নিজকে নিয়ে উদাস আমি, পরকে নিয়ে কখন ভাবি...
এক সময় পত্রিকায় এ্যাসাইনমেন্ট হিসাবে অনেকগুলো ছড়া সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম। বন্ধুদের সাথে সেসব শেয়ার করতে চাই...
ছড়াকার পরিচিতি
জুলফিকার শাহাদাৎ ছড়ার মানুষ। ছড়াতেই স্বাচ্ছন্দবোধ করেন। বর্তমানে সবগুলো পত্রিকায় লিখছেন তিনি। যাকে বলে দুই হাতে লেখা।
কিশোর কবিতা তার হাতে বাজনা বেজে ওঠে চানাচুরের মতোই। কিশোর কাব্যে তাই পেয়েছেন তারকা খ্যাতি। জুলফিকার শাহাদাতের ছড়ায় দেশ-মাটি, মানুষ ও সমাজের চিত্রসহ সমকাল উঠে এসেছে নানান সাজে। গুণী এই ছড়াকারের জন্ম ভূজপুর থানার জুজখোলা গ্রামে। পড়ালেখায় রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক।
৯০ দশকের গোড়া থেকে লেখালেখি শুরু। বর্তমানে ঢাকার মিরপুরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। তার ছড়াগ্রন্থগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য, আকাশকে খোলা চিঠি, খোকন তুমি শোন, কোনো এক দুপুরে, আমার পুতুল উড়তে পারে। লিখেছেন কিশোর গল্পও, কানকাটা রুহিন তার প্রথম গল্পের বই। এছাড়াও রয়েছে, ধ্র“ব এষ যে ভূতের ছবি এঁকেছিলেন ইত্যাদি।
প্রশ্ন :
সবার আগে সালাম জানাই, হচ্ছে কেমন থাকা
কোন সড়কে কোন গতিতে চলছে জীবন চাকা?
উত্তর :
ওয়ালাইকুম ভাই-
জবাব দেয়ার আগে আমি শুভেচ্ছা জানাই।
কেমন করে চলছে জীবন
কেমন জীবন সড়ক-
ডুবে আছি খানাখন্দে
দেশটা যেন নরক,
জংলি শাসক গদির ওপর, চোর সেজেছে বীর
ভণ্ড, টাউট, মাস্তানদের উদ্ধত আজ শির
জুলুমবাজ আর কালো বিড়াল বুক ফুলিয়ে নাচে-
বলুন এমন জংলি শাসন আর কোথাও আছে?
এর ভেতরে জীবন কোথায়? কোথাই বা তার গতি?
সাধুর চোখে শর্ষে এখন, চোরের বৃহস্পতি।
হায় হায় হায় হায়
বলেন কী মশাই?
ঈদ এসেছে ব্যস্ত কেমন
একটু জানতে চাই।
ব্যস্ত আমি সারা বছর, কলম আমার ঢাল
দু’চোখ দিয়ে পরখ করি আজ, আগামীকাল
সেই চিত্র তুলে ধরি সবার কাছে কাছে
এর চেয়ে সুখ বলুন জনাব, আর কোথাও কি আছে?
কোথায় কখন কী ঘটছে, কোথায় ব্যাধি, জরা-
সকল কিছুর সাক্ষ্য হতে তৈরি আমার ছড়া
আমার বুকের রক্তক্ষরণ অন্যকে দিই ধার-
সেই কারণে আজকে আমি কালের ছড়াকার
ঈদ আসছে ব্যস্ত আরো, নতুন ছড়ার ধুম
এমনতর কয়টি আছে আনন্দ মওসুম?
তাই লিখছি প্রায় কাগজে, পাবেন ক’দিন পর
ছড়ায় ছড়ায় রাঙিয়ে দিলাম সবারই অন্তর।
মজার কোনো স্মৃতিকথা ঈদ নিয়ে কি আছে?
