আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এক ঘরে হয়ে মাথা নষ্ট জামায়াতের। মরিয়া জামায়াতের পরিকল্পনা ফাস গোয়েন্দা প্রতিবেদনে

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব। নিসঙ্গতা মারাত্বক এক ব্যধি। তা কুড়ে কুড়ে খায় অস্তিত্ব। নিষ্ফল আক্রোশ যেন বুকে পাহাড়ের বোঝা। দেশ সমাজ বিরোধী জামায়াতের শেষ আশ্রয় ছিল বিএনপি তাও হারালো হারালো ভাব।

এক ঘরে জামায়াত সব হারিয়ে এখন পাগলের দশা কি করবে বুঝে উঠতে পারছেনা। খালেদা জিয়ার উপর আগে থেকেই ভরসা পাচ্ছিল না তারা, আর এবার বেগম জিয়ার ভারত ভ্রমন যেন ছাই চাপা আগুনে ঘী ঢালার সামিল দাউ দাউ আগুনে জ্বলে উঠল। ঝি কে মেরে বউকে শেখানোর মত তারা পুলিস রেব পিটিয়ে খালেদার উপর ঝাল ঝারতে চাইছে। একা হয়ে যাচ্ছে জামায়াত বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল হলেও রাজনীতিতে ক্রমেই একা হয়ে পড়ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। যুদ্ধাপরাধ ইস্যু, আন্দোলনে বিএনপির পিছুটান, পুলিশের ওপর চোরাগুপ্তা হামলাসহ নানা কারণে জোট ছাড়া একা পথেই হাঁটতে হচ্ছে দলটিকে।

সবশেষ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার ভারত সফরের পরে জামায়াতের ব্যাপারে বিএনপির উদাসীনতার কথা ব্যাপক আলোচনায় উঠে এসেছে। যুদ্ধাপরাধ ইস্যু ও দলের শীর্ষনেতাদের মুক্তির আন্দোলনে হঠাৎ করে সহিংসতার পথ বেছে নেয়ায় জোটের প্রধান দল বিএনপি-জামায়াতের ওপর এখন চরম নাখোশ। জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদী ইস্যুসহ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে জনগণের মাঝে সচেতনতা বাড়ায় সাধারণের মাঝেও জামায়াতবিরোধী মনোভাব আগের চেয়ে বেড়েছে। বিএনপিও এই মুহূর্তে জামায়াতের সহিংসতার দায়ভার কাঁধে নিতে রাজি নয়। বরং বর্তমান পরিস্থিতিতে দ্রুত জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করতে দলের একটি উল্লেখযোগ্য অংশের চাপ রয়েছে।

পাশাপাশি জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করতে খালেদা জিয়াকে ভারতের প্রেসক্রিপশনের কারণেও দলটিকে এড়িয়ে চলছে বিএনপি। এদিকে গঠনতন্ত্র সংশোধনে ৪র্থ বারের মতো জামায়াতকে দেয়া নির্বাচন কমিশনের চিঠির কারণেও দলটির ওপর চাপ সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুসারে আগামী মাসের মধ্যে গঠনতন্ত্র সংশোধন করে কমিশনে জমা না দিয়ে দলটির নিবন্ধন বাতিল হয়ে যেতে পারে। এমনিতেই নানা কারণে অনেকদিন ধরে জোটের বৈঠক ও কর্মকাণ্ডে কোণঠাসা জামায়াত। জোটের কর্মসূচি ও বিভিন্ন কমিটিতেও আগের মতো তাদের আর গুরুত্ব দেয়া হয় না।

সম্প্রতি জোটের ব্যানারে তারা সরকারবিরোধী কঠোর কর্মসূচি দিতে চাইলেও বিএনপির পক্ষ থেকে তা এড়িয়ে যাওয়া হয়। বরং বর্তমানে জোটের শীতল কর্মসূচিতে জামায়াত তাদের ওপর চরম ক্ষুব্ধ। বিএনপির এ ধরনের পরোক্ষ বিরোধিতার কারণে জোটের কর্মসূচিতে জামায়াত-শিবির নিজেদের মতো করেই শক্তি প্রদর্শন করে যাচ্ছে। অবশ্য তাদের এমন গোঁয়ার্তুমির বিষয়টিও বিএনপি ভালোভাবে নেয়নি। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে দেশের মানুষের জামায়াত বিরোধিতা ও জনমতের বিষয়টিও বিএনপিকে বেশ ভাবিয়ে তুলেছে।

