জেগে, ঘুমিয়ে, আড্ডায়, গল্পে, প্রার্থনায়, কবিতায়, সিনেমায়- সবখানে শুধু স্বপ্ন দেখি। "মিথ" হচ্ছে এমন একটা জিনিস যেটা আমরা সবাই ধরেই নেই যে বাস্তবে সম্ভব নয়। কোন সময় কোন এক মানব সন্তান কিংবা কোন পুরাণের চরিত্র আপাতদৃষ্টিতে অসম্ভব কোন কাজ করে ফেললে সেটা নিয়ে বীরত্বগাথা হয়। যুগে যুগে সে ঘটনা মানুষের মুখে মুখে ঘুরতে ঘুরতে, পরিবর্তিত হতে হতে একসময় "মিথ" হয়ে যায়। তাই বলা যায় "মিথ" হচ্ছে অনেকটা মানুষের কল্পনাপ্রসূত ব্যাপার।
অন্যদিকে, রিয়েলিটি হচ্ছে এমন জিনিস যেখানে কল্পনার কোন স্থান নেই। দৈনন্দিন জীবনে যা ঘটে তাই রিয়েলিটি বা বাস্তবতা। কথায় আছে, "মানুষ ভাবে এক আর হয় আরেক"। যেহেতু আমরা যা ভাবি বাস্তবে তা বেশিরভাগ সময়ই হয় না, তাই সবসময়ই আমরা বলি, "বাস্তবতা বড়ই কঠিন। "
তাহলে, আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে যে "মিথ" আর "রিয়েলিটি" কখনই এক হওয়া সম্ভব না।
কিন্তু আসলেই কি ?? কারণ আজকে যেটা বাস্তব, সেই বাস্তবতায় কোন সাফল্য পেলে তা সুদূর ভবিষ্যতে "মিথ" এ পরিণত হবে।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনেও কিন্তু আমরা এক অর্থে "মিথ" এর মাঝেই বসবাস করি। আমরা সবসময় বলি যে আমরা বাস্তববাদী, কিন্তু আসলে আমরা সবসময় "মিথিকাল"।
গত ৪০ বছর ধরে আমরা এমনই একটা মিথের পিছনে ছুটেছি। আমাদের মিথটা খুব কষ্টসাধ্য কোন ব্যাপার না।
কারণ আমাদের চাওয়া শুধু একটু ভালোভাবে যেন নশ্বর জীবনটা কাটাতে পারি। এই আশায় আমরা কখনও কোন সেনাশাসকের হাত ধরেছি যে কিনা আবার ভোল পাল্টে পরে "স্বৈরশাসকে" পরিণত হয়। কোন নুরহোসেনের রক্তে গণতন্ত্রের পথে হাটা শুরু করেছি। এখন আবার সেই গণতন্ত্রের অবশ্যম্ভাবী সংঘাতের জ্বালায় আমরা অস্থির। আড্ডা, ফেসবুক, ব্লগে সবার একটাই কথা- "সুখ নাইরে পাগল !!" !!
তারপরও কিন্তু আমরা বেচে আছি।
আমরা বেচে থাকি। আমরা ক্ষীণগলায় বলি, "এই বেচে থাকাতেই আমাদের সুখ !!"। এই ঢাকা শহরেই কেউ পান-বিড়ি-সিগারেটের দোকান বসিয়ে সংসার চালায় (এই দোকানের মাসিক আয় আনুমানিক ৬০০০-৭০০০ টাকা ধরলাম। ) । আবার এমন অনেকেই আছেন যাদের পারিবারিক ইনকাম ৫০০০০+ টাকা হলেও হিমশিম খান সংসার চালাতে।
এই শহরেই অনেকে বস্তিতে থাকে, ফুটপাতে শান্তির ঘুম দেয়। আবার অনেকেই বক্সখাটে শুয়ে শুয়ে এপাশ-ওপাশ করে রাত কাটায়। শান্তির ঘুম তাদের কাছে পরম আরাধ্য একটা ব্যাপার। কেন এমন হয়?? কেউ বলবে, যার চাহিদা কম সেই বেশি সুখী। আসলেই কি তাই !!
