আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঘোর কলিকাল

আমি কিচ্ছু পারিনা... এক বনে থাকতো এক হাতি । হাতি তো অনেক বনেই থাকে... কিন্তু এই হাতির মন মানসিকতা একটু অন্য ধরনের, অন্য সব হাতিদের মত নয় । সে একটু ভাবুক প্রকৃতির । ও... বলতে ভুলে গেছি হাতিটা কিন্তু ছেলে হাতি এবং প্রেমিক ও বটে, একদিন বিকেলে হাতিটি নদীর পাড়ে হাঁটতে বের হল । আনমনা হয়ে হাঁটতে হাঁটতে অনেক দূরে চলে গেল ।

হঠাৎ সে দেখল মাটিতে খুব ছোট একটা প্রাণী একা একা হাঁটছে । দেখে তো মনে হচ্ছে মেয়ে...হাতিটি তাকে ডেকে জিজ্ঞেস করল ''এই মেয়ে তোমার নাম কি?'' প্রাণীটি বলল, ''আমার নাম পিঁপড়া, তুমি তো অনেক বড় আর সুন্দর তোমার নাম কি?'' হাতি বলল, ''আমার নাম হাতি; পিঁপড়া, তুমি কতই না সুন্দর, কি সুন্দর তোমার ছয়টা পা, তোমার কাজল কালো চোখে তো আমি হারিয়ে যাই । '' হাতির মুখে নিজের প্রশংসা শুনে পিঁপড়া তো লজ্জায় লাল । কথা বলতে বলতে প্রায় রাত হয়ে এসেছে কখন তারা বুঝতেই পারে নি । আকাশে চাঁদ উঠেছে, শরতের মৃদুমন্দ বাতাস বইছে ।

এমন মোহনীয় পরিবেশে কার না মন আকুল হয় । পিঁপড়া গুন গুন করে গান গেয়ে উঠলো অজান্তেই... ''কি সুন্দর রাতি... আমার আকাশে উড় তুমি... তোমার নাম হাতি'' হাতি তো খুশিতে গদগদ । পিঁপড়া বলল যাই আজকে অনেক রাত হয়ে গেছে মা বকবে । হাতি বলল যাও সোনা, কাল এস কিন্তু । পিঁপড়ার কাছে বিদায় নিয়ে হাতি বনে চলে এল ।

সারারাত পিঁপড়ার কথা ভেবে ভেবে তার ঘুম এল না । কখন আবার বিকেল হবে... কখন আবার তার প্রিয়তমা পিঁপড়া কে দেখবে ... এই চিন্তায় সে ছটফট করতে লাগলো । ওদিকে পিঁপড়ারও একই অবস্থা । সেও সারারাত ঘুমাইতে পারে নি । যে পিঁপড়া লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট কখনই বিশ্বাস করত না সেই তারই জীবনে কিনা প্রথম দর্শনে প্রেম হয়ে গেল ! বহু প্রতীক্ষার পরে আবার পরের দিন বিকেলে সেই নদীর পাড়ে তাদের আবার দেখা হল, তারা অনেক প্রেম করল ।

এভাবে প্রতিদিন তাদের চলতে লাগলো তুমুল প্রেমলীলা । বাড়ি ফিরতে ফিরতে পিঁপড়ার প্রতিদিন অনেক রাত হয় । পিঁপড়ার মা তার মেয়েকে কোন কিছু জিজ্ঞেস না করে পিঁপড়ার বাবার সাথে রাতে আলোচনা করে, মেয়েটা বড় হয়ে গেছে বিয়ে দিতে হবে , প্রতিদিন রাত করে বাড়ি ফেরে মেয়েটা, যা দিনকাল পড়েছে, কখন কোথায় কি অঘটন ঘটে, পরে পিঁপড়া সমাজে মুখ দেখানো দায় হয়ে পড়বে । পিঁপড়ার বাবাও বলেন ঠিকই বলেছ পিঁপড়ার মা, মেয়েটার বিয়ে দিতে হবে । পিঁপড়ার বাবা অনেক খুঁজে খুঁজে মেয়ের জন্য ভালো একটা পাত্র জোগাড় করলেন ।

একদিন সন্ধায় মেয়েকে কাছে ডাকলেন । বললেন, '' দেখ মা , আমরা তো বুড়া হয়ে গেছি, তোর ও বয়স হয়েছে , তোর মা আর আমি চাই এবার তুই বিয়ে করে ফেল । '' পিঁপড়া বলল, কিন্তু বাবা... তার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে তার বাবা বললেন, কোন কিন্তু নয় আমি তোর জন্য খুব ভালো একটা পাত্র জোগাড় করেছি । আজ রাতেই সে তার ছবি ইমেইল করে দিবে , আমি তোর বাবা, আমি জানি এই পাত্র কে তোর অনেক পছন্দ হবে । পিঁপড়া চিৎকার করে বলল, আমি এ বিয়ে করব না ।

আমি একজন কে ভালবাসি । পিঁপড়ার মা বলল , ''তো আগে বলিস নি কেন?'' পিঁপড়া বলল , '' তোমরা কি আমাকে আগে বলেছ যে তোমরা আমার জন্য পাত্র ঠিক করতেছ?'' পিঁপড়ার বাবা বললেন, '' ঠিক আছে মা , কাঁদিস না । বল তুই কাকে ভালবাসিস?'' পিঁপড়া বলল, পাশের বনের হাতি কে । পিঁপড়ার বাবা-মা চিৎকার করে বলল, এটা তুই কি বলিস? এ অসম্ভব । তুই এ পথ থেকে ফিরে আয় ।

আমাদের পছন্দ করা ছেলেকেই তোর বিয়ে করতে হবে । পিঁপড়া বলল, '' না... মা... তা আর হয় না , এ পথ থেকে আমি ফিরতে পারবো না । '' মা পিঁপড়ার গালে ঠাস করে একটা চড় দিয়ে বলল, হারামজাদি, তোকে জন্ম দিয়েই আমি ভুল করেছিলাম । সমাজে মান ইজ্জত আর রইল না । '' পিঁপড়া কেঁদে কেঁদে বলল, '' মা, তুমি আমাকে মাফ করো, আমি হাতিকে ভালবাসি , হাতিকে ছাড়া আমার পক্ষে সম্ভব না ।

তাছাড়াও তোমরা তো একটা জিনিস জানো না । '' মা জিজ্ঞেস করলেন, ''কি?'' পিঁপড়া বলল, ''আমি মা হতে যাচ্ছি । আমার পেটে হাতির বাচ্চা । '' ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।