঙ্গালাম তাকে সরি এসএমএস পাঠিয়ে, মাফ চেয়ে।
২ দিন পর আমার কাছে বলল সে নামায শিখতে ছায়...আমি তাকে নামায বিষয়ক ইউটিউব ভিডিও, আর্টিকেল তাকে ইমেইল করে পাঠিয়ে দিলাম, যাতে সে দেখে শিখে নিতে পারে। ২৩ অক্টোবর, আমার সাথে তার প্রথম কথা হল, ১ ঘণ্টা কথা বললাম, মনে হল সে অনেক হতাস...সে ভালোবাসাকে বিশ্বাস করেনা, ঘেন্না করে...তার মতে, ভালোবাসা বলে দুনিয়াতে কিছু নেই। যদিও আমি বিভিন্ন উপায়ে ঘেন্নার কারন জানার চেষ্টা করেছিলাম,আমি পারিনি। তার দুই/তিন দিন পর আমায় মিসকল দিল, আমি ফোন দিলাম কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ওর সাথে কথা বলতে গিয়ে আমার মোবাইল অফ হয়ে গেছে। ফোন চালু করে কল দিলাম আমায় প্রথমেই একটা কথা শুনাল তা হল- কি ব্যাপার? মোবাইল অফ হয়ে গেল কেন? চার্জ দিতে পারোনি? আমি বললাম সরি, ভুল হয়ে গেছে।
সে বলে- আমার সাথে কথা বলতে গেলে তোমার মোবাইল চার্জ থাকেনা, অন্য মেয়ের সাথে কথা বলতে গেলে থাকে। সে বলল I h u. আমি পুরা থ হয়ে গেলাম। আবার মানালাম তাকে। এইদিকে আর কথা হয়নি, এসএমএস আদান-প্রদান হত। অক্টোবর ৩০, সে আমায় জিগ্যেস করল সে আমায় জান বলে ডাকতে পারবে নাকি? আমি উত্তর দিলাম অবশ্যই।
নভেম্বর ১, আমায় এসএমএস করল আমি মার্কেটে, আমি আজ অনেক কিছু কিনলাম। আমি একদিন ওয়েস্টার্ন , একদিন সালওয়ার, একদিন লাল শাড়ী পরে আসব তোমার বাসায়। আমি বললাম যে আর যাই হোক, ওয়েস্টার্ন পরে এসোনা , আমার বাড়িতে থাকা লাগবেনা। তোমাকে ও বের করবে, আমাকে ও বের করবে বাসা থেকে। সে অভিমান করে বলতেছে যে তুমি আমাকে বুঝলেনা...।
I h u… আবার তাকে মানালাম...সে যোগাযোগ শুরু করল। নভেম্বর ৭, ভোর ৩.৩০ টা , আমায় এসএমএস করল যে আমি তোমায় একটা জিনিস বলতে চাই, ভয় লাগে যদি তুমি চলে যাও। আমি বললাম কি এমন কথা? প্রথমে এসএমএস করলাম, কারো সাথে সম্পর্ক আছে? না জবাব দিল। এসএমএস করলাম, কারো সাথে দৈহিক সম্পর্ক? না জবাব আসলো। এবার সে নিজে এসএমএস করল,সে বিবাহিতা ছিল।
আমার মাথায় পুরা আকাশ ভেঙ্গে পরল। ঐদিন কুরবানির ঈদ ছিল। আমি ঐদিন গরু জবাই দিতে গিয়ে হাত পুরা কাপছে, প্রেসার ও বেড়ে গিয়েছিল। অনেক শরীর খারাপ হয়ে গিয়েছিল। ২/৩ দিন যোগাযোগ করিনি।
কিছুদিন পর সে যোগাযোগ করল। তার কয়েকদিন পর সে আমায় তার জীবনে যা হয়েছিল তা বলল, শুনার পর তো আমি ২দিন পড়ালেখা করতে পারিনি। আমি চিন্তা করলাম মানুষ এমন কি করে হতে পারে? {তার প্রেমিক তাকে ধোঁকা দিল, তার স্বামী বিয়ের ৩ দিনের মাথায় যৌতুক না দাওায় বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে, সাথে তাকে পতিতা প্রমাণের অপচেষ্টা চালিয়েছে। সে এতোটা হতাশাগ্রস্ত হয়েছিল যে কিছু মাদকের(ধূমপান, দ্রিঙ্কস) সাথে নিজেকে জড়িয়ে ফেলছে নিজের হতাশা দূর করতে। } আমি তাকে একটা কথাই বলছি যে আমি তোমার অতীত শুনে পিছে হটবোনা, আমি কাপুরুষ নই।