আমাদের চারিদিকে ঘটে যাওয়া ঘটনা বিশ্লেষণ করলেই কিন্তু বুঝা যায় যে আমরা আসলে সবসময় সুখে থাকার অভিনয় করি।
ফুটপাতে হেটে যায় সব মুখোশ পরা মানুষের দল। কথাটা বললাম শুধু আমাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় চাহিদার কথা মাথায় রেখেই। বিলাসিতা এখানে বিবেচ্য নয়। (তাই কোটিপতি শিল্পপতিরা আমার হিসাবের বাইরে)
পয়েন্ট ১:
মানুষের প্রথম চাহিদা হল "খাদ্য"। এটা ছাড়া জীবন অচল।
তাই আমরাও খাই। তবে আমাদের খাদ্যাভাস পৃথিবীর অন্যান্য জাতির চেয়ে ভিন্ন। উন্নত জাতিদের মত খাবার গ্রহণে আমাদের কোন বাছবিচার নেই। এখানে নিম্নবিত্ত- উচ্চবিত্ত দুইদলই অত্যাচারের শিকার। পার্থক্য হচ্ছে নিম্নবিত্ত ব্যাপারটা হাড়ে হাড়ে টের পায় আর উচ্চবিত্ত তাদের তথাকথিত "হামবড়া" ভাব ধরে রেখে নিজেকে এসবের উর্ধে ভাবে।
যেমন-
নিম্নবিত্তের দিন আনে দিন খায় অবস্থা। তাদের খাদ্য তালিকা থেকে প্রোটিন উধাও হতে হতে এখন শুধু এক মুঠো মসুর ডালে এসে ঠেকেছে। আর অন্যদিকে উচ্চবিত্ত তাদের স্ট্যাটাস ধরে রাখতে যেয়ে তাদের খাদ্যতালিকা থেকে শাকসবজি একেবারে বিদায় করে ফেলেছে। দেশি উৎস থেকে প্রোটিন খেতে গেলে তা হয় ফরমালিনযুক্ত। আর বিদেশি উৎস (যেমন- কেএফসি, পিজ্জা হাট ইত্যাদি) থেকে খেতে গেলে অযথা অত্যধিক দামের অত্যাচার সইতে হয়।
একটা পিজ্জা যেটা হয়তো অন্য কোন দেশে মাত্র ৫ ডলারেই (৪০০ টাকা) পাওয়া যেত। সেটা এখন তাদেরকে খেতে হয় নুন্যতম মাত্র ১১০০ টাকায়। এ ব্যাপারে কথা বলতে গেলে কর্তৃপক্ষ বলে যে "আমাদেরকে খাদ্যের মান বজায় রাখতে হয়। আমাদের খাবারে যে মরিচটা আছে তাও আমেরিকা থেকে আনা !!" তাইতো মাঝে মাঝে বেচারাদেরকে ফুড ম্যাজিস্ট্রেটের হাত থেকে বাচতে মন্ত্রী-মিডিয়া ইত্যাদির দ্বারস্থ হতে হয় !!
তাহলে, কি দাড়াল !! নিম্নবিত্ত টাকার অভাবে খেতে পায় না আর উচ্চবিত্ত টাকা দিয়ে বিষ কিনে খেয়ে জীবন সায়াহ্নে সব টাকা ক্যান্সারের চিকিৎসায় ঢেলে দেয়। "আসলেই সুখ নাই !!"
এর মাঝের মধ্যবিত্তের অবশ্য সব জ্বালাই পোহাতে হয়।
কারণ তারা মাসের শেষে ভাত-ডাল খেয়ে পার করে আর মাসের শুরুতে টাকা দিয়ে উচ্চমার্গীয় বিষ কিনে খায়।
আসলেই, আমরা নিজেদেরকে সুখী বলে "সুখ" নামক মিথের মাঝেই বেচে আছি।
পুকুরে গোসল করতে নেমে হঠাৎ কেউ দেখলো তার সাধের পরনের লুঙ্গিখানা ভেসে যাচ্ছে পুকুরের মাঝে। সে প্রথমে চিন্তা করল যে সাঁতরে যাবে পুকুরের মাঝে, নিয়ে আসবে লুঙ্গিটা। কিন্তু হায়, লুঙ্গির মাঝে যে সাপের মাথা দেখা যায় !! কি আর করা !! সাপটা যতক্ষণ পর্যন্ত না যায় ততক্ষণ পর্যন্ত সে চিন্তা করল তার পুকুরস্নানটা সে উপভোগ করবে।
তাই সে চুপচাপ পানিতে গা ভাসিয়ে ভেসে রইল। কিন্তু সে চিন্তা করল না যে- আধময়লা পানিতে বেশিক্ষণ থাকলে তার অসুখ হতে পারে। কিংবা যে সাপটার দিকে ভয়ে সে তাকাচ্ছে না সে সাপটা আসলে একটা ঢোড়াসাপ।
(লিখতে বসছিলাম এক জিনিস আর লিখে ফেলছি আরেক জিনিস। বাকি পয়েন্টগুলা নিয়ে পরে লিখবো।
)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।