আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রেমা-কালেঙ্গার জঙ্গলে - ১

ঘন অন্ধকার। গাঢ় কুয়াশায় ঢাকা চারপাশ। মোটরসাইকেলের হেডলাইডের স্বল্প আলোয় ফাকা রাস্তা দিয়ে ছুটে চলছি। পেছনের বাইকের হেডলাইট অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী। ঘন কুয়াশার সাদা চাদরে সেই হেডলাইটের আলোয় সৃষ্ট আমাদের দৈত্যকায় ছায়া - ছুটে চলছে আমাদের আগে আগে।

ছায়ার পিছু পিছু আমরা চারজন এগিয়ে যাচ্ছি রেমা-কালেঙ্গা রিজার্ভ ফরেস্টের ইকো কটেজের দিকে। তিনদিন ধরে পরিকল্পনা চলছে। পরিকল্পনা হল কোথাও যেতে হবে। কিন্তু কোথায় তা নির্দিষ্ট নয়। একদিনের ট্যুরে গেলে দোহার নওয়াবগঞ্জ।

রাত থাকলে শেরপুর। শেরপুর দিয়ে ঢুকে জামালপুর দিয়ে বের হব। হাইকিং। শেরপুরে যদি রাত্রে থাকতেই হয়, তবে রাতারগুল নয় কেন? হক কথা। রাতারগুলই কনফার্ম।

সকালে ফোন দিয়ে জানা গেল - রাতারগুলে এখন আর পানি নেই। তাহলে শেরপুর কনফার্ম। কিন্তু যে পথে হাইকিং করার প্ল্যান, সেই পথে আন্যরা ঘুরে এসেছে তিনদিনে, আমরা একদিনে হেঁটে মরবো নাকি? রেমাকালেঙ্গা ওয়াইল্ড স্যাংচুয়ারিতে গেলে কেমন হয়? শুক্রবার সকালে নামটা শুনে বানান কি হবে সেটাও বুঝতে পারি নি। তারপর ঘন্টা দুয়েক ওয়েব ঘাটাঘাটি করে বিশ পঁচিশটা ফোন শেষে পৌনে তিনটায় ফকিরাপুলে হাজির। যার মাথা থেকে আইডিয়াটা এল, সেই মাহাদী পৌছাতে দেরী করে ফেলল দেড় ঘন্টা।

তারপর তিনটা চল্লিশের বাসে চললাম আমরা শায়েস্তাগঞ্জ। কোথায় যাচ্ছি তার একটা পরিচয় দেয়া দরকার। হবিগঞ্জ জেলার চুনারিঘাটে প্রাকৃতিক দর্শনীয় স্পটের মধ্যে সাতছড়ি রিজার্ভ ফরেস্ট বেশ জনপ্রিয়। কাছাকাছি আছে রেমা-কালেঙ্গা রিজার্ভ ফরেস্ট। বাংলাদেশের সবচে বড় প্রাকৃতিক পাহাড়ী বনাঞ্চল এটা, আর বনভূমি হিসেবে সুন্দরবনের পরেই এর অবস্থান, আয়তন প্রায় ১৭৯৫ হেক্টর।

১৯৪০ সালের দিকে বিস্তার লাভ শুরু করলেও অভয়ারণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায় ১৯৮২ সালে, ১৯৯৬ সালে বনের সম্প্রসারন করা হয়। বনবিভাগের কালেঙ্গা রেঞ্জের চারটি বিটের (কালেঙ্গা, রেমা, ছনবাড়ী আর রশিদপুর) মধ্যে রেমা, কালেঙ্গা আর ছনবাড়ী বিস্তীর্ণ জঙ্গল নিয়ে রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য গঠিত। এটি বেশ কয়েকটি পাহাড়-টিলা নিয়ে গঠিত। এখানকার পাহাড়গুলোর সর্বোচ্চ উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৬৭ মিটার। ওয়েব ঘাটাঘাটি করে জানা গেল, দুভাবে পৌছানো যায় এই অঞ্চলে।

শ্রীমঙ্গল থেকে জিপে করে অথবা শায়েস্তাগঞ্জে নেমে চুনারিঘাট হয়ে। আমরা শায়েস্তাগঞ্জে নেমে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। চুনারিঘাটে হোটেলে রাত থেকে একদম ভোরে জঙ্গলে ঢুকবো, সারাদিন ঘুরে সন্ধ্যায় বের হবো - এমন পরিকল্পনায় বাগড়া দিল মাহদী। সে জঙ্গলের লাগোয়া ইকো-কটেজে রাত কাটানোর প্রস্তাব দিল। খরচ রুম প্রতি ১০০০ টাকা, আমাদের জন্য একটু বেশীই।

কিন্তু জঙ্গলে ক্যাম্প করে যখন থাকতে পারছি না, এটাও বন্ধ করবো নাকি। সুতরাং, ওকে। ইকো কটেজের মালিকের নাম আব্দুর রহমান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তার পূর্বপুরুষ নোয়াখালী থেকে এই অঞ্চলে এসেছিলেন। আবদুর রহমান ভাইয়ের কন্ঠে নোয়াখালীর উচ্চারন টের পাওয়া যায়।

তার ইকো কটেজে দশজন থাকার ব্যবস্থা, তবে আরও বেশী থাকা যায়। কটেজটা সুন্দর, গোছানো। বাথরুমে কমোড-হ্যান্ড ওয়াশার, বাতি-পাখা জ্বলে সোলারে। জেনারেটরও আছে - মোবাইল, ক্যামেরা চার্জ দেয়ার জন্য। জঙ্গলে রাতের নিস্তব্ধতা উপভোগের জন্য যে আগ্রহ ছিল তা দূর হয়ে গেল কটেজে পৌছে।

জঙ্গলে নয়, জঙ্গল সংলগ্ন কালেঙ্গা বাজারের শেষে তার ঘর, পাশেই কালেঙ্গা বিটের প্রবেশ পথ। ঢোকার আগেই আগ্রহ ফুরিয়েছিল, তাই বের হওয়া হল না। রাতের নিস্তব্ধতা ফুড়ে বিকট শব্দে জেনারেটর চলতে লাগল। (আগামী পর্বে ছবি। রাতে ছবি তুলি নাই) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।