আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যখন আপনি একটি সিরিয়াল তৈরি করবেন তখন মাথায় রাখবেন কি কি? লিখেছেন রীতিমত লিয়া বিভাগ ফিল্ম মেকিং, স্যাটায়ার

Click This Link সিরিয়াল মানে অনেক পর্বের অনেক বড় একটা নাটক (অথবা নাটকের ভিতরে নাটক)। এখানে কাহিনীর উঠা-নামা, বাকা-তেরা, উচা-লম্বা অনেক কিছুই ঘটবে। এসব ব্যাপার নিয়ে খুব একটা মাথা না ঘামালেও চলবে। তবে মাথা কোথায় ঘামাবেন? আসুন জেনে নেই। সিরিয়াল বানাতে গেলে এই ব্যাপারগুলা মাথায় রাখতে পারেন- ১।

সিরিয়াল গুলো আসলে এতটা “লুজ মোশন” মার্কা হয় যে এক পর্যায়ে নায়ক/নায়িকা বিরক্ত হয়ে সিরিয়াল ছেড়ে চলে যায়। কিন্তু ভাবছেন এতে পরিচালকের মাথায় একটা আচ্ছামত বারি পড়ল? আরে না ভাই, পরিচালকদের কে এল আর কে গেল এসব নিয়ে মাথা ব্যাথা রাখতে নাই। একজন গেলে আরেকজন নিয়ে নিবেন কোন সমস্যা নাই। এতে করে মাঝে মাঝে নায়ক-নায়িকার লুক চেঞ্জ করে সিরিয়ালটা আরো একটু আকর্ষনীয় করে তুলতে পারেন। [কিন্তু কতটুকু আকর্ষনীয় হয় তা সিরিয়াল গিলারা বলতে পারবে ভাল]।

২। তবে হ্যা, অনেক ক্ষেত্রে নায়ক/নায়িকারাও এতটা ধর্য্যশীল থাকে যে এক সিরিয়াল করতে করতে বৃদ্ধ হয়ে যাবে তবু জায়গা থকে সরবে না। তখন একটু মাথা খাটান। কাহিনী ঘুরিয়ে করে দিন। নায়ক/নায়িকাকে কদিন পরপরই বেশ কিছু এক্সিডেন্টে আহত করে ফেলুন।

পারলে স্মৃতি হারিয়ে দিন। একই রকম কাহিনী বারবার করতে করতে নায়ক/নায়িকা বিরক্ত হয়ে যাবে। তখন নিজেই সিরিয়াল থেকে সরে যাবে। এতে আপনারও মুখে কিছু বলতে হল না, কাজটাও হয়ে গেল আর কি। ৩।

অথবা নায়ককে এক্সিডেন্টে আচ্ছামত আহত করে ফেলুন। মুখ চেনা যায় না এমন আহত। অতএব, কাহিনীর প্রয়োজনে আপনাকে নতুন নায়ক নিতেই হবে। (বেচাড়া পুরাতন নায়ক) ৪। নায়ক/নায়িকা চেঞ্জ করতে হলে আরেকটা পদ্ধতি এপ্লাই করতে পারেন।

বেশ অনেক তো হল অন্য নায়ক/নায়িকা আনতে চান। কিন্তু পুরাতনরা জায়গা থেকে সরছে না? এক কাজ করুন। নায়িকাকে মা বানিয়ে ফেলুন [বিবাহিত নায়ক-নায়িকার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য]। আর কয়েকটা পর্ব দিয়েই বাচ্চাটাকে বড় করে ফেলুন। বানিয়ে ফেলুন নায়িকা।

পুরান নায়ক-নায়িকার দিন শেষ নতুনদের দিন শুরু। ৫। এক সিরিয়াল করতে করতে ভিলেনের বয়স বেড়ে গেছে? সে আর কুটনামী করতে পারছে না? সঙ্গসারে প্যাচ সৃষ্টির দিন শেষ হয়ে আসছে? শুটিং থেকে অব্যাহতি চাচ্ছে? কোন সমস্যা নেই, নাকে তেল দিয়ে ঘুমান। ভিলেনের ছেলে/কিংবা মেয়েকে কাহিনিতে এনে ফেলুন। দেখাতে পারেন তারা অনেকদিন দেশের বাইরে ছিল।