সার্বিক কর্মকাণ্ড নিয়ে অসন্তুষ্ট বিএনপি প্রয়োজনে জামায়াতকে জোট থেকে বের করে দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দলের একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, এতদিন বিএনপি জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলনের কর্মসূচি দিলেও যুদ্ধাপরাধ ইস্যু এবং খালেদা জিয়ার ভারত সফরের পর থেকে জামায়াত প্রসঙ্গে পিছুটান নিয়েছে বিএনপি। তারা এখন যুদ্ধাপরাধ ইস্যু ও জামায়াতের সহিংস রাজনীতি নিয়ে কৌশলে নীরবতা পালন করছে। বরং ব্যস্ত রয়েছে জোটের কর্মসূচি পালন নিয়ে। অন্যদিকে ডিসেম্বর মাসকে টার্গেট করে যুদ্ধাপরাধের বিচার ঠেকাতে সর্বশক্তি নিয়োগ করে মাঠে নেমেছে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা।

জিহাদি মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে তারা দিন দিন আরো সহিংস হয়ে উঠছে। রাজনৈতিক মেস, বাসাবাড়ি ও জামায়াত সমর্থিত প্রতিষ্ঠানে অবস্থান করে তাদের ক্যাডাররা পুলিশের ওপর একের পর এক চোরাগুপ্তা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে সারাদেশে জামায়াত-শিবির ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখন মুখোমুখি। এই অবস্থায় বিএনপি জামায়াতের সঙ্গে সহিংস আন্দোলনে জড়িয়ে নিজেদের পুলিশের প্রতিপক্ষ করতে চান না। বরং নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে বিএনপি সামনের দিনগুলোতে সরকারবিরোধী শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাবে বলেও তাদের নেতারা জানিয়েছেন।

তাছাড়া জামায়াতের এমন সহিংস রাজনীতি নিয়েও বিএনপি জোটে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। প্রয়োজনে জোট থেকে জামায়াতকে বাদ দেয়ার দাবিও বিএনপি-শিবির জোরালো হয়ে উঠেছে। বিএনপির এক শীর্ষনেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ার দিন এসেছে। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বিএনপি আর কতদিন যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতকে নিয়ে রাজনীতি করবে। তারা যেভাবে রাজপথে সহিংস হয়ে উঠছে তাতে আগামীতে তাদের অপবাদও আমাদের ঘাড়ে নিতে হবে।

সময় থাকতে জামায়াতের সংশ্রব বাদ দিতে হবে। ’ দেশের তরুণ প্রজন্মও বিষয়টি ভালোভাবে নেন না বলে মন্তব্য করেন তিনি। তবে ভিন্নমত প্রকাশ করে জামায়াতের এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের কোনো ভুল বোঝাবুঝি নেই। জোটের আন্দোলন কর্মসূচি ছাড়াও আমরা নিজেদের কর্মসূচি পালন করছি মাত্র। চারদলীয় জোট থেকে ১৮ দলীয় জোট এসব গঠন হয়েছে একসঙ্গে সরকারবিরোধী আন্দোলন ও ক্ষমতায় গেলে সরকার গঠনসহ রাষ্ট্রপরিচালনার জন্য।

চাইলেই বিএনপি জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করতে পারবে না। তিনি দাবি করেন, সরকারের গুপ্তচররা নানা অজুহাতে জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি করে জোটে ফাটল ধরানোর চক্রান্ত করছে। কিন্তু তাদের সেই চেষ্টা সফল হবে না। ’ জোটের নেত্রীকে তার বাড়ি থেকে উচ্ছেদ, তারেক ও কোকোর বিরুদ্ধে মামলা এবং যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ এনে জামায়াতকে রাজনৈতিকভাবে নিশ্চিহ্ন করার চক্রান্ত এক সূত্রে গাঁথা বলেও মন্তব্য করেন তিনি। দুই কারণে মরিয়া জামায়াত দুই কারণে হঠাৎ রাজপথে মারমুখো হয়ে উঠেছে জামায়াত-শিবির।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার গতি সঞ্চার ও সরকারবিরোধী আন্দোলনে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি’র ধীরে চলো নীতির কারণে এককভাবে মাঠে নামে তারা। তবে সাঈদীর মামলার বিষয়টি মুখ্য কারণ বলে দলের বিভিন্ন সারির নেতারা নিশ্চিত করেছেন। তারা বলেন, সরকার যেনতেন ভাবে মাওলানা সাঈদীকে মানবতাবিরোধী অপরাধে শাস্তি দেবেই। মামলার সামপ্রতিক কার্যক্রমে এটা নিশ্চিত প্রায়। ফলে জোটবদ্ধ কর্মসূচির অপেক্ষায় তাদের আর বসে থাকার সময় নেই।

