ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ নিয়ে কৌতুহল সবারই। শুরুতে কঠিন কঠিন নামকরণ হলেও বর্তমানে সহজ নামে ডাকা হয় ঘূর্ণিঝড়দের। আর মজার ব্যাপার হচ্ছে নামগুলোর বেশির ভাগই মেয়েদের নামে যেমন যেমন রিটা, ক্যাটরিনা, নার্গিস, সিডর,রেশমী, বিজলী। আমেরিকায় যে প্রলয়ঙ্করী ঝড় আঘাত হানলো, সেই স্যান্ডি নামও নারীর। ।
ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে দ্রুত জানাজানি হওয়ার জন্যই এ সহজ নামের ব্যবহার।
নামকরণ
অতীতে ঝড়ের নামকরণ অক্ষাংশ-দ্রাঘিমাংশের উপর ভিত্তি করে করা হলেও বিভিন্ন অভিজ্ঞতায় দেখে গেছে, জটিল তাত্ত্বিক এসব নামের চেয়ে সংক্ষিপ্ত, সুনির্দিষ্ট নামকরণ লিখিত বা মৌখিক যেকোনো যোগাযোগে অধিকতর সহজ এবং দ্রুততর। এটি আরো গুরুত্বপূর্ণ কারণ, একটি ঝড়ের তথ্য হাজার হাজার স্টেশন, সমুদ্র উপকূল এবং জলযানের মধ্যে আদান-প্রদান হয়ে থাকে।
শত শত বছর ধরে পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের ঝড়গুলোর নাম হতো সন্তানদের নামে। যেমন- সান্তা আনা, স্যান ফেলিপ (প্রথম), স্যান ফেলিপ (দ্বিতীয়)।
কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ঝড়কে ছেলেদের নাম দেওয়া হত। এখন অবশ্য সব ঝড়কে স্থানীয় সাধারণ নাম দ্বারা, যা সংস্কৃতিগত দিক থেকে স্পর্শকাতর নয়, সে সব নামে চিহ্নিত করা হয়।
সাইক্লোন
ঘূর্ণিঝড়গুলোর বৈশিষ্ট্য এক হলেও সাধারণভাবে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যেসব ঘূর্ণিঝড় হয়, তাদের ডাকা হয় সাইক্লোন নামে। ইংরেজ সাহেব প্রাক্তন জাহাজি হেনরি পিডিংটন কলকাতায় চাকরি করার সময় এ অঞ্চলের ঝড়ের দানবাকৃতি দেখে গ্রিক শব্দ ‘কাইক্লোস’ থেকে (যার একটা অর্থ সাপের কুণ্ডলী) সাইক্লোন নাম প্রস্তাব করেন। ১৮৪৮ সালে নাবিকদের জন্য তার লেখা সেইলার্স হর্ন বুক ফর দ্য ল অব স্টর্মস-এ যা প্রথম প্রকাশিত হয়েছে।
হারিকেন
আটলান্টিক মহাসাগরীয় এলাকার ঘূর্ণিঝড়গুলোকে বলা হয় হারিকেন। সাধারণত একটু শক্তিশালী ঝড়কেই (বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৭৪ মাইলের বেশি) হারিকেন নামে ডাকা হয়, যার নামকরণ করা হয়েছে এ অঞ্চলের আদি অধিবাসী মায়াদের ঝড়বৃষ্টির দেবতা ‘হুরাকানের’ নামে।
‘টাইফুন’
অন্যদিকে প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার ঘূর্ণিঝড়কে বলা হয় ‘টাইফুন’। চীনা ভাষায় এর কাছাকাছি শব্দ taaifung বা tai feng, যার অর্থ ‘শক্তিশালী বায়ু’। এছাড়া আরবীয়রাও গ্রিক মিথলজির বায়ুদৈত্য tuphon থেকে ঝড়ের নামকরণ করেছিল ‘তুফান’।
যা বাংলাতেও ব্যবহার হয়। আরবদের কাছ থেকে এ শব্দ এক সময় ইংরেজদের কাছে যায় এবং শেলির প্রমিথিউস আনবাউন্ড বইতে ১৮১৯ সালে প্রথম ‘typhoon’ বানানটি ব্যবহৃত হয়।
আগে বিচ্ছিন্নভাবে নির্দিষ্ট কোনো ঝড়ের নামকরণ করা হলেও সাম্প্রতিককালে প্রতিটি ঝড়কে চিহ্নিত করতে আলাদাভাবে নামকরণ করা হয়। ঘূর্ণিঝড়ের উৎপত্তির যে বেসিনগুলো রয়েছে, প্রতিটি বেসিনে ঝড়ের পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য আলাদা কর্তৃপক্ষ রয়েছে। তারাই পূর্ব থেকে ঝড়ের এ নামকরণ করে থাকেন।
