সততাই সবসময় রাখা চাই,বাচিবার তরে । মা, বোন ও গাড়িচালককে গুলি করে ছয় বছরের শিশুকে অপহরণ করেছে মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তরা।
গতকাল রোববার সকাল সাতটায় রাজধানীর উপকণ্ঠ কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা পশ্চিমপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। থানার পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ ও র্যা বের একাধিক দল শিশুটির খোঁজে নামলেও এখনো কোনো তথ্য মেলেনি।
অপহূত পরাগ মণ্ডল কেরানীগঞ্জের জেকো ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিমল মণ্ডলের ছেলে।
অপহরণকারীদের গুলিতে আহত হয়েছেন পরাগের মা লিপি মণ্ডল (৩৩), বোন পিনাকি মণ্ডল (১১) ও গাড়িচালক নজরুল ইসলাম (৩৫)।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিমল মণ্ডলের স্ত্রী লিপি মণ্ডল প্রতিদিনের মতো তিন সন্তানকে স্কুলে পাঠাচ্ছিলেন। তাঁদের গলিটি সরু হওয়ায় প্রতিদিনের মতো সন্তানদের নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে গলির মুখে রাখা গাড়িতে তুলছিলেন তিনি। এ সময় দুটি মোটরসাইকেলে চার দুর্বৃত্ত সেখানে আসে এবং গুলি করে মায়ের কাছ থেকে পরাগ মণ্ডলকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। লিপি মণ্ডল বুকে ও পায়ে, মেয়ে পিনাকি ও চালক নজরুল পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
আহতদের প্রথমে মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে লিপি মণ্ডলকে রাজধানীর বক্ষব্যাধি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে তাঁর অস্ত্রোপচার হয়েছে। পিনাকিকে রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
ব্যবসায়ী বিমল মণ্ডলের তিন সন্তানের মধ্যে বাংলাবাজারের হিড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে প্রথম শ্রেণীতে পড়ে পরাগ এবং চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ে মেয়ে পিনাকি।
আরেক মেয়ে পিয়ালি মণ্ডল পড়ে অন্য একটি স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণীতে। সে অক্ষত আছে।
মিটফোর্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গাড়িচালক নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল সকাল সাতটার দিকে প্রতিদিনের মতো কালীবাড়ি মোড়ে গাড়ি নিয়ে দাঁড়ান। লিপি মণ্ডল তিন সন্তান নিয়ে গাড়ির কাছে আসামাত্রই দুটি মোটরসাইকেল গাড়ির কাছে আসে। দুই মোটরসাইকেলের পেছনে বসা দুজন নেমে তাঁর কাছে এসে গাড়ির চাবি চায়।
চাবি দিতে অস্বীকার করায় সন্ত্রাসীরা তাঁর পায়ে গুলি করে। এ সময় লিপি মণ্ডল সন্তানদের গাড়িতে না উঠিয়ে জড়িয়ে ধরেন। সন্ত্রাসীরা তাঁর কাছ থেকে পরাগকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। লিপি মণ্ডল ছেলেকে আঁকড়ে ধরে রাখার চেষ্টা করেন। টানাহেঁচড়ার একপর্যায়ে সন্ত্রাসীরা লিপি মণ্ডলকে গুলি করে।
এ সময় পিনাকি চিৎকার করতে থাকলে তাঁকেও গুলি করে দুর্বৃত্তরা।
চালক নজরুল আরও জানান, শিশু পরাগকে মায়ের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে একটি মোটরসাইকেলে দুজনের মাঝে বসিয়ে সন্ত্রাসীরা (পশ্চিম দিকে) চুনকুটিয়া মহাসড়কের দিকে পালিয়ে যায়। তিনি জানান, মোটরসাইকেল আরোহী চার যুবকেরই মাথায় হেলমেট ছিল। এদের মধ্যে দুজনের মুখে ধুলোবালু থেকে সুরক্ষার জন্য ব্যবহার করা মুখোশও ছিল।
গুলির শব্দে আশপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে ছুটে আসে।
বিমল মণ্ডল এ সময় বাসায় ছিলেন। শোরগোল শুনে বাইরে এসে স্ত্রী-সন্তানদের এ অবস্থা দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। স্থানীয়দের সহায়তায় তিনি আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যান।
গতকাল সন্ধ্যায় বক্ষব্যাধী হাসপাতালে গেলে লিপির ভাই অনিন্দ্য সরকার বলেন, শিশুসন্তানের জন্য লিপির হাহাকার থামছে না। তাঁকে অক্সিজেন দিয়ে অস্ত্রোপচার-পরবর্তী কক্ষে রাখা হয়েছে।
চিকিৎসকেরা তাঁকে ঘুমের ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিলেও কিছুক্ষণ পর পর জেগে উঠে পরাগের খোঁজ করছেন তিনি।
অপহূত পরাগের বাবা বিমল মণ্ডলের কাছে বিষয়টি ধারণাতীত। তিনি কাউকে সন্দেহও করতে পারছেন না।
র্যা ব-১০-এর পরিচালক কামরুল হাসান গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, শিশুটির বাবা বলেছেন, তাঁর সঙ্গে কারও শত্রুতা নেই। এখন পর্যন্ত কেউ মুক্তিপণ চেয়ে ফোনও করেনি।
সব তথ্য নিয়ে শিশুটিকে খোঁজার চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, দুর্বৃত্তরা যে দুটি মোটরসাইকেলে এসেছিল, সেগুলোর নম্বরপ্লেট কালো স্কচটেপ দিয়ে ঢাকা ছিল।
গতকাল এক বিবৃতিতে এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিবৃতিতে তিনি বলেন, দেশে আইনের শাসন সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত হয়েছে বলেই এসব ঘটছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ও এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি দাবি করেছেন।
সূত্র:-প্রথম আলো। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।