টেক্সটাইল প্রকৌশলী হিসাবে কর্মরত । ***শোকের দিন ৭ই নভেম্বর। আজকের এই দিনে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় মুক্তিযুদ্ধের বিখ্যাত তিন সমর নায়ক এবং কাণ্ডারী জেনারেল খালেদ মোশাররাফ, কর্নেল হায়দার এবং কর্নেল হুদাকে। ***
খালেদ এবং এটিএম হায়দার ছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর চৌকষ দুই সেনানায়ক। খালেদ মুক্তিযুদ্ধের সময়কালে ছিলেন ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় অবস্থিত চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গাল রেজিমেন্টে কর্মরত, পাকিস্তানের বিখ্যাত এক ওয়ার কোর্সে অংশগ্রহন করেছিলেন তিনি, যাতে শূধু অংশগ্রহণ করার সুযোগ পায় সেরাদের সেরারই।
আর এটিএম হায়দার ছিলেন পাকিস্তানের বিখ্যাত ৩ কমাণ্ডো ব্যাটেলিয়নে, কুমিল্লা সেনানিবাসে কর্মরত।
পাকিস্তানী বাহিনী পরিকল্পিতভাবে এদেশের মানুষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার আগে বিভিন্ন ছোট ছোট দলে ভাগ করে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে অবস্থিত আমাদের যোদ্ধাদের ছড়িয়ে দেয় বিভিন্ন দিকে। তাই খালেদকে পাঠানো হয় শমসেরনগর। কিন্তু পরবর্তীতে গণহত্যার খবর পেয়ে খালেদের নেতৃত্বে বিদ্রোহ করে আমাদের ফোর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট থেকে পালিয়ে যেখানে যোগ দেয় এটিএম হায়দার। পরবর্তীতে তাদের অধীনে গড়ে তোলা হয় ২নং সেক্টর যারা বিলোনিয়া যুদ্ধ,শালদা নদী যুদ্ধ, মন্দাভাগ অপারেশানসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিকভাবে ভাবে পরিচিত যুদ্ধের নেতৃত্ব দেয়।
হায়দারের অধীনে উন্নত প্রশিক্ষণ পায় হাজারো গেরিলা, যাদের মধ্যে ছিল আমাদের ক্র্যাক প্লাটুনও। আর এই গেরিলারা খালেদ মোশাররাফকে এতই শ্রদ্ধার চোখে দেখতো যে তারা এখনো নিজেদের পরিচয় দেয় আমরা খালেদের ছেলে(যোদ্ধা) বলে। তাই ইংরেজীতে বলা হয়, Sector-1 has started the war, sector-2 has sustained the war.
এভাবেই খালেদ-হায়দার এবং ২নং সেক্টর পুরো মুক্তিযুদ্ধের গতিপ্রবাহকেই করেছেন পরিবর্তন। সম্মুখ সমরে আহত হয়েছিলেন খালেদ, খুলিতে লেগেছিল স্প্লিন্টার, মাথা থেকে বেড়িয়েছিলো হলদাভ মগজ। তবু বেঁচে ফিরেছিলেন এদেশে।
আর হায়দারতো পুরো মুক্তিযুদ্ধই করেছেন এক হাতে। যুদ্ধের প্রথম দিকেই এক দূর্ঘটনায় হাতে গুলী লাগে তার। পরিপূর্ণ বিশ্রামের পরামর্শ মেজর আখতার তাদের দিলেও এই পরিশ্রম মেলেনি কখনোই তার। দূর্ধর্ষ সব অপারেশানে যেতেন এই এক হাতেই। আর এরই ফলশ্রুতিতে, মুক্তিযুদ্ধে অসম সাহসিকতার জন্য তাদের উভয়েরই মেলে বীর উত্তম উপাধী।
যুদ্ধ শেষেও এই দুই মেধামী অফিসার অবদান রাখেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পুনর্গঠনে।
আর কর্নেল হুদা ছিলেন একজন দেশপ্রেমী যোদ্ধা- আট নং সেক্টরের সাব-সেক্টর কমান্ডার। ১৯৬৯ সালেই তিনি এক সশস্ত্র সংগ্রামের গোপন পরিকল্পনা নেন দেশ স্বাধীন করবার, তাই ফলশ্রুতিতে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় কারান্তরীণ করা হয় তাকে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনিও যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধে এবং দায়িত্ব পান আট নং সেক্টরের সাব-সেক্টর কমান্ডার হিসেবে। যুদ্ধে অসামান্য কৃতিত্বে সহিত অংশ নেন বিভিন্ন অপারেশানে, যারই ফলশ্রুতিতে মুক্তিযুদ্ধে মেলে তার বীর বিক্রম উপাধী।
জাতীর দূর্যোগে ১৯৭৫ সালের এই দিনে শেরে বাংলা নগরে অবস্থিত ১০ম ইস্ট বেঙ্গলের ক্যান্টিনে নাস্তা করারত অবস্থায়ই মেজর জলিলের নেতৃত্বে এসে একদম সৈন্য হত্যা করে খালেদ-হায়দার-হুদাকে। পরিকল্পিতভাবেই সেই পঁচাত্তরে একে একে বাংলাদেশের সকল স্বাধীনতার কাণ্ডারীকে হত্যা করে দেশকে পরিপূর্ণভাবে করা হয় নেতৃত্বশূন্য। প্রথমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, এরপর জাতীয় চার নেতা, এরপর সেনাবাহিনীতে সবচেয়ে যোগ্যতম দেশপ্রেমীক এই অফিসারদেরকে। আর তাই এই দিনটিকে তথা এই মাসটিকেই জামায়াতী ইসলামের মত বেঈমান রাজনৈতিক দলগুলো দেখে বিজয় দিবস হিসেবে। আজকের আমারদেশ পত্রিকায় তাই জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ লিখেছেন, "সেদিন এদেশের সিপাহী-জনতা আধিপত্যবাদের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে যে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল তা চিরদিন স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
" খালেদ মুক্তিযুদ্ধের সময় তার গেরিলাদের বলতেন, "স্বাধীন দেশ জীবিত যোদ্ধাদের চায়না, তারা চায় মৃত যোদ্ধা। " বাস্তবে হয়েছেও তাই, যেদেশে উড়েছে রাজাকারের গাড়ীতে পাতাকা, পেয়েছে তারা মন্ত্রিত্ব, ৭৫ এর পর রাজাকার শাহ আজিজুর রহমান বসেছিলেন প্রধানমন্ত্রীর আসনে,৯১ এর পর তো রাজাকার আব্দুর রহমান বিশ্বাসকে বসানো হয় এদেশের সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ প্রেসিডেন্টের আসনে, আর সেদেশে যে তার শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধারা যে লঞ্চিত-বঞ্চিত হবে না তা কি বলার অপেক্ষা রাখে?
Collected From
মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোন [A Page totally based on liberation war'71] ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।