তাই রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে তড়িঘড়ি সংবাদ সম্মেলন করে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা দেয়া হয়। ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী সোমবার প্রায় একই সময় রাজধানীসহ দেশের ২০টি জেলায় বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে মাঠে নামে জামায়াত-শিবির। এতে পুলিশসহ জামায়াত-শিবিরের শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। গ্রেপ্তার হয়েছেন ৩ শতাধিক। মামলা দেয়া হয়েছে ৩ শতাধিক নেতাকর্মীর নামে।

এরপরও বেশ তৎপর তারা। কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রংপুর, বরিশালসহ দেশের বেশ ক’টি জেলায় বিক্ষোভ মিছিল বের করে জামায়াত। এ সময় তাদেরকে পুলিশের ওপর চড়াও হতে দেখা গেছে। এ ব্যাপারে দায়িত্বশীল নেতারা বলেন, গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে আমরা রাজপথে মিছিল নিয়ে নামলেই পুলিশ হামলা করছে, গ্রেপ্তার-নির্যাতন করছে। আমরা পুলিশের হামলা ঠেকাচ্ছি মাত্র।

ঢাকা মহানগর জামায়াতের প্রচার সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে চাই। কিন্তু সরকারের উস্কানিতে কিছু সংখ্যক পুলিশ আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে দিচ্ছে না। তারা দলীয় কর্মীর মতো আচরণ করছে- গত প্রায় ৪ বছর যেমনটি করেছে। তিনি বলেন, সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে আমরা রাজপথে শান্তিপূর্ণ ভাবে মিছিল-সমাবেশ করতে চাই। আমাদের বাধা না দিলে কিছুই হতো না।

শিবিরের দায়িত্ব শেষে সমপ্রতি জামায়াতে যোগ দেয়া এক নেতা বলেন, সরকার আমাদের শীর্ষ নেতাদের অন্যায়ভাবে বিচার করবে, ফাঁসি দেবে- আর আমরা বসে থাকবো- এটা হতে পারে না। জীবন দিয়ে এই অবিচার প্রতিরোধ করবো। নেতাদের মুক্ত এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পুনর্বহাল করেই আমরা ঘরে ফিরবো। অন্যথায় নয়। তার মতে, শীর্ষ নেতাদের মুক্তির দাবিতে আন্দোলন কর্মসূচির জন্য এতদিন মুখিয়ে ছিল জামায়াত-শিবিরের লাখো নেতাকর্মী।

দীর্ঘ দিন অনেকটা আত্মগোপনে থাকা জামায়াতের সদস্য থেকে রুকন এবং শিবিরের সাথি থেকে সদস্য পর্যায়ের এসব কর্মী এখন যে কোন কঠিন কর্মসূচি পালনে প্রস্তুত। ইতিপূর্বে ঘরোয়া সভা-সমাবেশের মাধ্যমে মানসিকভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে তাদের। নির্দেশনা দেয়া হয়েছে যে কোন বাধা অতিক্রম করারও। উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে শীর্ষ নেতাদের মুক্তি আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার। তাই মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে কোন শাস্তি তারা বিনা চ্যালেঞ্জে ছেড়ে দেবে না।