তবে এইটার গ্যারান্টি দিতে পারবনা যে তোমাকে ভালোবেসে তোমাকেই পাব,না পাইলে আত্মহত্যা করব তাও বলবনা। আল্লাহ্ যদি আমাদের কপালে যদি তোমায় লিখে রাখে,তাহলে তোমাকেই পাব। ২/৩ দিন পর ওকে কোন ভূত ধরেছিল জানিনা, আমায় এসএমএস করে বলে, তাকে ঐ সময়েই বিয়ে করতে। আমি তো পুরাই মাথায় হাত যে, এই মেয়ের মাথা কি পুরা গেল নাকি? নাকি তারছিঁড়া ? আমি এক কথায় না করে দিলাম, এখনতো অসম্ভব। সে আমায় সতর্কবাণী দিল যে যদি আমি হ্যাঁ না বলি সে আত্মহত্যা করবে।
আমি বলছি কর গিয়ে। সে আমায় ফজর পর্যন্ত সময় দিল, দেখে আমি মত বদলাইনা, সে বলতেছে আমি আত্মহত্যা করলে তুমি দোষী হবে, কারণ আমার শেষ এসএমএস অথবা কল তোমার। আমিও বলছি যে আমি ভয় পাইনা কারণ আমি কিছু করিনি। সে দুইদিন যোগাযোগ করেনি। আমি আমার এক বন্ধুকে বললাম এই পাগলীর কাহিনি, এবং আমি এইটাও বলছি যে ও আমায় ৩দিনের মধ্যে যোগাযোগ করবে।
ঠিকই সে ২ দিন পরে আমায় ফোন দিল। আমি ধরে বলি, বাঁচাও আমাকে, ভূত আমাকে ফোন দিছে কবর থেকে। বাঁচাও, কেউ কি আছ, আমায় বাঁচাও। আমি ফোন কেটে দিলাম। পরে ঐদিন সন্ধ্যায় আমার কাছে সে ক্ষমা চাইছে শিশুসুলভ আচরণের জন্য।
আমি বলছি যে পরবর্তীতে এমন করলে মার খাবে। এরপর থেকে তার সাথে আমার দৈনিক কথা হতো, কি করে সময় কেটে যেত, বুঝে উঠতে পারতামনা। কোনদিন ১ঘণ্টা, কোনদিন ২ ঘণ্টা......একদিন তো টানা ২০০ মিনিট কথা বলছি। আমি নিজেও জানিনা আমি কি করে এতক্ষণ কথা বলেছি ওর সাথে। আমি বেশি হলে ৬০ মিনিট কথা বলেছি।
আমি ওর সাথে দুষ্টুমি করতাম, ওকে হাসাতাম আমার সকল প্রচেষ্টা দিয়ে। তবে আমি তার জন্য যে মান্নত করেছিলাম যাতে আল্লাহ্ তাকে হেদায়েত নসিব করে, সে নামায ১০০০ রাকাতের, আমি ৫ মাসে ২বার পরেছি, অর্থাৎ ২০০০ রাকাত পরেছি। প্রত্যেক ফজর ও মাগরিবের পর তার জন্য ২০ লাখ নেকীর দুয়া ১০০ বার করে পরি। ৩১শে ডিসেম্বর, তাকে অনেক বুঝালাম নামাজের কথা, বদভ্যাস ছেড়ে দাওয়ার কথা, সে ঠিকমতো হ্যাঁ অথবা না কোনটা বলেনা। এভাবে তর্ক করতে করতে এক সময় আমায় জিগ্যেস করে বসে, আমি তাকে এই অবস্থায় মেনে নিতে পারব নাকি? আমি বলছি যে যদি তুমি বদভ্যাস ছাড়তে পারো, আমার তোমাকে গ্রহন করতে সমস্যা নেই।
সে আবারো একই প্রশ্ন করলো, আমার উত্তর ও একই হল। সে রেগে আমায় বলল, আমার খবর তোমার নেয়ার দরকার নেই, আমি মরলে মরবো...i h u….i h u…সে টানা একমাস আমার সাথে কোন যোগাযোগ করেনি... ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।