এখন ভ্রমণ মৌসুম। মানসিক প্রশান্তি এবং বিনোদনের জন্য মানুষ সারা বছরই ভ্রমণ করে বটে, কিন্তু শীতেই বেশিরভাগ মানুষ ভ্রমণে সাচ্ছন্দবোধ করেন। এর একটা প্রধান কারণ হচ্ছে শীতের আবহাওয়া ভ্রমণের জন্য বেশ উপযোগী। এছাড়া বার্ষিক পরীক্ষা শেষে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় সবার মধ্যে একটা ছুটি ছুটি ভাব থাকে।
বছর ঘুরে শীত আবারও আমাদের দুয়ারে। জানাচ্ছে ভ্রমণের হাতছানি। কিন্তু কোথায় বেড়াবেন, দেশে নাকি বিদেশে আগে সিদ্ধান্ত নিন। ব্লগের পাঠকদের মধ্যে যারা দেশে বেড়াবেন তাদের জন্য আমার এবারের আয়োজন কক্সবাজার ভ্রমণ।
কক্সবাজার: কক্সবাজারের প্রাচীন নাম পালংজি, প্যানোয়া, কাষ্ঠবাজার, বা কাঠ বাজার।
ইংরেজী অফিসার ক্যাপটেন হিরাম কক্স ১৭৯৯ খ্রিষ্টাব্দে এখানে একটি বাজার স্থাপন করেন। আর এই বাজারের নামকরণ হয় কক্স সাহেবের বাজার। কক্স সাহেবের বাজার থেকে কক্সবাজারের উৎপত্তি। চট্টগ্রাম থেকে ১৫৯ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে কক্সবাজার জেলার অবস্থান। পাহাড়, সাগর দ্বীপ, নদী ও সমতল ভূমির এক অনন্য মিলন মোহনা এ কক্সবাজার।
এ জেলায় রয়েছে বিশ্বের দীর্ঘতম বালুকাময় সমুদ্র সৈকত যার দৈর্ঘ্য ১২০ কি. মি. এবং এটি একটি অন্যতম স্বাস্থ্যকর স্থান। কক্সবাজার জেলার উত্তরে চট্টগ্রাম জেলা, পূর্বে বান্দরবান জেলা ও বাংলাদেশ মায়ানমার সীমান্ত বিভক্তকারী নাফ নদী এবং মায়ানমার, দক্ষিণ পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর। শীত মৌসুমে কক্সবাজারে পর্যটকদের ঢল নামে। বর্তমানে শুধু শীত মৌসুমেই নয় সারা বছরই পর্যটকে মুখরিত থাকে কক্সবাজার।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত: পৃথিবীর দীর্ঘতম বালুকাময় সমুদ্র সৈকত।
এর দৈর্ঘ্য ১২০ কিলোমিটার। সৃষ্টিকর্তা যেন রুপসী বাংলার সব রূপ ঢেলে দিয়েছেন বালুর আঁচলে। সূর্যস্নান কিংবা সমুদ্রস্নানে নিজেকে বিলীন করতে পারেন নীলাভ প্রকৃতিতে। খোলা জিপ, রিক্সা, টমটম এবং স্পিড বোটে বা ঘোড়ায় চড়ে বেড়ানোর আনন্দ হতে পারে আপনার জীবনের এক স্মরণীয় দিন। আর সমুদ্রের বালির বিছানায় দাঁড়িয়ে শামুক ঝিনুকের সাথে লুকোচুরি খেলতে খেলতে উপভোগ করুন সূর্যাস্তের অনাবিল আনন্দ।
কক্সবাজারের নাজিরার টেক থেকে শুরু করে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত বিস্তিৃত এই বীচ। কক্সবাজার শহরের দক্ষিণ পশ্চিম প্রান্তে বীচ পয়েন্ট। এর মধ্যে লাবনী পয়েন্ট, কলাতলী পয়েন্ট, সুগন্ধা পয়েন্টসহ আরো কয়েকটি পয়েন্ট উল্লেখযোগ্য। এখানে গড়ে উঠেছে নানা হোটেল, মোটেল, কটেজ, রেঁস্তরা। কক্সবাজার সমূদ্র সৈকতে বেড়ানো, সমুদ্রে স্নান এক আনন্দময় অভিজ্ঞতা।
সন্ধ্যায় ভিড় হয় সৈকতে, যেন মেলা বসে সূর্যাস্ত দেখার। মাইলের পর মাইল সোনালী বালুকাময় বেলাভূমি। লতা-গুল্মবন বনানী দিয়ে সুশোভিত তরঙ্গায়িত খাড়া পাহাড়। তরঙ্গ বিধৌত ফেনাযুক্ত ঢেউ। রঙিন শামুক-ঝিনুকের সম্ভার।
সু-স্বাদু সামুদ্রিক খাদ্য, ১২০ কিলোমিটার পৃথিবীর সর্ববৃহৎ অবিচ্ছিন্ন
সমুদ্র সৈকত যা বঙ্গোপসাগরের নীল জলরাশির দিকে ক্রমশ ঢালু। সুসজ্জিত তীর, প্রধান সড়কের দুইধারে সৌখিন দ্রব্যাদিসহ সজ্জিত দোকান, রাখাইনদের কুঁড়ে ঘর। উচ্ছাসিত শিশুর মতো ঢেউ খেলে যায় সাগরের বেলাভূমিতে। নারিকেল বীথি মিতালী করে রাখাইন কিশোরীদের সাথে। পশ্চিম আকাশে আগুনে পুড়ে লাল করে ডুবে যায় দিনের সূর্য।
অস্ত সূর্যের সোনালী আভা গায়ে মেখে নিসর্গ হয় অপরূপ আর জোৎস্না রাতের সৈকত এর সৌন্দর্য আপনার মনে রয়ে যাবে বহুদিন। মোটেলের সামনের বেলাভূমি জীবনের বিচিত্র জলছবি। ঝাউবনে দমকা হাওয়ায় আধিপত্য নেশা জড়ানো অনুভূতি। সৈকত সান্নিধ্যে প্রেমিক-প্রেমিকার খুনসুটি অলসতার মাঝে এক অপূর্ব ভালোলাগা। তাহলে ঘুরে আসুন এমনই ছবির মত সাজানো নয়নাভিরাম কক্সবাজার থেকে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।