জানতে এ মন নাচে।
মজার কথা ফুরিয়ে যায়, তাই-
দুঃখদিনের ঈদের স্মৃতি
একটু বলতে চাই।
আমরা ছিলাম ১০ ভাইবোন, মা ও বাবা সাথে
মিলেমিশে খাবার খেতাম টেবিলে এক পাতে
একাই বাবা কর্ম করেন, সকল বোঝা তার
কী কষ্টে চালিয়ে নিতো দুখি এ সংসার
সে সংসারে ঈদ এলে ফের, কেমন বাবার মুখ!
কল্পনা ঠিক করতে পারেন, ব্যথাতে একবুক
তবুও বাবা শক্ত কত ছেলেমেয়ের কাছে-
ভাব ধরতো এমন যেন, অভাব কি তার আছে?
ধারকর্জে ডুবে যেতো, কিনতে ঈদের সুখ
এখনো ঠিক মনে পড়ে বাবার করুণ মুখ।
সেই বাবা আজ মা’কে নিয়ে থাকে একা একা
আমরা সবাই বাইরে থাকি, তার সাথে নেই দেখা
মা জননী স্মৃতিহারা, বলবো কী আর খুলে-
আমরা যে তার কয় সন্তান সেটাও গেছে ভুলে
আমার মায়ের জন্য সবার একটু দোয়া চাই-
মা’কে যেন এবার ঈদে আগের মত পাই।
ছোট্টবেলার যে ঘটনা পড়লে আজো মনে-
হাসেন ক্ষণে-ক্ষণে!
হ্যাঁ রে-
ছোট্টবেলার সেই স্যার কি আসছে এখন তেড়ে?
যার ভয়ে এক দুপুরবেলা ঝোপের আড়াল হয়ে-
সময় দিলাম বয়ে।
সেদিন ক্লাসে হইনি হাজির, বোনের বাড়ি যেতে-
হাঁটছি ক্ষেতে-ক্ষেতে।
এমন সময় স্যার,
যাচ্ছে দেখি রাস্তা দিয়ে, বুক কাঁপে বার-বার।
লুকিয়ে গেলাম তাই-
যদি রেহাই পাই।
এই সুযোগে কী ঘটেছে বলছি শুনো ভাই-
আমার খাঁচার মুরগি ছানা একটিও আর নাই
এই বিপদে কার কাছে যাই? মা দেবে তো ঝাড়ি-
মলিন মুখে পৌঁছে গেলাম বড় আপুর বাড়ি
এই ঘটনা পড়লে মনে আজো হাসি পায়-
শৈশবের এই মধুর স্মৃতি কী করে হারায়।
ছড়া লেখার কায়দা কানুন একটু যদি বলেন-
কী কী পড়ে, কী কী শেখে, আজ ছড়াকার হলেন?
ছড়া লেখা নয়তো সহজ কাজ-
বলছি আমি আজ,
ছন্দ মিলের টুনটুনানি মোটেও ছড়া নয়-
এই কথাটা মনে রেখে ছড়া লিখতে হয়
শব্দ বাছাই, বাক্যগঠন শিখতে হবে আগে
কল্পনা ত ছড়ার প্রাণ, ওটা পুরোভাগে
গল্প যদি থাকে ছড়ায়, আর কী তবে চাই?
শ্রেষ্ঠ ছড়া হতেও পারে, ছড়াবে রোশনাই
মাত্রা যদি খোঁড়া থাকে অঙ্গহানি ঘটে
এইদিকে ফের একটু খেয়াল রাখতে হবে বটে
মুখের সাথে ছড়ার যদি খাপছাড়া হয় দেহ
এই ধরনের ছড়া পড়ে আনন্দ পায় কেহ?