সাঈদীর মামলার কারণে জামায়াত-শিবিরের হঠাৎ এই তৎপরতা কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি হ্যাঁ-সূচক উত্তর দেন। সংশ্লিষ্টরা জানান, যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে দলের ৯ শীর্ষ নেতা আটক। এর বাইরে বিভিন্ন মামলায় জেলা-উপজেলা পর্যায়ের এক হাজারের বেশি নেতাকর্মী কারাগারে। মামলা-হামলার ভয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রথম ও দ্বিতীয় সারির প্রায় সব নেতা আত্মগোপনে। কেন্দ্র থেকে শুরু করে নগর-মহানগরের অনেক কার্যালয় বন্ধ থাকার প্রেক্ষাপটে তৃণমূল নেতাকর্মীরা আন্দোলনের জন্য এখন এক পায়ের ওপর খাঁড়া।

বিশেষ করে দলের নায়েবে আমীর মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে আনীত যুদ্ধাপরাধের মামলার অত্যধিক গতি, ওই মামলায় অনুপস্থিত সাক্ষীদের লিখিত জবানবন্দি সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ এবং তার পুত্র মাওলানা রাফিক বিন সাঈদীর আকস্মিক মৃত্যুতে সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের বিক্ষুব্ধ করে তুলেছে। সব শেষে দলের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের গ্রেপ্তার নেতাকর্মীদের মর্মাহত করে। ১১ মাস কারাবাসের পর মুক্তি লাভের এক সপ্তাহের মাথায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটক করা হয় তাকে। মাঠকর্মীরা এসব ঘটনার প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ার জন্য নেতাদের চাপ দিয়ে আসছিল এতদিন। দলের দায়িত্বশীল সূত্রে এসব তথ্য স্বীকার করে বলা হয়েছে, এতদিন জোটগত কর্মসূচির অপেক্ষায় ছিল জামায়াত।

কিন্তু সমপ্রতি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার চীন ও ভারত সফরে পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে আপাতত সেটা হচ্ছে না। তাই একক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামে তারা। এদিকে শিবির থেকে জামায়াতে সংযুক্ত হওয়া দায়িত্বশীল কর্মী আতাউর রহমান সরকার বলেন, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে আনীত যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ দলীয় নেতাকর্মী নয় শুধু, দেশের সাধারণ মানুষও বিশ্বাস করে না। বিশেষ করে মামলার অনুপস্থিত ১৫ সাক্ষীর জবানবন্দিকে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ, ট্রাইব্যুনালের গেট থেকে এক সাক্ষীকে অপহরণসহ সার্বিক কর্মকাণ্ডে ওই বিচার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে সবার মনে সন্দেহের উদ্রেক হয়েছে। এরপর মাওলানা সাঈদীর অসুস্থতা ও তার পুত্রের আকস্মিক মৃত্যু সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের আবেগ-অনুভূতিতে নাড়া দেয়।

তাই মাঠকর্মীরা সাঈদীর বিরুদ্ধে যে কোন রায় ঘোষণার আগে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন। এক্ষেত্রে পুলিশের বাধা, গ্রেপ্তারসহ যে কোন পরিস্থিতি বরণ করতে তৈরি তারা। ঢাকা মহানগর জামায়াতের নির্ভরযোগ্য এক নেতা বলেন, আমরা নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের ধারা অনুযায়ী কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। সেক্ষেত্রে পুলিশ যদি আমাদের অন্যায়ভাবে বাধা দেয় তাহলে আমরা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করবো। না পারলে জেলে যাবো, নির্যাতন সহ্য করবো।

কিন্তু নীরবে কোন অবিচার মেনে নেবো না। ’৯০ দশকে দলের সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযমের নাগরিকত্ব দাবির আন্দোলনের মতো কঠোর কর্মসূচির দিকে যাচ্ছে পরিস্থিতি এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ওই আন্দোলনে জামায়াত-শিবিরের ৭ কর্মী নিহত এবং বেশ কিছু নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। শীর্ষ নেতাদের বিচারের নামে কোন অবিচার হলে এবারও সে রকম অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। আন্দোলনমুখী কর্মীরা যে কোন ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত। জামায়াতের কৌশল গোয়েন্দা প্রতিবেদনে যা ছিল রাজধানী জুড়ে বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা ছিল জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবির নেতাকর্মীদের।

