আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাবা-মা ও সন্তানের সম্পর্ক

হৃদির ব্যাগ চেক করে আবারো একটা মোবাইল সেট জব্দ করলেন ওর ক্লাসটিচার। শৃংখলা বজায় রাখার জন্য স্কুল ক্যাম্পাসে মোবাইল আনা একদম নিষিদ্ধ। অথচ এই নিয়ে হৃদির কাছে থেকে চারবার সেট জব্দ করা হলো। হৃদির মাকে ডেকে সব জানানো হলে তিনি ভীষণ টেনশনে পড়ে গেলেন। একটা মোবাইলের সেটও তিনি কিনে দেন নি, অথচ তার মেয়ের ব্যাগ থেকেই পর পর চারবার সেট জব্দ করা হলো।

অবিশ্বাস্য! এই বয়ঃসন্ধিকালীন সময়টা যে কত ঝুঁকিপূর্ণ তা সম্পর্কে ভালভাবেই জানেন হৃদির মা। তাই তিনি মেয়েকে গার্লস স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন। এ স্কুলে ভর্তি করাতে চেষ্টা তদবিরও কম করেন নি। সারাটা ক্ষণ মেয়েকে চোখে চোখে রেখেছেন। নিজেই স্কুলে আনা-নেওয়া করেছেন, কোন অঘটন যেন না ঘটে তাই বাসায় লেডি টিউটর রেখেছেন।

এর মধ্যেও এত কিছু ঘটে গেল, তিনি টের পেলেন না! অনেক জেরা আর আচ্ছামত পিটুনির পরে মেয়ে মুখ খুলল। সহজে কি তবু মুখ খুলতে চায়? অল্প কথায় যা বলল, তাতে জানা গেল যে, স্কুলের পাশের ফোনফ্যাক্সের এক দোকানদার হৃদিকে এই মোবাইল সেট কিনে দিত। এক বান্ধবী প্রায়ই ঐ দোকানে ফোন করতে যেত, সাথে নিয়ে যেত হৃদিকেও। তখন থেকেই ঐ দোকানদারের প্রতি দূর্বলতা শুরু হয়ে যায় ওর। এইতো, হৃদির বয়সীই এক মেয়ে সেদিন স্কুল পালালো আরেক অল্প বয়সী বখাটে ছেলের হাত ধরে।

মেধাবী মেয়েটার ভবিষ্যৎ ওখানেই শেষ। এসব ভেবে ভেবে হৃদির মা মেয়েকে নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকেন। স্কুলে মেয়েকে আনা-নেওয়া তিনিই করেন, সারাক্ষণ স্কুলের আশেপাশে মেয়ের জন্য অপেক্ষাও নাহয় তিনি করলেন। কিন্তু, সারাক্ষণ চোখে চোখে কি রাখা সম্ভব? একই ইউনিফর্ম পরা স্কুলের হাজার হাজার মেয়ের মাঝে কখন, কোন ফাঁকে ঐ দোকানদার ছেলেটার সাথে দেখা করে আসবে, তিনি টেরও পাবেন না। এমনিতেই তো কম বোকা বানায় নি মেয়েটা! সুতরাং স্বামীর সাথে পরামর্শ করে মেয়েকে নিয়ে তিনি চলে গেলেন মফস্বলে।

সেখানে একটা মাঝারি মানের স্কুলে মেয়েকে ভর্তি করিয়ে দিলেন। মেয়েকে নামী স্কুলের পড়ানোর ইচ্ছেটা বিসর্জন দিতে হলো। বয়ঃসন্ধিকালীন সময়ের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এমনি সব কারণ নিয়ে বাবা-মায়েদের দুঃশ্চিন্তার অন্ত নেই। নানারকম খবরদারি আর কড়াকড়ির মধ্যে ছেলেমেয়েদেরকেও তারা ব্যতিব্যস্ত রাখেন। অথচ সন্তানের সাথে বাবা-মায়ের যদি বন্ধুত্বপূর্ণ খোলামেলা সুন্দর সম্পর্ক থাকত, তবে এভাবে ওদেরকে এত চোখে চোখে রাখতে হতো না।

ছেলেমেয়েরাই তাদের পছন্দ-অপছন্দের কথা বাবা-মায়ের কাছে সচ্ছন্দে শেয়ার করতে পারত। কোথায় যাচ্ছে, না যাচ্ছে, কার সাথে মিশছে, বন্ধুরা কেমন, বাবা-মাকে এসব নিয়ে প্রশ্নও করা লাগতো না। ওরা নিজ থেকেই বাবা-মাকে সব শেয়ার করত। সত্যি কথা বলতে কি, সন্তানেরা বাবা-মায়ের কাছেই সব কিছু শেয়ার করতে চায়। কিন্তু বাবা-মায়েরা তাদের কথা মন দিয়ে শোনেন না, গুরুত্ব দেন না।

কখনো অল্প একটু শোনেন, পুরোটা না শুনেই বকাঝকা শুরু করে দেন, বিধি নিষেধ চাপিয়ে দিতে থাকেন একের পর এক। অথচ ওদের এ সময় যেটা সবচেয়ে বেশি দরকার, একটা ভালো পরামর্শ, সেটাই ওরা বাবা-মায়ের কাছ থেকে পায় না। আচ্ছা ধরুন, বান্ধবীর সাথে ফোন করতে যাওয়া ও ফোনফ্যাক্সের দোকানদারের সাথে পরিচয় হবার কথাটা যদি প্রথম দিনেই হৃদি মা/বাবার সাথে শেয়ার করতো, তাহলে কী হতে পারতো? হৃদির মা/বাবার জায়গায় থাকলে আপনি কী করতেন? আরো সাবধান হয়ে যেতেন মেয়ের ব্যাপারে? মেয়েকে কড়া ভাষায় মানা করে দিতেন বান্ধবীর সাথে এভাবে ফোন করতে যাওয়াটা ঠিক নয় বলে? কিন্তু কেন ঠিক নয়, সেটা কি ব্যাখ্যা করতেন? আর একটা দোকানদারকে এই বয়সেই ভাল লেগে গেছে ব্যাপারটা পারতেন কি হেসে মেয়ের মাথা থেকে উড়িয়ে দিতে? আসলে এসব কিছুই হৃদিরা (ও হৃদির বান্ধবীরা) বাবা-মায়ের কাছে শেয়ার করে না। কারণ, বাবা-মায়ের কাছ থেকে তাদের একটা দূরত্ব অনেক আগেই তৈরি হয় গেছে। আর সে শুন্যস্থানও হয়ত চলে গেছে অন্য কারো দখলে।

আপনি হাজার চাইলেও এখন সে জায়গা নিজের বলে আর সহজে ফেরত নিতে পারবেন না। এর জন্য অনেক ঝামেলা আপনাকে পোহাতে হবে। সন্তানের উচ্ছৃংখলতা নিয়ে অভিযোগ না করে, বাবা-মায়েরা যদি সন্তানের সাথে সুন্দর সম্পর্ক চর্চায় মন দিতেন, তবে অর্ধেক সমস্যা তৈরি হবার আগেই শেষ হয়ে যেত। সন্তানের সাথে সুন্দর সম্পর্ক বজায় রাখার আরেকটি শর্ত হলো, স্বামী-স্ত্রীর নিজেদের মধ্যে সুন্দর সম্পর্ক থাকা। এই ব্যস্ত সময়ে নিজের পরিবারের জন্য একটু সময় বরাদ্দ রাখার সময়টাই যেন আজকাল আর কারো নেই।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।