এতোই সাধারণ যে চোখে পড়ে না। খুব বেশী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আমার পড়ার সুযোগ হয় নাই। এক স্কুলেই শিশু শ্রেণী থেকে এসএসসি পর্যন্ত, এক কলেজে এইচএসসি (আমার অনেক ফ্রেন্ডদের দেখলাম প্রথম ৬ মাস এক কলেজ, পরে অন্য কলেজ থেকে এইচএসসি)। আর এখন এক বিশ্ববিদ্যালয়েই অনার্স শেষ করে মাস্টার্স। তাহলে হিসাব করলে দেখা যায় ১৬ বছরের (১৭ রানিং!!) শিক্ষা জীবনে আমি সর্বসাকুল্যে মাত্র ৩ খানা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পেয়েছি।
ব্যাপারটা যে খুব খারাপ হল, তাও না। কারন এসব প্রতিষ্ঠানে বন্ধুরা একসাথে অনেকদিন থাকার সুযোগ পেয়েছি।
আমার আজকের লেখার বিষয় হচ্ছে আমার স্কুল, কলেজ আর ভার্সিটি জীবনের প্রথম দিনের ঘটনা সবার সাথে শেয়ার করা। এর আগে বলে নেই যে, আমি আমার প্রতিটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই লিখিত, ভাইভা পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি হয়েছিলাম। তাই আমার লেখার কয়েকটি ভাগ থাকবে।
লিখিত, ভাইভা অভিজ্ঞতা এবং ঐ সব প্রতিষ্ঠানে (স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি) প্রথম ক্লাস করার ঘটনা।
আজ প্রথম দিন শুরু করছি আমার স্কুলের কথা দিয়ে।
স্কুলে আমার প্রথম দিন, যে দিন ভর্তি পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলামঃ
একদিন সকাল বেলা আব্বা তাড়াতাড়ি অফিস থেকে চলে আসলেন। আম্মাকে বললেন আমাকে রেডি করিয়ে দিতে। আজ নাকি আমার আপারা যে স্কুলে পড়ে সে স্কুলে বাচ্চদের ভর্তি পরীক্ষা হবে।
তাড়াতাড়ি আম্মা রেডি করিয়ে দিল। আমরা যে কলোনিতে থাকি, সেখান থেকে একটা মাইক্রোবাস জোগাড় করা হল। ছোট একটা গাড়িতে গাদাগাদি করে আভিভাবক এবং ক্ষুদেযোদ্ধারা(!) বাসা থেকে ৫কিমি দূরের যুদ্ধক্ষেত্রে রওনা দিলাম। গাড়ি থেকে নামার পর আব্বা খেয়াল করলেন যে তাঁর এই ক্ষুদে যোদ্ধা কোন প্রকার অস্ত্র (পেন্সিল, ইরেজার, স্কেল) ছাড়াই যুদ্ধের ময়দানে চলে এসেছে। আশেপাশে কোন দোকান_ও নেই যে এগুলো কিনবেন।
সাহায্য পেলাম কলোনিরই এক আঙ্কেলের কাছে। উনি ওনার বাচ্চার জন্য অনেকগুলো পেন্সিল নিয়ে এসেছেন। তাঁর মধ্য থেকে আমাকে একটা দিলেন। সর্বনিম্ন কিন্তু সবচেয়ে মারাত্মক অস্ত্র নিয়ে আমি হলে চলে গেলাম। যাই হোক, নিজের ঢোল নিজে বেশিক্ষন বাজাতে নাই, তাতে নাকি ঢোল ভেঙ্গে যায়!! শুধু এতোটুকুই বলি, পরীক্ষায় সর্বোচ্চ ভালো রেজাল্টটাই করেছিলাম।
হেডস্যারের মুখোমুখি!
