সূত্র হতে পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন
আমিষজাতীয় খাবার শরীর গঠন, পুষ্টিসাধন এবং দেহ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে থাকে। প্রাণিজ আমিষ বা প্রথম শ্রেণীর আমিষের একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হলো মাংস, সাধারণভাবে যেসব মাংস কাঁচা অবস্থায় দেখতে লাল, এমনকি রান্নার পরও যে মাংস সাদা হয় না সেগুলো লাল মাংস বা রেড মিট নামে পরিচিত। বেশির ভাগ বয়স্ক স্তন্যপায়ী প্রাণীর মাংস এবং কিছু পাখির (যেমন_হাঁসের) মাংস লাল।
লাল মাংসের উপকারিতা
* লাল মাংসে প্রচুর পরিমাণে জিঙ্ক থাকে, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে থাকে। জিঙ্কের অভাবে শরীরের বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং ক্ষত শুকাতে দেরি হয়।
* লাল মাংসে রয়েছে প্রচুর আয়রন বা লৌহ। এটি রক্তের হিমোগ্লোবিন তৈরি করে। শরীরে অক্সিজেন এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড পরিবহনে সাহায্য করে।
* প্রাণিজ আমিষের গুরুত্বপূর্ণ উৎস লাল মাংস।
* লাল মাংসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি থাকে, যা স্নায়ুকোষকে রক্ষা করে এবং সচল রাখে।
* লাল মাংসের ফসফরাস হাঁড় এবং দাঁতের উল্লেখযোগ্য উপাদান।
লাল মাংসের বিপজ্জনক দিক
* আমেরিকান ইনস্টিটিউট ফর ক্যান্সার রিসার্চ এবং বিশ্ব ক্যান্সার গবেষণা ফান্ডের মতে, লাল মাংস মলাশয় এবং মল নালির ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
* অতিরিক্ত লাল মাংস গ্রহণ করলে খাদ্যনালি, ফুসফুসে অগ্ন্যাশয়, পাকস্থলী ও স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই প্রতিষ্ঠান দুটি সপ্তাহে ৩০০ গ্রামের (মাঝারি আকৃতির চার-পাঁচ টুকরোর) বেশি লাল মাংস গ্রহণ প্রয়োজন নেই বলে অভিমত দেয়।
* প্রচুর পরিমাণে সম্পৃক্ত চর্বি থাকায় লাল মাংস হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
* সম্পৃক্ত চর্বিযুক্ত খাবার ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স তৈরি করে। তাই যারা ইনসুলিন নিয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখেন তাদের জন্য লাল মাংস ক্ষতিকর হতে পারে।
* অতিরিক্ত লাল মাংস খেলে রক্তনালির পুরুত্ব বেড়ে যায়, ফলে একিউট করোনারি সিনড্রোম এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে।
* এক গবেষণায় দেখা যায়, যারা সপ্তাহে এক দিন লাল মাংস খেয়ে থাকে তাদের চেয়ে যারা প্রতিদিন লাল মাংস খায় তাদের হৃদরোগে মৃত্যুর ঝুঁকি শতকরা ৬০ ভাগ বেশি।
* লাল মাংস টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায় এবং প্রস্রাবে অ্যালবুমিন প্রোটিনের উপস্থিতি বাড়ায়।
* লাল মাংস রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ ও শরীরের ওজন বাড়ায় এবং স্থূলতা জন্ম দেয়।
* নিয়মিত লাল মাংস খেলে উচ্চ রক্তচাপ এবং বাত রোগ বাড়ে।
* আমেরিকান ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশনের মতে, নিরামিষ ভোজন মলাশয়ের ক্যান্সার, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, কিডনির রোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং স্থূলতা উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে দেয়।
নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে বলা হয়েছে, অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার তাৎক্ষণিকভাবে নিকট স্মৃতি হ্রাস এবং কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়। যদিও নতুন এই গবেষণার কাজটি ইঁদুর এবং কিছু মানুষের ওপর চালানো হয়েছিল।
তা সত্ত্বেও ড. মুরে এ সম্পর্কে বলেন, তিনি এখনো গবেষণাকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর মতে, ফলাফল খুব সম্ভবত একই রকম হবে। তিনি ব্যাপারটিকে এভাবে ব্যাখ্যা করেন_অতিরিক্ত চর্বি শরীরে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স তৈরি করে; অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে মানবশরীর গ্লুকোজ ব্যবহার করতে অসমর্থ, যা মস্তিষ্কের ক্ষমতা হ্রাস করে। তা ছাড়া অতিরিক্ত চর্বি দেহের বিপাক ক্রিয়ার সামর্থ্যকে কমিয়ে দেয়। ফলে কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়।
তাহলে মাংস কিভাবে খাব
এত সব ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও স্বাস্থ্যের ওপর মাংসের উপকারী দিক মাথায় রাখতে হবে। মাংস প্রাণিজ আমিষের গুরুত্বপূর্ণ উৎস। তাই সবার খাদ্যতালিকা থেকে লাল মাংস সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করে নেওয়া ঠিক নয়।
প্রথমত, লাল মাংস প্রায়ই নয়, মাঝেমধ্যে খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। বিশ্ব ক্যান্সার গবেষণা ফান্ডের মতে, কোনো অবস্থায়ই সপ্তাহে গড়ে এক পোয়ার বেশি লাল মাংস খাওয়া উচিত নয়।
দ্বিতীয়ত, মাংসের তৈলাক্ত বা চর্বি অংশ কেটে বাদ দিতে হবে।
তৃতীয়ত, হরমোন ইনজেকশন দিয়ে বড় করা পশুর মাংস গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
চতুর্থত, ভালোভাবে সিদ্ধ করে মাংস খেতে হবে।
একটি ব্যাপার লক্ষণীয় তা হলো, অনেক সময়ই একবারে বেশি খাওয়া হয়। এটি খাবার পরিপাক বা হজম ক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে।
কোষ্ঠকাঠিন্য, পেট ব্যথা ও ডায়রিয়া হতে পারে। তাই উচিত হবে ঘন ঘন এবং অল্প খাওয়া, নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাস শরীর থেকে চর্বি কমিয়ে দেয়। স্বাস্থ্যকর ও সহজপাচ্য খাবার শরীরকে করে তোলে কর্মক্ষম ও সুন্দর।
লেখক ডা. মিনহাজ উদ্দিন আহমেদ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।