যেমন, উত্তর আটলান্টিক বেসিনে পূর্বাভাসের দায়িত্বে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার। এখানে উৎপন্ন হারিকেনের নাম তারাই দিয়ে থাকে। কাজের সুবিধার জন্য তারা নামকরণের একটি তালিকা আগেই বানিয়ে নিয়েছেন। যেটা বর্ণানুক্রমিকভাবে অনুসরণ করা হয়। অর্থাৎ বছরের প্রথম হারিকেনটির নাম হবে ‘A’ দিয়ে, যেমন: অ্যান্ড্রু।
দ্বিতীয়টি হবে ‘B’ দিয়ে, যেমন: বার্থা। এ রকম ছয় বছরের জন্য তালিকা আগেই বাছাই করা হয়ে থাকে। সেখান থেকে নামগুলো পর্যায়ক্রমিকভাবে দেওয়া হয়। এভাবে ১০১০ সালের তালিকা ব্যবহার হবে ২০১৬ সালে।
তবে কোনো ঘূর্ণিঝড় যদি ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে, তবে সেটা আর তালিকায় পরবর্তী সময়ে ব্যবহার করা হয় না।
২০০৫ সালে হারিকেন ক্যাটরিনা বিপুল ক্ষয়ক্ষতির কারণে বিখ্যাত হয়ে যাওয়ায় এটি নামকরণের তালিকা থেকে বাদ পড়ে।
আগে নারীদের নামে হারিকেনের নামকরণ করা হলেও ১৯৭৯ সাল থেকে প্রথম পুরুষের নাম অন্তর্ভুক্ত হয় এবং বর্তমান তালিকায় সমানভাবে পর্যায়ক্রমে মহিলা ও পুরুষের নাম রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা’র আঞ্চলিক কমিটি। উত্তর ভারত মহাসাগরীয় এলাকায় পূর্বাভাসের দায়িত্বে আছে ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ। বাংলাদেশ, মায়ানমার, ভারত, পাকিস্তান, মালদ্বীপ, শ্রী লংকা, মায়ানমার এবং ওমান বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার একটি প্যানেলের (WMO/ESCAP) সদস্য।
২০০০ সালে এই প্যানেল প্রথম প্রস্তাব করে এ অঞ্চলের ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করার জন্য। এ জন্য প্রতিটি দেশ থেকে ১০টি করে নাম জমা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। যেহেতু বিভিন্ন দেশ তাদের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী নাম দিয়েছে, তাই এখানকার ঝড়ের নামে কোনো বর্ণানুক্রম বা সামঞ্জস্য নেই। কোনো ঝড়ের নাম অগ্নি, আবার কোনোটার নাম নার্গিস। ২০০৪ সালে ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ এ অঞ্চলে প্রথম যে ঘূর্ণিঝড়টির নামকরণ করেছিল, তার নাম ছিল অনিল।
একটি নির্দিষ্ট সময়কালে সৃষ্ট সম্ভাব্য সব ঝড়ের জন্য সদস্য রাষ্ট্রগুলো পূর্বেই নাম প্রস্তাব করে রাখে। একেকটি ঝড় বাস্তবে সৃষ্টি হলে, তালিকা থেকে পর্যায়ক্রমে নাম নির্বাচন করা হয়। ঝড় যেহেতু মৃত্যু ও ধ্বংসের সঙ্গে জড়িত, তাই কোনো নাম পুনরাবৃত্তি করা হয় না।
এশিয়া অঞ্চলে সাম্প্রতিক কয়েকটি ঝড় ও তার নামকরণকারী দেশ হচ্ছে: সিডর (ওমান), নার্গিস (পাকিস্তান), রেশমি (শ্রী লংকা), খাই-মুক (থাইল্যাণ্ড), নিশা (বাংলাদেশ), বিজলি (ভারত), আইলা (মালদ্বীপ)।
সুত্র ঃ উইকিকিপিডিয়া ,
বাংলা নিউজ ২৪ ডট কম
ছবি - গুগল ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।