এর আগেও আমি হুজুর নিয়ে আরও দুইটা পোস্ট দিছি। অনেকেই এর রহস্য জানতে চেয়েছেন।
অনেকের মনেই প্রশ্ন, আমি কেন হুজুর বিদ্বেষী? ইতোমধ্যেই হুজুরদের প্রতি আমার তীব্র ঘৃণার কারন অনেকেই উপলব্ধি করতে পেরেছেন। আজ আমি হুজুরদের এমন কিছু কার্যকলাপ তুলে ধরবো, যা বিশ্বাস করা সত্যিই অনেক কঠিন।
ঘটনা ০১ঃ সে অনেকদিন আগের কথা।
আমি তখন ক্লাস নাইনে পড়ি। আমার দুঃসম্পর্কের এক চাচাতো ভাই ছিল। তার দুইটি ছেলে ছিল। বড়টির বয়স ৮ বছর এবং ছোট ছেলের বয়স ৪ বছর। তো আমার সেই চাচাতো ভাইয়ের খুব স্বপ্ন ছিল তার বড় ছেলে কে হাফেজি পড়াবে তারপর অনেক বড় হাফেজ হবে।
তাই সে তার ছেলে কে স্কুলে ভর্তি না করে পার্শ্ববর্তী এলাকায় একটা হাফেজিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি করিএ দিলো।
কিছুদিন খুব ভালোভাবেই কাটল। কিন্তু এক মাস যেতে না যেতেই দেখা গেলো ছেলে টার মাদ্রাসার ব্যাপারে ব্যাপক অনীহা। মাদ্রাসা টা বাড়ির কাছাকাছি হওয়ায় সে প্রতিদিন বিকেলে পালিয়ে চলে আসতো।
কিন্তু কেন পালিয়ে আসতো তা সে বলতনা।
শুধু বলতো তার ভালো লাগেনা। মায়ের জন্য মন খারাপ হয়।
কিন্তু কচি মনের ভিতর মায়ের স্নেহ ভালোবাসা পাওয়ার যে আকাঙ্ক্ষা, তা ছেলে টার বাবা মা বুঝতে চাইলো না। তাদের স্বপ্ন টাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলো। তাই তাদের স্বপ্ন পুড়নের জন্য তারা ছেলেটার প্রতি আরও নিষ্ঠুরতার পরিচয় দিলো।
তারা ছেলেটাকে অনেক দুরের এক মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিলো। যেন আর পালিয়ে চলে আসতে না পারে।
মাদ্রাসার টার নিয়ম খুব করা করি ছিল। চারিদিকে উচু দেউয়াল দিয়ে ঘেরা। সেখান থেকে কোন ছাত্র কেই বের হতে দেয়না।
কোন রকম খেলাধুলা বা বিনোদনের বেবস্থা নেই। (অথচ এইটা তাদের দুরন্তপনার বয়স। হেসে খেলে দিনপার করার বয়স। ) শুধু মাত্র এক মাস পর পর ছাত্রের খুব আপনজন এসে মাত্র ১০ মিনিটের জন্য দেখা করে যেতে পারতো। আমি জানিনা বা বুঝতে পারিনা মাদ্রাসা নামের এই ভয়ংকর জেল খানায় এই কোমল মতি ছেলেরা কিভাবে দিন পাড় করে।
যাইহোক দেখতে দেখতে এক মাস হয়ে যায়। আমার চাচাতো ভাই, মানে ওই ছেলেটির বাবা ওকে একদিন দেখতে যায়। কিন্তু ছেলে টা তার বাবার সাথে কোন কথা বলতে পারেনি। কারন তখন ছেলেটার দুই চোখ বেয়ে শুধু পানি আসতে ছিল। ছেলেটির মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছিলনা।