যুক্তাক্ষর খুব বেশি নয়, সহজ যেটুক হয়
এমন ছড়া সফল ছড়া জানিও নিশ্চয়
অন্ত্যমিলের মোহে পড়ে দাও যদি ভাই ঝাপ
ছড়া লিখে হয়তো শেষে করবে পরিতাপ
সবচে’দামি, সবচে’সেরা একটি ছড়ার প্রাণ
থাকলে এটুক, রাখতে পারো ছড়ায় অবদান।
জন্মেছিলেন কোন গ্রামে, কোথায় বাড়িঘর
দয়াকরে একটু যদি জানাতেন উত্তর।
জন্ম আমার চট্টগামের একটি ছোট গ্রাম-
জুজখোলা তার নাম
ফটিকছড়ি উপজেলার নারায়ণ হাটের কাছে
আমার শেকড় আছে,
সেই শেকড়ে আমার বাড়ি, আমার প্রিয় গ্রাম
শৈশবেরই হাজার স্মৃতি ডাকছে অবিরাম।
বাংলাদেশের ছড়াকার আর ছড়ার ভবিষ্যত
কেমন হবে? একটু যদি দিতেন মতামত।
ছড়াকারের কী ভবিষ্যত? হেসেই আমি খুন-
তারচে’ বলো আঁধার কেমন? বলছি কয়েক গুণ।
ছড়া লিখে ভাত জোটে না, জোটে অবহেলা
কেউবা বলে ছড়ালেখা শুধুই ছেলেখেলা
কেউবা বলে, ছড়ালেখা পোলাপাইনের কাজ
ছড়াকারের কী অপমান করুন তো আন্দাজ
ছড়া লিখে পেট চলে না, বলবো কত আর?
প্রয়োজনে তাকিয়ে দেখুন রিটন, সুকুমার
ছড়া নিয়েও প্রশ্ন অনেক, ছড়ার নামে বড়া
পাচ্ছি অনেক, কিন্তু ওসব যায় না মোটেও পড়া
লিখছে যারা এসব বড়া তাদের অনেক দল
একাডেমি, সংঘ ওদের জোগায় শক্তি, বল
ওরাই করে পদক ফেরি, ছড়ার উলুবনে
এসব দেখে ছড়ার প্রতি ঘেন্না জাগে মনে!
কিন্তু ছড়া, প্রাণের ছড়া আমার বুকের তেজ
রাখবো অটুট, যতই গজাক নতুন বড়ার লেজ
বড়াকারে দেশ ছেয়ে যাক, তাতে ছড়ার কী?
তাদের মাথায় একটু আমি থুতু দিয়েছি।
ঘুমের ভেতর স্বপ্নে ধরুন, যা দেখলেন আইজ-
হঠাৎ করে আপনি পেলেন ছড়ায় নোবেল প্রাইজ
কী করবেন আপনি তখন? কেমন প্রতিক্রিয়া-
অনুভূতির আদ্যোপান্ত জানান ছড়া দিয়া।
হো হো হো হাসছি আমি, হাসেন সবাই মিলে-
সুকুমারের হযবরল খাওতো সবাই গিলে
উপেন্দ্র কই? কই দাদাভাই? নেই আবদার কাছে?
এই প্রশ্নের ভালো জবাব ওদের কাছে আছে।
তাই-
নোবেল প্রাইজের স্বপ্ন দেখার সাধ্য আমার নাই।
আমি হলেম পুঁটির ছানা, বোয়াল ভয়ে থাকি
এত্তো বড় স্বপ্ন দেখা আমায় মানায় নাকি?
আশে পাশের প্রাইজ বিজনেস যেটুক চোখে পড়ে
সেসব দেখে আমার ভীষণ হাত কড়মড় করে
পুরস্কারের ঠিকাদারও হাত বাড়ালেই পাবেন
কোন সুপুরুষ মাথা খেয়ে ওদের কাছে যাবেন?
মুরগি চোরা, জমির দালাল এবং আড়তদার
ছড়াকারের সঙ্গে দেখুন পাচ্ছে পুরস্কার
এসব থেকে দূরে আমি, একা একাই থাকি
নেই এতোটুক মোহ আমার, ভাবুন না আনলাকি!
ভালোই আছি, তৃপ্ত আমি দুঃখ আমার নাই
নিজে নিজে আপনমনে ছড়ারই গান গাই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।