বিষয়টি আগে থেকেই জানতো পুলিশ। পুলিশের হাতে ছিল গোয়েন্দা প্রতিবেদনও। প্রতিবেদনে উল্লেখ ছিল সোমবারের পূর্বঘোষিত বিক্ষোভ মিছিল শুরুর পর তারা জঙ্গিরূপ ধারণ করতে পারে। থানা পুলিশ বা গোয়েন্দারা ভাবতে পারেনি- জামায়াত শিবিরের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরুর আগে সহিংস হয়ে উঠবে। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা মানবজমিনকে এ তথ্য জানিয়ে বলেন, জামায়াতে ইসলামীর সদস্যরা নিত্য নতুন কৌশল পরিবর্তন করছে।

তাদের কৌশলের কাছে কখনও কখনও হার মানছে পুলিশ। এ কারণে, গত ১ বছরের মধ্যে রাজধানীসহ সারা দেশে তারা বেশ কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনাসহ ২টি বড় ধরনের ধ্বংসাত্মক ঘটনা ঘটিয়েছে। এখন তাদের প্রধান টার্গেট পুলিশ। যেকোন সময় তারা পুলিশের ওপর বড় ধরনের হামলা চালাতে পারে। এ আশঙ্কা থেকে পুলিশ, র‌্যাব ও গোয়েন্দারা অধিকতর সতর্ক।

গোয়েন্দা পুলিশের অপর এক কর্মকর্তা জানান, জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা সোমবার যে ঘটনা ঘটিয়েছে তাতে পুলিশ সদস্যরা সারপ্রাইজড। তিনি জানান, রাতে হামলার ঘটনা ঘটলেও দিনের বেলাতেই বেশ কয়েকবার হামলার চেষ্টা চালায় তারা। ওই সময় জামায়াত- শিবির কর্মীরা কয়েকজন পুলিশ সদস্যকেও আটকে রাখে। ডিএমপি কমিশনারের মুখপাত্র ও মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, সোমবার ছিল জামায়াত-শিবিরের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি। এ কর্মসূচিকে ঘিরে আমাদের ব্যাপক প্রস্তুতি ছিল।

আমাদের কাছে তথ্য ছিল তারা বিক্ষোভ মিছিল শুরু করার পর জঙ্গি স্লোগান দিয়ে হামলে পড়বে। সাধারণ মানুষের জান-মালের ব্যাপক ক্ষতি করবে। ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করবে। রাজধানী জুড়ে আতঙ্ক তৈরি করবে। কিন্তু দেখা গেলো তারা কর্মসূচি শুরুর আগেই হামলা শুরু করে।

আমাদের ব্যাপক প্রস্তুতির কারণে তারা পরিকল্পনা অনুযায়ী নাশকতা ঘটাতে পারেনি। তারপরও সাধারণ মানুষের অনেক ক্ষতি হয়েছে। আহত হয়েছে পুলিশ সদস্যরা। ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, আমরা যেভাবে প্রস্তুত ছিলাম তাতে কর্মসূচি শুরুর পর কোন হামলার ঘটনা ঘটানোর সুযোগ ছিল না। জামায়াত নেতা-কর্মীদের যে ব্যাপক নাশকতার পরিকল্পনা ছিল তার অনেক দালিলিক তথ্য আমাদের কাছে আছে।

গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদেও তাদের কাছ থেকে অনেক তথ্য পেয়েছি। মনিরুল ইসলাম আরও জানান, ভাঙচুর ও হামলার ঘটনায় যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা সবাই জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী। জামায়াতের সঙ্গে কোন জঙ্গি বা চরমপন্থি দলের সদস্য জড়িত আছে কিনা তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি বলেন, জামায়াতের যেসব নেতাকর্মীদের জঙ্গি কানেকশন রয়েছে তাদের অনেককে শনাক্ত করা হয়েছে। এদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

শনাক্তের বাইরেও তাদের সঙ্গে অনেক জঙ্গি গোষ্ঠী ও চরমপন্থি সদস্য রয়েছে বলে আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে। আগে থেকে হামলার আশঙ্কার তথ্য পাওয়ার পর হামলার ঘটনা গোয়েন্দা ব্যর্থতা কিনা জানতে চাইলে মনিরুল ইসলাম বলেন, বিষয়টিকে ব্যর্থতা বলা যাবে না। আমাদের কাছে তথ্য থাকলেও সুনির্দিষ্ট তথ্য ছিল না। তারপরও দ্রুততার সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছি। যে ধরনের বিধ্বংসী কর্মকাণ্ডের প্রস্তুতি তাদের ছিল তা তারা করতে পারেনি।