সে শুধু তার বাবা কে একটা কথাই বলেছিল, ‘আমি আম্মার কাছে যাবো’…! কিন্তু ওর এই চোখের জল, আহাজারি ওর বাবার সপ্নকে ছাপিয়ে যেতে পারেনি! ওর বাবা শুধু ওকে এইটুকু বলে সান্তনা দিয়েছিলো, সামনের বার এসে তোমাকে বাড়ি নিয়ে যাবো। এই বলে ওর বাবা চলে আসে।
যাইহোক, তার পনেরো দিন পর ওই মাদ্রাসা থেকে একজন হুজুর চাচাতো ভাই এর বাড়িতে হঠাৎ এসে উপস্থিত। ভাই ভেবেছিলো হয়তোবা তার ছেলের খুজ খবর দিতে এসেছে। কিন্তু তার কোথায় বুঝা গেলো ঘটনা উল্টো।
খবর দিতে নয় বরং খুজ নিতে এসেছে। কারন ছেলেটা মাদ্রাসা থেকে গত রাতেই পালিয়েছে । হুজুরদের ধারনা ছিল ছেলে বারিতেই এসেছে। এই খবর শুনে ছেলের বাবা মা দুজনেই খুব কান্না কাটি। এতদিনে তাদের দরদ উতলে উঠেছে।
যাইহোক, ওইদিন কিছুক্ষন পরেই ছেলের মামা ছেলে কে অসুস্থ অবস্থায় বাড়িতে নিয়ে আসে। ছেলেটা পালিয়ে তার নানির বাড়ি আশ্রয় নিয়েছিলো। ছেলেটা খুব অসুস্থ ছিল। তাই তাকে আর মাদ্রাসায় আপাদত দেবার চিন্তা করলনা। কিন্তু ছেলেটা কোন ভাবেই সুস্থ হচ্ছিলনা।
একদম চুপচাপ হয়ে গেছে। কারো সাথে কথা বলেনা। সারাক্ষন কি যেন ভাবে। কেমন ভয়ে ভয়ে থাকে। কাওকে কিচ্ছু বলেনা।
ব্যাপারটা আমার চোখে খুব খারাপ লাগলো।
তাই ওর মাদ্রাসা পালানর ব্যাপারটা জানার জন্য ওর সাথে কয়েকদিন খুব ভালো করে মিশলাম, খুব ফ্রী হলাম, যেন আমার সাথে ওর কষ্ট বা ওর ভয় এর কারন গুলো বলে। কয়েকদিন পর আমি সফল হলাম। এবং ও ওই নরকের কীট হুজুরদের যে সব কুকর্মের কথা বলল শুনে ইচ্ছে হল এখনি কুত্তাদের জবাই করি।
ছেলেটা আমাকে বলেছিল, প্রায় প্রতি রাতেই একজন করে ছাত্র কে বড় হুজুর তার ঘরে শরীর টিপে দেবার কথা বলে ডেকে নিত।
কিন্তু আসলে কি করতো তা কেও বলতো না। কারন মেরে ফেলার ভয় দেখান হতো। এরকম ভাবে একদিন ওর ডাক পরে। তারপর সে ওইদিন বুঝতে পারে। ছুট্ট একটা ছেলে, শুধু এইটুকু বলেছিল যে সে (হুজুর) আমার সাথে খারাপ কাজ করেছে।
আমার খুব কষ্ট হয়েছিলো। কিন্তু ভয়ে কাদতেও পারিনি। এই বলে সে আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউ মাউ করে কাঁদতে লাগলো। কি বলব সেই দিনের কথা… আমি নিজেও ওর কান্না দেখে ওর কষ্ট দেখে নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি। এর পর থেকে হুজুরদের উপর আমার সমস্ত স্রদ্ধা উঠে গেছে, এখন শুধু তাদের কুকীর্তি গুলো আমার চোখে পড়ে।
পড়ে আর ওই ছেলে কে মাদ্রাসায় দেওয়া হয়নি।
(প্রাইভেসি রক্ষার জন্য কারো নাম উল্লেখ করিনি)
(চলবে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।