দেখা যত ছবি, শোনা যত শব্দ, হৃদয়ের সব উপলব্ধি, আর যত এলোমেলো ভাবনা
গনি মিয়া আজকে ব্যাপক খুশি, খুশির কারন ও আছে বটে। লোক সে তেমন হোমরা চমরা কিছু না, সামান্য ট্রাকের হেল্পার। তবে তাঁর বস মানে ট্রাকের ড্রাইভার একজন ডাকসাইটে টাইপের। আপনারা ভেবে হয়ত অবাক হচ্ছেন ট্রাক ড্রাইভার আবার ডাকসাইটে হয় কিভাবে, যে দেশে গরু ছাগল চিনলেই হয় সেখানে কিভাবে এই স্ট্যাটাস?! কিন্তু কথা থাকে।
গনি মিয়া জানে তাঁর ড্রাইভার বস তথা আবুল মিয়া ওরফে আবুইল্লা একটা জিনিস! ১ টাকার ট্রাক চালায়া হাজার টাকার মজুরি দেওয়া আর লাখ টাকার লাভ উঠানো তাঁর দুই আঙ্গুলের খেল!!
গনি মিয়া নিতান্তই সহজ সরল মানুষ, এত হিসাব নিকাশ সে বোঝে না, বঝেনা কাগজে কলমের হিসাব আর বাস্তবের হিসাবে কেন এত ফারাক।
তা তাঁর বোঝার দরকার টাই বা কি? সে তো বেতন ঠিক ই পাচ্ছে, তাঁর ঘর সংসার ঠিকঠাক। মালিকে লাভ থেকে বেতন দিক আর পকেট থেকে কি আসে যায়। তবু তাঁর উৎসুক মনে প্রশ্ন দানা বাধে। ১ টাকার চালানের রহস্যখান কোথায়?
আবুল মিয়ার সাথে নেতাদের ভাল যোগাযোগ আছে এমনটাই জানে গনি মিয়া, ভাবে হয়ত সেই হিসাবেই এত কিছু পায়। তবে সামনা সামনি সে কিছু জানেনা, নিছক ধারনাই সেটা।
তাছাড়া ভাল লোক বলে মালিক তাকে বেশ ছাড় দেয়, অনেক সময় কি বিশেষ কাজ(গনি মিয়া শুনেছে কাজটা বেশ কষ্টের) মালিক তাকে দিয়ে ঠিক করাতে চায়না। সেই দিনের চালানে অন্য লোকেরাই মালিকের সাথে যায়।
তা হটাত একদিন কয়েকজন স্টাফ না থাকায় গনি মিয়ার দাক পড়ে। আবুল মিয়া কয়- "তোমারে দিয়া এত খাটনির কাম করাইতে চাইনা আমি, তয় আইজকা লোক ও কম, চল দেখি কি হয়"।
- ওস্তাদ কি যে কন, আমি কি আপ্নের লগে জাইনা নাকি?! এ এর এমন কি
- না রে, তরে এই রকম কামে আগে লইনাই, এইখানে মাল দুইবার আনলোড দিতে হয়! ব্যাপক খাটনি রে
গনি মিয়া মনে হাল্কা টাসকি খায়, মাল তো নামায় একবার ই, এইখানে দুইবার ক্যান? এই কারনেই ওস্তাদ আগে তারে নেইনাই।
ওস্তাদ তো ব্যাপক ভালা মানুষ, কি কামে যে লোক তারে আবুইল্লা ডাকে!
মাল উঠছে ট্রাক বোঝাই, গনি মিয়ার হাতে মালামালের সব লিস্টি। সব ই ঠিকঠাক। যাত্রা শুরু, এগিয়ে চলছে ট্রাক। গনি মিয়া এই রাস্তায় অনেকবার যাত্রা করেছে যদিও আজ গন্তব্য আলাদা, তবু রাস্তা তাঁর অচেনা না। হটাত ট্রাক রাস্তা বদল করে ভিন্ন পথে চলতে থাকে, গনি মিয়া বুঝতে পারেনা কি কারন, অবাক হয়।
তবে ওস্তাদেই যখন আছে তখন চিন্তা কি!
ট্রাক এসে থামে কোন এক গুদামঘরের সামনে, টিনের গুদামঘর। ভেতরে ঢুকে তাঁরা সবাই মিলে। গনি মিয়া দেখে ঘরটা অনেকটা সেই জিনিস দিয়েই ভর্তি যা তাঁরা আজকে ট্রাকে নিয়ে আসছে, হিসাব তো মিলে না। ওস্তাদ বলে- "ঐ গনি কইরে! এই কাগজে যা আছে সব নামায়া এইহানে রাখ"! গনি প্রথমটায় বুঝতে পারেনা, ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। পরে জবাব দেয়- "ওস্তাদ এইগুলা অইহানে নামানর কথা আছিল না?"
- তরে যা কইছি কর, ওইটা আমি দেহুইম
- ঠিক আছে, যা কন
মাল নামায়া ট্রাক প্রায় অর্ধেক খালি, কামলারা বইসা কালকের ম্যাচে বিরাট খালির সেঞ্চুরি নিয়া আলোচনা করতেছে।
গনি মিয়ার তাতে মন বসেনা, সে ভাবে সাহেবদের কাছে ওস্তাদ জবাব কি দিবে!
ট্রাক পৌঁছল গন্তব্বে। মাল আনলোড ও শেষ, ওস্তাদ ভিতরে গেছে কথা সেরে পেমেন্ট নিতে। হাসিমুখে বেরল ওস্তাদ আর তাঁর সাথে কিছু ভদ্রলোক। গনির আসঙ্কা উধাও! এ দেখি কঠিন ব্যাপার, আধা ট্রাক মাল না পাইলেও তাঁরা ঠিক ই হাসতেছে
আবুল মিয়া বলে- "কেমন দেখলি রে গনি, পারবি আরও এমন?"
- এ আর এমন কি ওস্তাদ, কিন্তু আফনে যে এত কম মাল দিলেন তাও হ্যাঁরা কিছুই কইলনা! আফনে আসলেই বস
ওস্তাদ দন্ত বিকশিত হাসি দেয় গনি মিয়ারে বখসিস দিয়ে বিদায় করে।
বাড়ির পথে হাঁটে গনি মিয়া, আইজকা সে বুঝছে কি দিয়া ১ টাকার ট্রাক চালায়া হাজার টাকার মজুরি দেওয়া আর লাখ টাকার লাভ উঠানো যায়!
সব ই খেল এইহানে, খেলার সামগ্রি তাঁর মত জনগন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।