এখন দেশে ফিরেছে। ভিলেনকে অব্যহতি দিন। নতুন ভিলেন এনে ফেলুন। ৬। ছোট ভাইয়ের প্রেমিকাকে বিয়ে করে ফেলেছে বড় ভাই? সে জানত না তাদের প্রেমের কথা? একই বাড়িতে হাসবেন্ড ও প্রাক্তন প্রেমিক? এরপর আর কাহিনী আগাতে পারছেন না? কে বলছে আপনাকে মাথার চুল ছিড়তে? ছোট ভাই ও ভাইয়ের বউকে বানিয়ে ফেলুন ক্লোজ (জানে জিগার) ফ্রেন্ড।

আর বড় ভাইকে বানিয়ে দিন অন্ধ-কালা (যে ঘটনা দেখেও বুঝবে না)। আর বড় ভাইয়ের সামনে প্রাক্তন প্রেমিক প্রেমিকার কিছু ক্লোজ দৃশ্য দেখান। বড় ভাই ভাববে “আরে এ কিছু না। ওরা তো খুব ভাল বন্ধু!” ৭। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনমালিন্য, ভুল বোঝাবুঝি? দশর্ক খেপে টিভির ওপর রিমোট ছুড়ে না মারা পর্যন্ত ভুল বোঝাবুঝি বাড়িয়ে তুলুন।

ভাবছেন দর্শক আর সিরিয়ালটা খাবে না (দেখবে না)? খেতে বাধ্য। কেননা সিরিয়াল দেখবে কারা? যাদের এসব প্যাচ-পুচ, ভুল বোঝাবুঝি ভাল লাগে তারাই তো। ৮। কাহিনীতে নায়িকার বিয়ে হয়ে গেলে নায়কেরও অন্য কারো সাথে বিয়ে দিয়ে দিন। তারপর নায়িকার ডিভোর্স হয়ে গেলে নায়কেরও ডিভোর্স করিয়ে দিন এবং অতঃপর তাদের মধ্যে পুনরায় প্রেম করিয়ে দিন।

৯। সিরিয়াল তৈরি করতে খরচের কথা ভাবছেন? হ্যা বিভিন্ন লোকেশনে শুট করতে হলে তো খরচ বাড়বেই। কোন দরকার আছে এসবের? শুধু একটা বাড়ি বেঁছে নিন। দিনের পর দিন ঐ বাড়িতেই শুট করবেন। বাইরে যাওয়ার কথা চিন্তাও করবেন না।

কোন সিরিয়ালে বাইরে শুট করতে দেখেছেন আপনি। সিরিয়ালের প্রয়োজনে কয়েকটি বাড়ির প্রয়োজন হতে পারে। তাতে কি হয়েছে? এক বাড়িতেই সব সম্ভব। আপনি তো সব কয়টি রুম একসাথে ভিডিও করে দেখাবেন না। অন্যান্য রুম গুলো অন্য বাড়ি হিসেবে চালিয়ে দিন।

১০। এবার হল আসল কাজ। যতবেশি পর্ব ততবেশি ইনকাম। তাই পর্বের লেন্থ বাড়াতে পুরাতন পর্বগুলোর ফ্লাশব্যাক দেখান। এক পর্বে তিন-চারটা ফ্লাশ ব্যাক দেখালেই তো পর্ব শেষ।

সর্বপরি, আসলে সিরিয়াল তৈরি করতে আপনার মাথায় তেমন কিছুই রাখার দরকার নেই। একজন সিরিয়ালের পরিচালকের মাথা মোটা কিংবা চিকন যাই হোক না কেন কোন ভাবেই মাথা ঘামানোর দরকার পরে না। গাড়ি ছেঁড়ে দেন, যেদিকে মন চায় যাবেন। তবে হ্যা ফুয়েল কিন্তু থাকা লাগবে। অসুবিধা নাই নতুন করে ফুয়েল ভরে নিলেও চলবে।

কোন স্ক্রিপ্টেরও প্রয়োজন নেই। যখন যা মনে পড়বে এক্টররা তাই ডায়লগ দিবে। তাই সামান্য কিছু পয়সা আর একটা ক্যামেরা থাকলেই আপনিও হাসতে-হাসতে, খেলতে-খেলতে বানিয়ে ফেলতে পারেন অসাধারন (!) একটা সিরিয়াল। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।