আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কেন আমি একজন বিশ্বাসী ?

সত্যি বলতে কি, ধর্মীয় বিশ্বাস ও প্রথার পটভূমি নিয়ে নাস্তিকদের আলোচনা বা তর্ক-বিতর্কে যোগ দিতে আমি সাচ্ছন্দ্যবোধ করি না । কেন ? আমি কি তবে অকাট মূর্খ ? প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আমি নিজের উপর সম্পূর্ণ ভরসা রাখতে পারি না বলে কোন অদৃশ্য সত্ত্বার কাছে নিজেকে সোপর্দ করে শান্তি পাই ? মৃত্যুতে আমার অস্তিত্বের চির অবসান আমি মেনে নিতে পারি না ? আপনারা আমাকে যা খুশি আখ্যা দিতে পারেন তবে কেন আমি এমন তার ব্যাখ্যা আমাকে উপস্থাপন করতে দিন । আচ্ছা, আপনি কোন ডিভাইস ব্যবহার করে এ লেখা পড়ছেন ? সেলফোন, ট্যাব, ডেস্কটপ না ল্যাপটপ ? কেন আপনার এত অপশন থাকতে এটিকেই বেছে নিলেন ? আপনি কি আমাকে এটার সার্কিট ডায়াগ্রাম এঁকে দেখাতে পারবেন ? এটার প্রত্যেকটি অ্যাপ্লিকেশন কিভাবে প্রোগ্র্যাম করা হয়েছে তা আমাকে বোঝাতে পারবেন ? পারবেন না, যতক্ষণ না পর্যন্ত আপনি একজন ইলেক্ট্রনিক্স বা কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হন । তবে আপনি ইলেক্ট্রনিক্স বা কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার না হলে কি এই ডিভাইস ব্যবহার করতে পারবেন না ? তাহলে আমরা বুঝতে পারলাম আমরা আমাদের জীবনের জন্য যেসব বিমূর্ত বা মূর্ত উপাদান ব্যবহার করি সেসব থেকে উপকার পেতে তার যথাযথ ব্যবহারের নিয়ম জানলে ও তা মেনে চললেই যথেষ্ট; সেজন্য আভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া জানা আবশ্যিক নয় কিন্তু জানলে ভাল । তবে ? তবে কিভাবে বুঝবেন কোন ডিভাইসটি আপনার জন্য সবচেয়ে ভাল ? আপনার আয়ত্ত্বের মধ্যে যেটি আছে তার ইউজার ম্যানুয়াল ভাল করে পড়ুন ।

ফিচারগুলো জানুন । আপনার চাহিদা কি কি সে ব্যাপারে নিশ্চিত হোন । তারপর দেখুন ফিচারগুলো আপনার চাহিদাগুলো পূরণ করে নাকি । এক্সপার্টদের পরামর্শ নিন । প্রয়োজনে ক’দিন ব্যবহার করে দেখুন ।

এতকিছুর মধ্যে কোন কিছু আপনার নজর এড়িয়ে গেল কি ? হ্যাঁ, সেটি হল বিশ্বাস । কোম্পানিকে বিশ্বাস, ইউজার ম্যানুয়ালকে বিশ্বাস, বিক্রেতাকে বিশ্বাস, এক্সপার্টদের বিশ্বাস । আভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া বা মেকানিজম না জানলে এই বিশ্বাসের ঝামেলা পোহানো ছাড়া উপায় নেই । নিজে ব্যবহার করেও কি বিগ পিকচার ক্যাচ করা যাবে ? সামনে আরও কী কী পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে তা কি জানেন ? তবে এবার কোমর বেঁধে মেকানিজম নিয়ে জ্ঞান আহরণ করবেন ? করুন । ইলেক্ট্রনিক্স পড়ুন ।

কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুন । আপনার শরীরের উপর কী প্রভাব ফেলবে তাও জানতে হবে । ফিজিওলজি, অ্যানাটমি পড়ুন । নতুন নতুন আবিষ্কার হচ্ছে প্রতিনিয়ত- সে সম্পর্কেও জানুন । জানতে জানতে জীবন শেষ হয়ে যাবে, সিদ্ধান্ত নেয়া আর হবে না ।

অতঃসম্পর কী দাঁড়ালো ? হাঁদারাম আমি আর ঐ জ্ঞানী, যুক্তিবাদী নাস্তিক সেই একই বস্তু ‘বিশ্বাসে’র উপর মুখ থুবড়ে পড়ছি । অনেক বিশ্বাসীদের দেখা যায় তার ধর্মের অমুক বিষয়কে বিজ্ঞান স্বীকৃতি দিয়েছে, অমুক সেলিব্রেটি তার ধর্ম গ্রহণ করে ধর্মকে মহিমাণ্বিত করেছে- এসব নিয়ে মাতামাতি করতে । এটা কি তার বিশ্বাসের দুর্বলতা প্রকাশ করে না ? বিজ্ঞান তো নিয়ত পরিবর্তনশীল । আজকের থিওরিকে কালকের থিওরি বাতিল করে দিবে । যা একযুগের ফেইরি টেইল, তা আরেকযুগের বাস্তবতা ।

