মুক্তিযুদ্ধ আমাদের অহংকার, ধর্মান্ধতা ও দলান্ধতা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী। এই কবিতাটা কখন লেখা সবাই জানেন তো? বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে - যখন একদিকে বাংলাদেশের ইতিহাসের চরমতম দুর্ভিক্ষে লাখ লাখ লোক মারা পড়ছে, মধ্যবিত্তরা পর্যন্ত একবেলা/আধবেলা খেয়ে-না-খেয়ে কোনোমতে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে, খোলা ড্রেনে কুকুর এবং মানুষ খাবারের উচ্ছিষ্ট নিয়ে টানাটানি কামড়াকামড়ি করছিল, আর অন্যদিকে রাজনৈতিক নেতারা, মন্ত্রী-আমলারা দুর্নীতির টাকায় অতি আরাম-আয়েসে জীবনযাপন এবং বিলাসিতা করছিলো, এমনকি কোনো কোনো বড় নেতাদের ছেলেদের মাথায় সোনার মুকুট পরিয়ে রাজকীয় বিবাহ উতসব চলছিলো। ঠিক সেই সময় কবি রফিক আজাদ তাঁর এই কবিতাটা লিখেছিলেন বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের সেসময়ের জীবন-সংগ্রামের অনুভূতিকে কবিতার ভাষায় প্রকাশ করার জন্য। কবিতাটার প্রেক্ষাপট নতুন প্রজন্মের সবার জানা দরকার। ভাত দে হারামজাদা ~ রফিক আজাদ ভীষন ক্ষুধার্ত আছিঃ উদরে, শারীরবৃত্ত ব্যেপে অনুভূত হতে থাকে - প্রতিপলে - সর্বগ্রাসী ক্ষুধা অনাবৃষ্টি যেমন চরিত্রের শস্যক্ষেত্রে জ্বেলে দেয় প্রভূত দাহন - তেমনি ক্ষুধার জ্বালা, জ্বলে দেহ দু'বেলা দু'মুঠো পেলে মোটে নেই অন্য কোনও দাবি অনেক অনেক-কিছু চেয়ে নিয়েছে, সকলেই চায়ঃ বাড়ি, গাড়ী, টাকাকড়ি- কারো বা খ্যাতির লোভ আছে; আমার সামান্য দাবিঃ পুড়ে যাচ্ছে পেটের প্রান্তর- ভাত চাই-এই চাওয়া সরাসরি - ঠান্ডা বা গরম, সরূ বা দারুণ মোটা রেশনের লাল চাল হ'লে কোনো ক্ষতি নেই মাটির শানকি ভর্তি ভাত চাইঃ দু'বেলা দু'মুঠো পেলে ছেড়ে দেবো অন্য সব দাবি! অযৌক্তিক লোভ নেই, এমনকি নেই যৌন ক্ষুধা- চাইনি তো নাভিনিম্নে পড়া শাড়ি, শাড়ির মালিক; যে চায় সে নিয়ে যাক - যাকে ইচ্ছা তাকে দিয়ে দাও - জেনে রাখোঃ আমার ও সব এ কোনও প্রয়োজন নেই। যদি না মেটাতে পারো আমার সামান্য এই দাবি, তোমার সমস্ত রাজ্যে দক্ষযজ্ঞ কান্ড ঘটে যাবে; ক্ষুধার্তের কাছে নেই ইষ্টানিষ্ট, আইন-কানুন - সমুখে যা পাবো খেয়ে নেবো অবলীলাক্রমে; যদি বা দৈবাৎ সম্মুখে তোমাকে, ধর, পেয়ে যাই - রাক্ষুসে ক্ষুধার কাছে উপাদেয় উপাচার হবে। সর্বপরিবেশগ্রাসী হ'লে সামান্য ভাতের ক্ষুধা ভয়াবহ পরিনতি নিয়ে আসে নিমন্ত্রণ করে! দৃশ্য থেকে দ্রষ্টা অবধি ধারাবাহিকতা খেয়ে ফেলে অবশেষে যথাক্রমে খাবোঃ গাছপালা, নদী-নালা, গ্রাম-গঞ্জ, ফুটপাথ, নর্দমার জলের প্রপাত, চলাচলকারী পথচারী, নিতম্ব-প্রধান নারী, উড্ডীন পতাকাসহ খাদ্যমন্ত্রী ও মন্ত্রীর গাড়ী- আমার ক্ষুধার কাছে কিছুই ফেলনা নয় আজ। ভাত দে হারামজাদা, তা না হলে মানচিত্র খাবো।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।