১৯৭৫ সালের এই দিনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, বিপ্লবী গণবাহিনী ও বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার নেতৃত্বে সংঘটিত হয় ‘সিপাহী গণ অভ্যূত্থান’।
এই অভ্যূত্থানের মহানায়ক ছিলেন কর্নেল আবু তাহের বীর উত্তম। সেদিন কিছু অফিসার নিজেদের পদ ও পদোন্নতির জন্য নিজেদের মধ্যে হানাহানি শুরু করে। সেনা নিবাসে বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হয়। বিপন্ন হয় দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব।
এই পরিস্থিতিতে কর্নেল আবু তাহেরের নেতৃত্বে সংঘটিত হয় এই অভ্যূত্থান। বন্দী দশা থেকে মুক্ত হন প্রধান সেনাপতি জেনারেল জিয়া। মুক্ত হন মেজর এম এ জলিল, আ স ম আব্দুর রব , শাহজাহান সিরাজ প্রমুখ মুক্তিযোদ্ধা নেতৃবৃন্দ। জাতীয় সংকট মুকাবিলায় দেশপ্রেমিক সকল দল কে নিয়ে ‘জাতীয় সরকার’ গঠনের দাবী উঠে। খন্দকার আবদুল মালেক শহীদুল্লাহ ও হাসানুল হক ইনু জনগণের প্রতি আহ্বান জানান বাকশাল ব্যতীত সকল দেশপ্রেমিক দলকে নিয়ে ‘জাতীয় সরকার ‘ গঠনের।
এ আহ্বান সম্বলিত প্রচারপত্র সারা দেশে বিতরণ করা হয়। কিন্তু জনগণের এই দাবীর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়। সামরিক শাসন বহাল রাখা হয়। গ্রেফতার করা হয় কর্নেল আবু তাহের বীর উত্তম সহ মেজর এম এ জলিল, আ স ম আব্দুর রব , শাহজাহান সিরাজ, ডঃ আখলাখুর রহমান প্রমুখ মুক্তিযোদ্ধা নেতৃবৃন্দকে। প্রহসনের বিচার করে কর্নেল আবু তাহেরকে ফাঁসি দেওয়া হয়।
মেজর এম এ জলিল, আ স ম আব্দুর রব , শাহজাহান সিরাজ প্রমুখ মুক্তিযোদ্ধা নেতৃবৃন্দকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদের কারাদন্ডে দন্ডিত করা হয়। বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রে উদ্দীপ্ত ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক মাহমুদুর রহমান মান্নাকে খালাস দেওয়া হয়।
সেদিন এ দেশের মেহনতি শোষিত বঞ্চিত মানুষ মুক্তির আলো দেখেছিল। কিন্তু প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠির ষড়যন্ত্রে তার সুফল জনগণ দেখেনি। বর্ষার ঘনঘোর অন্ধকার রাতে বজ্রের চমকানি যেমন পৃথিবীকে চোখ ঝলসানো আলো দেয় ৭ই নভেম্বর তেমনি এ জাতি মুক্তির আলোকিত পথ দেখিয়েছিল।
৭ই নভেম্বরের মহানায়কসহ সেই মহা অভ্যূত্থানে অংশ গ্রহণকারী সিপাহী জনতার প্রতি রক্তিম অভিবাদন। যারা প্রাণ দিয়েছেন তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। সেই সাথে বিশ্বাসঘাতকদের প্রতি জানাই ঘৃণা।
ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়ে কর্নেল আবু তাহের বলেছিলেন ‘ বাঙালী বীরের জাতি , এ জাতির অন্তর্গত ইচ্ছা ও মর্যাদাকে খোঁচাবার স্পর্ধা যেন কারো না হয়। আমি এ জাতি অদম্য সাহস দান করে গেলাম।
নিঃশঙ্ক চিত্তের চেয়ে জীবনে বড় কোন সম্পদ নাই। আমি তার অধিকারী। দীর্ঘজীবী হোক স্বদেশ, দীর্ঘজীবী হোক বিপ্লব। ':
আসুন ৭ই নভেম্বরের শিক্ষার আলোকে দেশের স্বাধীনতা সার্ভৌমত্ব রক্ষা এবং শোষণমুক্ত সমাজ কায়েমের লক্ষ্যে এগিয়ে যাই।
সে জন্য দেশকে ৮থেকে৯টি প্রদেশে বিভক্ত করতে হবে।
সংসদের উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠিত করতে হবে । বিচার বিভাগকে স্বাধীন পৃথক ও বিকেন্দ্রীকরন করতে হবে। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি এর ১০ দফা দাবী এবং স্বাধীনতার রূপকার সিরাজুল আলম খানের ১৪ দফা প্রস্তাবের আলোকে দেশ গড়ার লক্ষ্যে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
স্বাধীনতার পর মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণকারী সকল দল ও শক্তিকে নিয়ে ‘জাতীয় বিপ্লবী সরকার’ গঠন না করে , গঠন করা হয় দলীয় সরকার । এর ফলে মুক্তি যুদ্ধের মাধ্যমে গড়ে উঠা জাতীয় ঐক্যে ফাটল ধরে।
সৃষ্টি হয় অবিশ্বাসের। এর ফলাফল বিগত ৪০বৎসর ধরে আমরা দেখেছি।
আজ তাই আসুন এ থেকে মুক্তিলাভের সংগ্রামে এগিয়ে যাই। ঐতিহাসিক ৭ই নভেম্বরে এটাই হোক আমাদের শপথ।
লেখকঃ সাবেক জেলা ও দায়রা জজ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।