তিনি জানান, কৌশল পরিবর্তন করে জামায়াত-শিবির সদস্যরা আমাদের যেভাবে চমকে দিচ্ছে শিগগিরই আমরাও কৌশল পরিবর্তন করে তাদের চমকে দেবো। তিনি বলেন, সোমবারের ঘটনাটি কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। সামগ্রিক পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই তারা হামলা চালিয়েছে। তারা পরিকল্পিতভাবে দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে চায়। এর আগে তারা যেসব হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে সেসবের একটিরও বিচার হয়নি।

উচ্চ আদালতের নির্দেশে সব মামলায় স্থগিতাদেশ রয়েছে। আসামিরা জামিনে বের হয়ে এসেছে। যদি ওইসব হামলার দ্রুত বিচার হতো তাহলে তারা পুনরায় হামলার সাহস পেতো না। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাধাগ্রস্ত করাও তাদের হামলার অন্যতম উদ্দেশ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের কর্মতৎপরতা নিয়ে আমরা টাইম টু টাইম পর্যালোচনা করছি। কঠোর নজরদারির মধ্যে রাখা হচ্ছে।

পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার আনোয়ার হোসেনও একই ধরনের তথ্য জানান। গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার মাহফুজুল ইসলাম বলেন, গতকাল সকাল থেকেই আমরা এলার্ট ছিলাম। দিনের বেলায় তারা দৈনিক বাংলা মোড়, বলাকা চত্বর, রাজউক ভবন এবং জনতা ব্যাংক ভবন এলাকাসহ কয়েকটি স্থানে জঙ্গি ও বিক্ষিপ্ত চোরাগোপ্তা হামলার চেষ্টা চালিয়েছে। পুলিশ সদস্যদের তাৎক্ষণিক যোগাযোগ ও কমান্ডারের দ্রুত পদক্ষেপের কারণে তারা সফল হতে পারেনি। তারা সিটি সেন্টারের সামনে আমাদের ফোর্সকেও আটকিয়ে রাখে।

কৌশলে সেখান থেকে আমাদের ফোর্সকে উদ্ধার করেছি। তিনি জানান, সারাদিন আমরা পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করেছি। বিচ্ছিন্নভাবে তাদের মোকাবিলার টার্গেট ছিল না। ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের মোকাবিলা করতেই আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো প্রস্তুত ছিল। হঠাৎ ৫-১০ মিনিটের হামলায় আতঙ্ক ও ত্রাস সৃষ্টি হয়।

তিনি আরও জানান, গ্রেপ্তারকৃতদের ডিবি হেফাজতে এনে জিজ্ঞাসাবাদের সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় ৪টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। সোমবার রাতে মতিঝিল থানায় এসব মামলা করা হয়। ৩টি মামলার বাদী পুলিশ ও একটি মামলার বাদী এক ক্ষতিগ্রস্ত। মামলাগুলোতে আসামি হিসেবে ৮৩ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে ৪০০-৫০০ জনকে। অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে দ্রুত বিচার আইনে। অন্য মামলাগুলো হয়েছে যথাক্রমে পুলিশের ওপর হামলা, সরকারি গাড়ি পোড়ানো এবং মোটরসাইকেল পোড়ানোর অভিযোগে। মামলায় যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এদের মধ্যে ৩২ জনকে সোমবার রাতেই পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। গতকাল তাদের আদালতে হাজির করা হয়।

এজাহারে উল্লিখিত আসামিদের মধ্যে রয়েছে এমপি হামিদুর রহমান আযাদ, সাবেক এমপি মিয়া গোলাম পরোয়ার, ৯ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার শফিকুল ইসলাম প্রমুখ। উল্লেখ্য, সোমবারের সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের ২২ জন সদস্যসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হন। পুলিশের একটি ভ্যান, বিআরটিসি’র একটি বাস ও চারটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। এর আগে গত বছরের ১৯শে সেপ্টেম্বর চোরাগোপ্তা হামলার মাধ্যমে নগর জুড়ে আতঙ্ক তৈরি করে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।