নিজেকে চিনতে চাই..... যেতে হবে অনেক দূর..... অসীম গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা..... ২৭ অক্টোবর ছিল পবিত্র ঈদুল আজহার রাতে কোরবানী হয়ে গেলেন ১২২জন আদম সন্তান। হত দরিদ্র ১২২জন আদম সন্তানের কোরবানী হওয়া কোন শোকাবহ গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ নয়। তাই মিডিয়ার সকল কান্না এখনও আমেরিকার স্যান্ডিতে মৃত ৯৮জনকে ঘিরে। তাদের চামড়া সাদা, তারা হত দরিদ্র নয়, তাদের জীবন মূল্যবান। সেই তুলনায় ১২২ জনের খবর ছেপে সংবাদপত্রের পাতা নষ্ট করা বা টিভি খবরের কয়েক সেকেন্ড ব্যয় করা অপচয় মাত্র।
৯৮ জনের জন্য ব্যপক আহাজারির পাশাপাশি ১২২ জনের জন্য সামান্য শোক প্রকাশ করতে পারি নাই, আমরা এতটাই দৈন্য!
আমাদের দেশে তৃণমূল পর্যন্ত মানবপাচারকারী চক্র অত্যন্ত শক্তিশালী। তারা স্থানীয় প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়েই মাত্র বিশ হাজার টাকার বিনিময়ে জাহাজে করে স্বচ্ছলতাকামী দরিদ্র মানুষদের মালয়েশিয়া নিয়ে যাবার নিশ্চয়তা দিয়েছিল। এই চক্র ২৭শে অক্টোবর সন্ধ্যার পর কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার শাহপরীর দ্বীপ পশ্চিমপাড়া ঘাট দিয়ে ১১০ জন এবং কাটাবনিয়া ঘাট দিয়ে সাবরাং ঝিনাপাড়ার ৭ জন, ডেইলপাড়ার ৪ জন, মহেষখালী উপজেলার ৮ জন, পুরানপাড়া ও কাটাবনিয়ার ৬ জনসহ মোট ১৩৫ জনকে মাছ ধরার ছোট ট্রলারে তুলে সমু্দ্রের গভীরে নিয়ে যায়। সেখানে তাদের জাহাজের পরিবর্তে মালয়েশিয়াগামী বড় ট্রলারে তুলে দেয়া হয়। জাহাজের পরিবর্তে ট্রলারে তুলে দেয়ার প্রতিবাদ করলে চক্রের লোকজন তাদের মারধর করে।
বড় ট্রলারটি কিছু দূর যেতেই তলা ফেটে পানিতে ডুবতে শুরু করে। ইঞ্জিনের সাহায্যে পানি ফেলে ট্রলারটিকে ভাসমান রাখার চেষ্টা বিফল হয়। তখন ট্রলারটি টেকনাফে ফেরত আসার পথে রাত ৩:০০টার দিকে সেন্টমার্টিনের কাছে বঙ্গোপসাগরের ৮/১০ বাইন এলাকায় ডুবে যায়। ট্রলারটি ডুবে যায় ১৩৫জন আদম সন্তানকে নিয়ে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী এদের মাঝে মাত্র ছয়জন জীবন বাঁচাতে সক্ষম হয়েছেন।
মর্মান্তিক বিষয় হচ্ছে রবিবার ঘটা ঘটনাটি প্রশাসন জানতে পারে বুধবারে। জানতে পারার পরে প্রশাসনের পক্ষে কোন উদ্ধার তৎপরতা চালানো হয় নাই। ছয়জন ফেরত এলেও বাকীদের কোন খোঁজ পাওয়া যায় নাই। বিবিসি’র তথ্য অনুযায়ী “স্থানীয় জেলেদের উদ্ধৃত করে বিজিবির একজন কর্মকর্তা বলছেন সাগরে তারা মৃতদেহ ভাসতে দেখেছেন। ” এবং “টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামসুল ইসলাম জানান, তারা জানতে পেরেছেন অধিকাংশ যাত্রীই ছিলেন বর্মার রোহিঙ্গা মুসলিম সম্প্রদায়ের লোক।
বাকি সদস্যরা বাংলাদেশের কক্সবাজার ও টেকনাফের বাসিন্দা। ” এই সংবাদ পড়ে লজ্জিত হলাম এই কারণে যে বিজিবি কর্মকর্তা বলেন নাই তারা ভাসমান লাশ উদ্ধারে কি কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন আর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান নাই গত দুই তিন বছর ধরে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এই রুটটি থাইল্যান্ড এবং মালয়েশিয়ায় আদম পাচারের জন্য ব্যবহৃত হলেও সাধারন লোকদের সচেতন করতে স্থানীয় প্রশাসন কোন ভূমিকা পালন করেছে।
এই দূর্ঘটনাটি না ঘটলে বিষয়টি সম্পূর্ণ চোখের আড়ালে থেকে যেত। যখন ১৩৫ জনের একটি দল মাথাপিছু মাত্র বিশ হাজার টাকার বিনিময়ে জাহাজে করে মালয়েশিয়া যেতে রাজী হয় এবং জাহাজ না দেখে প্রতিবাদ করে তখন স্বাভাবিকভাবে ধরে নিতে হবে বিশ হাজার টাকার বিনিময়ে জাহাজে করে মালয়েশিয়া যাওয়ার ঘটনা তাদের কাছে নতুন নয়। আর এটাও অবিশ্বাস্য যে স্থানীয় প্রশাসন, কোস্ট গার্ড এবং বিজিবি বিষয়টি অবহিত নয়।
এখন পর্যন্ত ১২২ জনের কোন সঠিক তথ্য পাওয়া যায় নাই। প্রিন্ট মিডিয়া এবং টিভি মিডিয়ার আচরণ দু:খজনক এবং বৈষম্যমূলক। হয়তো ১২২ জনই কোরবানী হয়েছেন মানবপাচারকারী চক্রের ফাঁদে পা দিয়ে। কিন্তু এই ফাঁদে পা দেয়ার জন্য সমান দায়ী স্থানীয় প্রশাসনসহ সম্পৃক্ত অন্যান্য বিভাগ।
সামান্য হত দরিদ্র লোকদের জন্য শোক করা অর্থহীন।
তারা কোন রাজনৈতিক দলের অন্ধ হিংস্র কর্মী বা কোন জাতীয় নেতার তথাকথিত আর্দশের সৈনিক হলে মিডিয়া যন্ত্র তৎপর হত। প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেত্রী এবং তাদের পোষা রাজনৈতিক দল ও নেতাদের শোকের মাতমে ভারী হয়ে উঠতো আকাশ বাতাস। দেশের ১২২জনকে ভুলে মুরুব্বী দেশের আটানব্বই জনের জন্য মায়া্কান্নায় বৈষম্যের কথা তুলা বাতুলতার বেশী কিছু নয়। কারণ আমাদের রাজনীতিকদের কাছে আমরা ভোটারের বেশী কিছু নই। আমাদের প্রয়োজন শুধু নির্বাচনের সময়।
এছাড়া আমরা মূল্যহীন, আমাদের জীবন মূল্যহীন। সেটা ট্রলার ডুবে মৃত হতদরিদ্র ১২২ জনের বেলায় যতটা সত্যি আমাদের সাধারন জনগনের বেলায় ততটাই সত্যি। আমাদের জীবন খরচ হয়ে যায় যাক, আমাদের রাজনীতিক এবং তাদের পুত্র কণ্যাগন নিরাপদে বেঁচে থাক। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।