যেমন কর্ম তেমন ফল। ওরা এখন অমানিশার আঁঁধারে
*সিবিএ’র বাঁধায় চাকরি হারাচ্ছে ঢাকা ওয়াসার ৩৩৬ জন কর্মচারী*
* রাষ্ট্রপতি ও উচ্চ আদালতের নির্দেশ উপেক্ষিত *
মতিন আব্দুল্লাহ
ঢাকা পানি সরবরাহ ও পয়:নিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ বা ঢাকা ওয়াসা ২০০৮ সালে বিভিন্ন বিভাগে এমএলএসএস পদে ৩৩৬ কর্মচারী নিয়োগ দেয়। প্রায় পাঁচ বছর ধরে ওই কর্মচারীরা ‘কাজ নাই মুজুরী নাই’ (কানামনা) ভিত্তিতে ওয়াসায় কর্মরত রয়েছেন। মাসে ২২/২৩ দিন ১৯০-২১০ টাকা হারে বেতনে কাজ করছেন তারা। সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী কানামনাদের এক পর্যায়ে নিয়মিত করা হয়।
স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের এমন উদাহরণ অহরহ। ঢাকা ওয়াসার বর্তমান জনবলের ৮০ ভাগই কানামনা ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত।
জানা যায়, ঢাকা ওয়াসা গত বছরের নভেম্বরে কানামনাদের বাদ দিয়ে জনবল নিয়োগের উদ্যোগ নেয়, যেখানে কৌশলে তাদেরকে বাদ দেওয়ার অপচেষ্টা চালিনো হয়েছিল। অথচ কানামনাদের চাকরি স্থায়ীকরতে ওয়াসা বোর্ড, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, রাষ্ট্রপতির দফতরের নির্দেশ ছিল। এতকিছুর পরও কানামনাদের চাকরিতে স্থায়ীকরেনি ওয়াসা প্রশাসন।
নিরুপায় হয়ে কানামনারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে উচ্চ আদালতে রীট করেন, উচ্চ আদালত ওয়াসার নিয়োগে স্থগিতাদেশ এবং কানামনাদের স্থায়ীকরণের আদেশ দেয়। প্রায় এক বছর পার হলেও এখনো তা কার্যকর হয়নি। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ খারিজ করতে আইনী লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে ওয়াসা প্রশাসন।
এদিকে কানামনা ভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারীরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। ওয়াসা থেকে যা বেতন পায় তা দিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে তাদের সংসার চলেনা।
একপ্রকার অনাহারে-অর্ধহারে দিনাতিপাত করছেন তারা। স্থায়ী কর্মচারী হবার স্বপ্নে দীর্ঘ সময় ওয়াসার পার করে একদিকে সরকারি চাকরির বয়স হারিয়েছেন, অন্যদিকে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। এমতাবস্থায় জীবন নিয়ে কানামনারা অমানিশার আঁঁধারে হাবুডুবু খাচ্ছেন। কিভাবে জীবনটাকে সামনের দিকে চালিয়ে নিবেন তারা। ওয়াসা প্রশাসনের একটু সহানুভূতিই পারে তাদের জীবনে আলোর প্রদীপ জ্বালাতে, জীবনের আঁঁধার দূর করে দিতে।
কিন্তু সে মনোভাব দেখাচ্ছেন না ওয়াসা প্রশাসন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ওয়াসা প্রশাসনও চায় কানামনারা তাদের নায্য-সুবিধা পাক। এ পথের কাঁটা হলেন সিবিএ সভাপতি হাফিজ উদ্দিন। অভিযোগ পাওয়া গেছে ওয়াসা প্রশাসকে চাপ প্রয়োগ করে কানামনাদের চাকরিতে স্থায়ীকরণ আটকে রেখেছেন তিনি। এর আগেও নিয়োগ বাণিজ্যে একক নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি।
এবারের ওয়াসায় একবারে প্রায় দুই হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ করা হবে। সিবিএ সভাপতির চাকরি জীবন শেষের দিকে। কিছুদিন পরে তিনি এলপিআরে যাবেন। এজন্য এ নিয়োগটি তিনি কোনভাইে হাতছাড়া করতে চাইছেন না। এককভাবে নিয়োগ বাণিজ্য চালানোর ইচ্ছা থেকে কানামনাদের হটানোর কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
অভিযোগ প্রসঙ্গে সিবিএ সভাপতি হাফিজ উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব ডাহা মিথ্যা কথা। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এটা ওয়াসা প্রশাসনের ব্যাপার, এর সঙ্গে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, ওয়াসার বিদ্যমান পদের মধ্যে শুন্য রয়েছে ১৯০৫ জন। এরমধ্যে প্রথম শ্রেনীর পদ ১৩০ জন, দ্বিতীয় শ্রেণীর পদ ১৭৯ জন, তৃতীয় শ্রেণীর পদ ১২১০ জন, চতুর্থ শ্রেনীর পদ ৩৮৬ জন।
এসব ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা ওয়াসা কানামনা ঐক্যপরিষদের আহবায়ক সেলিম রেজা মিন্টু বলেন, ওয়াসা প্রশাসনের স্বদিচ্ছা আছে। কিন্তু হতে দিচ্ছেন না সিবিএ সভাপতি হাফিজ উদ্দিন। তিনি জানান, বিভিন্ন সময় হাফিজের লেলিয়ে দেওয়া বাহিনী ওয়াসায় আমাদের মারধর করেন। ওয়াসা থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন। এ ব্যাপারে থানায় একাধিক জিডিও করা হয়েছে।
এই কানামনা জানান, বর্তমান সিবিএ সভাপতি কথা চলছে ওয়াসা প্রশাসন। তার কথার বাইরে গেলে কেউ এখানে চাকরি করতে পারেন না। সিবিএ নেতাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য আমাদের শত শত পরিবারে কষ্টের শেষ নেই। প্রধানমন্ত্রীসহ দেশের বিবেকবান মানুষের কাছে আমাদের প্রার্থনা আমাদের পাশে এগিয়ে আসুন, আমাদের বেঁচে থাকার সুযোগ করে দিন। আমরা কাজ করে খেতে চাই।
এসব ব্যাপারে ঢাকা ওয়াসা বোর্ড চেয়ারম্যান প্রকৌশলী রহমতুল্লাহ জানান, কানামনাদের দাবির যৌক্তিকতা রয়েছে। ওয়াসা বোর্ড তাদের চাকরিতে স্থায়ী করতে সুপারিশ করেছে। প্রশাসন কেন করছেনা তা বলতে পারবেনা। ওয়াসার এমডি প্রকৌশলী তাকসিম এ খানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কানামনাদের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আইন মোতাবেক তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
আইনের ব্যতয় ঘটিয়ে কিছু করা হবেনা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।