আমি কিছুই কইবার পারুম না এলো ত্যাগ ও আনন্দের কোরবানির ঈদ। এ দিনে ঈদের নামাজ শেষে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশে পশু কোরবানি করেন সামর্থ্যবান মুসলমানরা। ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে মুসলিম জাহান।
ঈদুল আজহার সঙ্গে পবিত্র হজের রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। বৃহস্পতিবার পবিত্র নগরী মক্কার অদূরে আরাফাতের ময়দানে সমবেত হওয়ার মধ্য দিয়ে বিশ্বের প্রায় ৩০ লাখ মুসলমান হজ পালন করেছেন।
স্থানীয় সময় অনুযায়ী, শুক্রবার সৌদি আরবে ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়েছে। হাজিরা মিনায় অবস্থান করে পশু কোরবানিসহ হজের অন্যান্য কার্যাদি সম্পাদন করছেন।
ঈদুল আজহা মুসলিম মিল্লাতের পিতা হজরত ইবরাহিম (আ.) ও তার পুত্র হজরত ইসমাইলের (আ.) সঙ্গে সম্পর্কিত। হজরত ইবরাহিম (আ) স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে ছেলে ইসমাইলকে আল্লাহর উদ্দেশে কোরবানি করতে গিয়েছিলেন। আসলে আল্লাহর পক্ষ থেকে এ আদেশ ছিল হজরত ইবরাহিমের (আ) জন্য পরীক্ষা।
তিনি ছেলেকে জবাই করার সব প্রস্তুতি নিয়ে সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। সঙ্গে সঙ্গে ছেলে ইসমাইলের পরিবর্তে পশু কোরবানি করার নির্দেশ আসে আল্লাহর পক্ষ থেকে। সেই ঐতিহাসিক ঘটনার স্মৃতি ধারণ করেই হজরত ইবরাহিমের (আ) সুন্নত হিসেবে পশু জবাইয়ের মধ্য দিয়ে কোরবানির বিধান এসেছে ইসলামি শরিয়তে। ইসলামি শরিয়তে সামর্থ্যবানদের জন্য পশু কোরবানি করা ওয়াজিব। আল্লাহর উদ্দেশে কোরবানি করার পরম আনন্দ থেকেই পালিত হয় ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ, যা বকরা ঈদ নামেও বহুল পরিচিত।
জিলহজ মাসের ১০ তারিখে এ ঈদ উদযাপিত হয়।
ইসলামে কোরবানি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। পবিত্র কুরআনে সুরা কাউসারে এ ব্যাপারে বলা হয়েছে, ‘অতএব আপনার পালনকর্তার উদ্দেশে নামাজ পড়ুন এবং কোরবানি করুন। ’ সুরা হজে বলা হয়েছে, ‘কোরবানি করা পশু মানুষের জন্য কল্যাণের নির্দেশনা। ’ কোরবানির মূল উদ্দেশ্য তাকওয়া বা খোদাভীতি।
এ প্রসঙ্গে কুরআনে বলা হয়েছে, ‘এগুলোর রক্ত ও গোশত আমার কাছে পৌঁছায় না। কিন্তু তোমাদের তাকওয়া পৌঁছে যায়। ’ রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ঈদুল আজহার দিন কোরবানির চেয়ে আর কোনও কাজ আল্লাহর কাছে অধিক পছন্দীয় নয়। ’ অন্যত্র বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকার পরও কোরবানি দিল না সে যেন আমার ঈদগাহে না যায়। ’
বিভিন্ন বর্ণনা থেকে জানা যায়, পৃথিবীতে মানবজাতির সূচনা থেকেই কোরবানির প্রচলন।
হজরত আদমের (আ.) দুই ছেলে হাবিল ও কাবিল সর্বপ্রথম কোরবানি দিয়েছিলেন।
এ প্রসঙ্গে কোরআনে বলা হয়েছে , ‘আপনি তাদের আদমের দুই ছেলের বাস্তব অবস্থা পাঠ করে শোনান। যখন তারা উভয়ে কিছু কোরবানি করেছিল। তখন তাদের একজনের কোরবানি গৃহীত হয়েছিল এবং অপর জনেরটি গৃহীত হয়নি। ’ (সুরা মায়েদা : ২৭) তবে ইসলামে যে কোরবানির বিধান তা হজরত ইবরাহিমের (আ) সঙ্গে সম্পর্কিত।
আজ থেকে প্রায় ৫ হাজার বছর আগের ঘটনা। ৮৫ ছর বয়সে আল্লাহ তাকে সন্তান দান করলেন। আবার আল্লাহর পক্ষ থেকে সে সন্তানকেই কোরবানি করার নির্দেশ এলো স্বপ্নযোগে। পরীক্ষায় পিতা-পুত্র দু’জনেই উত্তীর্ণ হলেন। একজন নিজ পুত্রকে কোরবানি করার জন্য, আরেকজন নিজে কোরবানি হওয়ার জন্য মাথা নুয়ে দিয়ে আল্লাহর নির্দেশ পালনের চরম পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করলেন।
আল্লাহর সন্তুষ্টিই কোরবানির মূল উদ্দেশ্য। তার পথে প্রয়োজনে জীবন ও সবচেয়ে প্রিয়বস্তু উৎসর্গের জন্য তৈরি হওয়ার শিক্ষাই এর মধ্যে নিহিত। এ জন্যই পশু জবাইয়ের সময় বলা হয়, ‘ইন্নাস সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহইয়াইয়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। ’ অর্থাৎ নিশ্চয়ই আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন, আমার মৃত্যু সবই আল্লাহর জন্য, যিনি নিখিল বিশ্বের প্রতিপালক। ’
গরু, মহিষ, উট, ভেড়া. ছাগল, দুম্বা থেকে যে কোনও একটি দিয়ে কোরবানি দেয়া যায়।
৯ জিলহজ হাজিদের আরাফাতের ময়দানে অবস্থানের দিন ফজরের নামাজ থেকে ১৩ জিলহজ আসরের নামাজ পর্যন্ত প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর তাকবির উচ্চারণ করা জরুরি ‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আল্লাহু আকবার ওয়াল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদ। ’ কোরবানির পশুর গোশত ৩ ভাগ করে এক ভাগ আত্মীয়-স্বজনকে, আরেক ভাগ গরিবদের মধ্যে বণ্টন ও বাকি এক ভাগ নিজেরা খাওয়া সুন্নত। ঈদুল আজহার দুই রাকাত নামাজ জামাতে আদায় করা ওয়াজিব। কোরবানি ১০ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজের যে কোনও দিন করা যায়।
বাণী : পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, জামায়াতের আমির মকবুল আহমাদ, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আব্দুর রব প্রমুখ।
পৃথক বাণী ও বিবৃতিতে তারা দেশবাসী ও মুসলিম উম্মাহকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তারা দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি কামনা করেছেন। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।