ওই যে দূরে যাচ্ছে দেখা সবুজ সোনার গাঁ,
ওখানটিতে ঘুমিয়ে আছে আমার বাবা মা।
একুশ বছর কাটিয়ে এলাম ভিনদেশেতে গিয়ে,
প্রতিটা ক্ষণ কেটেছে যার সুখের স্মৃতি নিয়ে।
কতবার সে ডেকেছে যে,খোকন ফিরে আয়,
আসতে আমি পারিনি কো বাস্তবতার ঘায়।
পথটা যেন ফুরায় না আজ, কম কি গাড়ির গতি?
চোখের দেখায় স্নেহের সুতায় টান পড়েছে অতি।
দু’চোখ শুধু উঠছে ভিজে নিজের অজান্তে,
বুকের মাঝে সুখের ঘোড়া ছুটছে অনন্তে।
গাঁয়ের মেঠো পথটা যেথায় হাঁটু পানি হত,
পিচ ঢালা তার বুকে গাড়ি চলছে অবিরত।
ফসল ভরা মাঠের শোভা একি রকম আছে,
নতুন কিছু বাড়ি শুধু দেখছি মাঝে মাঝে।
গাঁয়ের মাঝের বাড়িগুলির দৈন্যদশা নাই,
টিনের ঘর আর দালান-কোঠা পাচ্ছে সেথা ঠাঁই।
খালের পাড়ে তেমনি আছে বাদাম গাছের জোড়া।
বিস্তারিত শাখার, ছায়ায় ভালোবাসা মোড়া।
বাবা-মায়ের কবর পাশে দাঁড়াই যখন গিয়ে,
জড়িয়ে আমায় ধরে না কেউ স্নেহের বাধন দিয়ে।
হু হু করা চোখের জলের আওয়াজ শুনতে পাই,
কোথায় এলে হেথায় তোমার আপন যে কেউ নাই!
বুভুক্ষু এই মনটা নিয়ে যেখানেই যাই,
অতীত দিনের সাথে যেন মিল খুঁজে না পাই।
ছেলে-মেয়ের কোলাহল আর মায়েদের চিৎকার,
জানান দিত বাড়িগুলির প্রাণবন্ত তার।
হরেক রকম কাজের ফাঁকে একটু সময় ক’রে,
পাশের বাড়ির যা এর কাছে বারেক আসে ঘুরে।
পানের বাটা নিয়ে যখন বসত মুখো-মুখি,
হাসি-কথা প্রমাণ দিত তারা কত সুখী।
বাড়ি বাড়ি বৌ শাশুড়ির ঝগড়া মাঝে মাঝে,
ননদ বুঝি বেশি পেল ভাবীর বুকে বাজে।
তার মাঝেও সকল কিছু ছিল অতি মধুর,
থেমে থেমে বাজত সেথা ভালোবাসার সুর।
বাচ্চাগুলোর আপন ছিল বাবা-মায়ের চেয়ে,
দাদা-দাদী, কাকা,ফুফু,তাদের ছেলে-মেয়ে।
বাবা-মায়ের কাছে শুলে ঘুম না আসে চোখে,
গল্প শুনে ঘুমিয়ে যেত শুয়ে দাদীর বুকে।
সে সব ছবি এখন দেখি খুঁজে পাওয়া দায়,
কোন ঘরে একা হয়তো পড়ে আছে মায়।
ছেলেরা তার দূরে থাকে, শহর কিংবা গাঁয়ে,
যার যার মত বাস করে, অমিল ভাইয়ে ভাইয়ে। ।
এক কি দুটি বাচ্চা এখন, স্বামী-স্ত্রী দুজন,
দরকার নাই তাদের যেন অন্য আপন জন।
নদীগুলো কলকলিয়ে আজও বয়ে যায়,
ভিড় দেখিনা তাদের বুকে গুন কি পালের নায়।
শস্য ফুলটি লাজুক মেয়ে আজও লাজুক আছে,
চোখ পড়লেই মুখটি লুকায় মটর-লতার নীচে ।
কৃষ্ণচূড়ার লাল কমেনি,জবা,পলাশ ফুলে,
প্রকৃতি সাজায় সিঁথি সিঁদুর যেন তুলে।
স্বর্ণলতা ঘিরে আছে বরই গাছের মাথা,
বৃক্ষটাকে জড়িয়ে আছে সবুজ লতা-পাতা।
মানুষগুলো পর হল সব কেন এমন করে!
কারো পরে কেউ যেন আর নির্ভরিতে না’রে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।