টাকার উৎস সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন করবে না জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)—এমন সুযোগ রেখে বিনিয়োগ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে এই টাকা দিয়ে শুধু ফ্ল্যাট, প্লট বা জমি কেনা যাবে।
ফ্ল্যাট, জমি বা প্লটের শুধু ক্রয়মূল্যের ওপর নির্দিষ্ট পরিমাণ কর দিলেই বিনা ব্যাখ্যায় তা গ্রহণ করবে এনবিআর। এর মানে হলো, কালোটাকা সাদার সুযোগ নেওয়া যাবে ফ্ল্যাট, প্লট বা জমি কিনে।
তবে দুটি শর্ত আরোপ করা হয়েছে।
প্রথমত, বিনিয়োগকৃত অর্থ অবৈধ উপায়ে উপার্জন করা হলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। দ্বিতীয়ত, অপরাধ সংঘটনের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ বিনিয়োগ করা যাবে না। অবশ্য এ ধরনের শর্ত প্রতিবারই থাকে। এ জন্য পৃথকভাবে একটি ঘোষণা দিতে হয়।
কালোটাকা সাদা করতে জমি বা প্লট কেনার ক্ষেত্রে প্রকৃত মূল্য বা দলিলমূল্যের ১০ শতাংশ অর্থ কর হিসেবে দিলেই চলবে।
জমি বা প্লটের মালিককে বার্ষিক আয়কর বিবরণী জমা দেওয়ার সময় তা উল্লেখ করলেই চলবে। সর্বশেষ ২০০৭-০৮ অর্থবছরে জমি বা প্লট কেনার সময় সাড়ে ৭ শতাংশ হারে কর নিয়ে এ সুযোগ দেওয়া হয়েছিল।
অন্যদিকে বর্তমান সরকারের প্রথম বাজেটে (২০০৯-১০) ফ্ল্যাট ও বাণিজ্যিক ফ্লোর কেনায় কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। তিন বছর পর আবারও সেই সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।
২০০ বর্গমিটারের বেশি আয়তনের কোনো ফ্ল্যাট বা বাড়ি কিনতে গুলশান, বনানী, বারিধারা, মতিঝিল, দিলকুশা এলাকায় প্রতি বর্গমিটারে সাত হাজার টাকা কর দিতে হবে।
আর এসব এলাকায় ২০০ বর্গমিটারের কম আয়তনের ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে করের হার প্রতি বর্গমিটারে পাঁচ হাজার টাকা। এ ছাড়া ধানমন্ডি, ডিওএইচএস, মহাখালী, লালমাটিয়া, উত্তরা, বসুন্ধরা, ক্যান্টনমেন্ট, কারওয়ান বাজার, বিজয়নগর, সেগুনবাগিচা, নিকুঞ্জ, চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ, খুলশী, আগ্রাবাদ ও নাছিরাবাদ এলাকায় ২০০ বর্গমিটারের বেশি ফ্ল্যাটে কর দিতে হবে প্রতি বর্গমিটারে পাঁচ হাজার টাকা। আর এসব এলাকায় এর চেয়ে কম আয়তনের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গমিটারে চার হাজার টাকা কর দিতে হবে। সিটি করপোরেশনের অন্য এলাকায় ২০০ বর্গমিটারের কম আয়তনের ফ্ল্যাট বা বাড়ি কিনতে প্রতি বর্গমিটারে দুই হাজার টাকা কর দিতে হবে। আর এর চেয়ে বেশি আয়তনের ফ্ল্যাট বা বাড়ি কিনতে প্রতি বর্গমিটারে তিন হাজার টাকা কর দিতে হবে।
এ ছাড়া জেলা সদরে পৌরসভা এলাকায় ২০০ বর্গমিটারের কম আয়তনের ফ্ল্যাট বা বাড়ি কিনতে প্রতি বর্গমিটারে এক হাজার টাকা কর দিতে হবে। আর ২০০ বর্গমিটারের কম হলে প্রতি বর্গমিটারে দেড় হাজার টাকা কর দিলেই হবে। আর উপজেলাসহ অন্য এলাকার ক্ষেত্রে ২০০ বর্গমিটার পর্যন্ত এবং এর বেশি আয়তনের ফ্ল্যাট বা বাড়ি কেনার ক্ষেত্রে যথাক্রমে ৭৫০ টাকা ও এক হাজার টাকা কর দিতে হবে।
সর্বশেষ ২০০৯-১০ অর্থবছরে ফ্ল্যাট ও বাণিজ্যিক ফ্লোর কেনায় কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। সে সময় ঢাকা ও চট্টগ্রামের অভিজাত এলাকায় ১০০ বর্গমিটারের কম ফ্ল্যাট বা ফ্লোরে প্রতি বর্গমিটারে ৮০০ টাকা, ১০০ থেকে ২০০ বর্গমিটারের ফ্ল্যাটে প্রতি বর্গমিটারে এক হাজার টাকা, ২০০ বর্গমিটারের বেশি ফ্ল্যাটে প্রতি বর্গমিটারে এক হাজার ৫০০ টাকা কর দেওয়ার বিধান করা হয়েছিল।
একই অভিজাত এলাকার বাইরে সমপরিমাণ আয়তনের ফ্ল্যাটে করের পরিমাণ যথাক্রমে ৪০০ টাকা, ৬০০ টাকা ও এক হাজার টাকা করা হয়েছিল।
এ ছাড়া প্রচলিত হারে আয়কর দেওয়ার পাশাপাশি তার ওপর ১০ শতাংশ হারে কর দিয়ে বৈধভাবে উপার্জিত আয় প্রদর্শনের সুযোগ অব্যাহত রয়েছে।
প্রসঙ্গত, স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত ১৮ বার কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হলো। কিন্তু কোনোবারই খুব একটা কালোটাকা সাদা হয়নি। সর্বশেষ হিসাবমতে, ১৩ হাজার ৩৭৪ কোটি কালোটাকা সাদা হয়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।