গ্রাম-প্রকৃতি-সবুজ-সারল্য যেখানে মিলেমিশে একাকার, সেখানে ফিরে যেতে মন চায় বার বার।
লাশের মিছিলে স্বজনের মুখ খোঁজে ফেরা
এরচেয়ে মর্মান্তিক দৃশ্য বোধহয় এর আগে পৃথিবীতে কেউ দেখেনি।
বার বার চোখ মুছছিলেন বৃদ্ধ তার কাংখিত মুখটি দেখতে না পেয়ে
তার সন্তান, তার নাড়ি ছেঁড়া ধন,
রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছে গত চব্বিশে এপ্রিলে
ছাব্বিশেও তার মুখটি খোঁজে পাযনি সেই বৃদ্ধ।
না আহতদের তালিকায়,
না অধরচন্দ্র বিদ্যালয়ের মাঠে লাশের সারিতে।
তাই পাঁজরভাঙা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ছুটে যান বৃদ্ধ অকুস্থলে
এইমাত্র যে লাশটি উদ্ধার হলো কিংবা যে জীবিত বক্তিটি
হতে পারে এটি তার খোঁজে ফেরা স্বজনের।
কিন্তু সেখান থেকেও নিয়তি তাকে ফেরায় খালি হাতে।
বৃদ্ধটি এসেছেন বাংলাদেশের সুদূর এক গ্রাম থেকে
ঘরে জমানো শেষ সম্বল কয়টি টাকা আশ্রয় করে
বাসে চড়ে, পায়ে হেঁটে, স্টীমারে নদী পার হয়ে।
তার জীর্ণ চেহারা, কোটরাগত দুই চোখ জানান দিচ্ছে
এ কয়দিনে আহার-নিদ্রা কিছুই হয়নি লোকটির
অথচ তার পকেটে টাকা ক'টি তেমনি আছে।
কারণ, কেউ তার কাছে ভাড়া চায়নি
না বাসওয়ালা, না স্টীমারের লোকেরা।
সাভারের সর্বকালের মানবিক বিপর্যয়ে আজ সবাই
নিজ বিবেকের কাছে কিছু একটা স্বীকার করতে চাইছে।
কিন্তু তাতে কি ?
যে প্রিয় সন্তানের খোঁজে এখানে এসেছেন বৃদ্ধ লোকটি
তার সন্ধান যে আজও মিলেনি !
বৃদ্ধের উদভ্রান্ত দৃষ্টি তাই আকাশপাণে।
প্রশ্ন বিধাতার কাছে।
কি দোষ করেছিলাম আমরা ?
ছেলের লাশটিও যদি না পাই
তাহলে কি জবাব দিব বাড়ি ফিরে তার মাকে ?
হে বিধাতা !
কার দোষে এতবড় শাস্তি তুমি আমাদের উপর চাপিয়ে দিয়েছো ?
আমার সন্তানের ঘামের পয়সা চিরদিন গোগ্রাসে গিলেছে ওরা
তবু কেন ক্ষিদে মিটে না ওদের ?
আজ আমার সন্তানের মতো শত শত লাশের স্তূপে দাঁড়িয়ে
বিধাতা, তোমার কাছে জানতে চাই
আর কত খেটে খাওয়া মানুষ জ্বলে অঙ্গার হলে ওদের ক্ষুধা মিটবে ?
আর কত শ্রমিকের গলিত লাশ পেলে
ওদের লোভের পরিসমাপ্তি ঘটবে ?
আর কত পঁচা-গলা লাশ চাই ওদেরকে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলানোর জন্য ?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।