তাই ধর্মের কোন বিষয়কে বিজ্ঞান স্বীকৃতি দিলে তা নিয়ে এটা মনে করে বিশ্বাসীর আনন্দ করা উচিত যে, মনুষ্যজাতির জ্ঞানের অমুক দিকটি গ্রহণযোগ্য হল । এখানে জ্ঞান অর্জনকে নিরু‌‌‌ৎসাহিত করছি না । বরং ‘বিশ্বাসে’র গুরুত্ব বোঝাতে চেষ্টা করেছি । প্রকৃত বিশ্বাসী কখনই ভাববে না আগে ধর্মীয় প্রথা পালনের যৌক্তিকতাটা বুঝে নেই, তারপর না হয় পালন বরা যাবে । কারণ তার বিশ্বাসের ভিত্তিই হলো মানবজাতির সমষ্টিকৃত জ্ঞান সকল প্রশ্নের উত্তর জানে না, মানবজাতির জ্ঞান আহরণ চলতেই থাকবে ।

তাই তাকে অন্য কিছুর উপর নির্ভর করতে হবে । কোন বিষয়ে সন্দেহ জাগলে ধৈর্য্য ধারণ করবে, তা পালন করে যাবে এবং সেই সাথে তার কার্যকারণও অনুসন্ধান করে যাবে । কারণ এ অনুসন্ধান তার ধর্মকেই সমৃদ্ধ করবে । তাছাড়া সঠিক পথের সন্ধান স‌ধাৎ অনুসন্ধানেই মিলে । সৎ অনুসন্ধান কী ? এমন পথের খোঁজ যা শুধু তার প্রবৃত্তিজাত চাহিদা পূরণ করে তেমন নয়, এমন পথ যা সামগ্রিক কল্যাণেরই পথ নির্দেশ করে ।

যদি তার অনুসন্ধান হয় আন্তরিক ও স‌মনৎ এবং কোন সত্যপ্রভু থেকেই থাকে তবে তার সঠিক পথের সন্ধান পাওয়াই কি স্বাভাবিক নয় ? তার কোন বিষয়ে সন্দেহ জাগল আর সে তা পালন না করে হাত গুটিয়ে বসে থাকল- তবে সে তার সম্প্রদায়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করল, তার সম্প্রদায়ের প্রতি ইনজাস্টিস করল । কারণ তা যে ধর্মই হোক না কেন- ঐশ্বরিক অথবা মানবসৃষ্ট- তা কোন সমাজের সকল উপাদানের মধ্যে সম্পর্কের উপরই প্রতিষ্ঠিত । বিজ্ঞান ও ধর্মের কনফ্লিক্ট থাকতেই পারে এবং তাই স্বাভাবিক । দুজনার বিকাশের পথ আলাদা । তাই একজনের ব্যাপারে অপরের মাতব্বরি ঠিক নয় ।

তবে দুজনার মধ্যে আদান-প্রদান অবশ্যই চলতে পারে । এই সত্যটি বহু আগে জালালউদ্দীন রুমী বলে গেলেও আজকের সমাজে এটি অনুধাবনের বড়ই অভাব । একপ্রান্তে তথাকথিত শিক্ষিত সমাজ- যাদের নৈতিক ও সামাজিক শিক্ষা হয় মার্ক্সিজম, গান্ধীবাদী, পশ্চিমা দর্শনের ভিত্তিতে এবং তা দ্বারাই তারা নিজেদের বিশ্বাসকে বিচার করে, মনে করে ধর্মশিক্ষায় কিছুই নেই; অপরপ্রান্তে ধার্মিক সমাজ- যারা বিজ্ঞান ও অন্যান্য বিষয় শিক্ষাকে একেবারেই অপ্রয়োজনীয় মনে করে । সুখের বিষয়, বর্তমান যুগের তথ্যপ্রবাহের অবাধ গতিতে এ ব্যবধান অনেকটাই ম্লান । সবশেষে একটি সংগৃহীত কৌতুক ।

ধর্মে বিশ্বাসী হওয়াটাই সেইফ । কারণ যদি সত্যিই কোন সৃষ্টিকর্তা থেকে থাকে, তবে তো বিশ্বাসী হলে বেঁচে যাবার সম্ভাবনা বেশী । আর যদি না থাকে, তবে তো টেনশনই নেই । ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।