লিখিততে সবচেয়ে ভালো রেজাল্ট করার পর বাসায় কয়েকদিন আমার সেই কদর!! আশেপাশের পাড়া-প্রতিবেশিদের কাছে আমি তখন বিরাট যোদ্ধা! তারপর আবার একদিন আব্বা ঘোষণা দিলেন যে আগামীকাল আমাকে প্রথম ক্লাসে যেতে হবে। ততদিনে আমি আমার স্কুলের নাম শিখে ফেলেছি। আমার স্কুলের নাম জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড হাই স্কুল। যাই হোক, ১৯৯৪ সালের কোন এক পাখি ডাকা সকালে আমাকে আমার স্কুলের ড্রেস পরিয়ে দেয়া হল। আব্বার সাথে রওনা দিলাম স্কুলের পথে।
ক্লাস শুরুর আগে নাকি হেডস্যারের সাথে দেখা করতে হয়। উনি নাকি হালকা জিজ্ঞাসাবাদ(!) করবেন। একে নাকি ভাইভা বলে। গেলাম তাঁর রুমে। সাথে যথারীতি আব্বাও আছেন।
যতটুকু মনে পড়ে ভর্তি পরীক্ষায় আমরা যারা ১ম, ২য়, ৩য় হয়েছিলাম তারা একসাথে হেডস্যারের রুমে প্রবেশ করেছিলাম। স্যার দুই একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে আমাকে বললেন একটা পাতায় আমার নাম লিখতে। আমি টেবিল থেকে নাগাল পাচ্ছিলাম না, স্যার তখন আমাকে তাঁর কোলে বসিয়ে নিলেন। আমি তখন লজ্জা আর ভয়ে কাচুমাচু হয়ে আমার নামটা লিখে দিলাম। স্যার এবার আব্বাকে বললেন আমাকে ক্লাসে বসিয়ে দিয়ে তিনি যেন চলে যান।
কয় কি!! আব্বা যেন চলে যায় মানে? আমি একলা থাকব কেমনে?
আমি ঘ্যান ঘ্যান করতে লাগলাম যেন আব্বা আমাকে ফেলে না চলে যায়। আব্বা আমাকে কেমনে কেমনে জানি বুঝায়া ফেললেন যে আমি এখন অনেক বড় হয়ে গেছি, তাই আমার উচিত একা একা স্কুল ছুটির পর বাসায় যাওয়া। তাছাড়া কলোনি থেকে বাচ্চাদের নেয়ার জন্য বড় একটা বাস আসে, যেটা আমি চিনি। কাজেই সমস্যা হবে না।
এবং ক্লাস রুমে প্রবেশঃ
“একটা ছোট রুমে অসংখ্য কালো গিজগিজে মাথা”- ক্লাসে প্রবেশের পর এই কথাই আমার প্রথম মনে হয়েছিল।
সব ছেলেমেয়েরা গাদাগাদি করে বসে আছে। তিল ধারনের ঠাই নাই। ক্লাসের টিচার তখনো আসেননি। এর মধ্যে আব্বা ফার্স্ট বেঞ্চে বসা এক ছেলের (পরে নাম জেনেছি, শাহিনুল। আমার দোস্ত!) কাছে গিয়ে বললেন, “আমার ছেলের রোল নং এক, সে এখানে বসলে তুমি কি কিছু মনে করবা?” ঐ ছেলেও দেখি খুশি মনে প্রথম বেঞ্চ ছেড়ে দিয়ে একেবারে পিছনের সিটে গিয়ে বসে পড়ল আর পাশে থাকা ছেলের সাথে খেলতে লেগে গেল!! বুঝলাম, এর বাবাও মনে হয় একে জোর করে ফার্স্ট বেঞ্চে বসিয়ে দিয়ে গেছে।
আব্বা আমাকে বসিয়ে দিয়ে চলে গেলেন। আমি অপেক্ষা করতে লাগলাম এর পরে কি হয় তা দেখার জন্য। আর মনে মনে গজগজ করতে লাগলাম কেন আমি পিছনের সিটে বসতে পারলাম না, তাইলে আমিও ঐ ছেলের সাথে খেলতে পারতাম!!
ক্লাস কেমন হল? আমার মনে নেই। শুধু মনে আছে দুইজন ম্যাডাম আমাদের চারটা ক্লাস নিয়েছিলেন। আয়েশা ম্যাডাম আর মরিয়ম ম্যাডাম।
এর মধ্যে মরিয়ম ম্যাডাম এখনো সেই স্কুলে আছেন। আর আয়েশা ম্যাডাম আমরা ক্লাস টুতে থাকা অবস্থায় ট্রান্সফার হয়ে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট চলে গেছেন। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।