স্বপ্ন দেখতে ভালবাসি...দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করি যে, আমরা আমাদের স্বপ্নের সমান বড়... মহা মুসিবতে পড়েছি। মাঝরাতে এক বন্ধু ফোন করে বলে দোস্ত তোর তো আগামী কয়েকদিন অফিস নেই তাই না? আমি বলি, হ্যাঁ। কিন্তু তুই কেমনে জানলি? সে বলল, আরে আমি তোর ছোট বেলার বন্ধু না, তোর খবরাখবর আমি রাখি। মনে মনে খুশি হয়ে উঠলাম। ব্যস্ততার কারণে দেখা কম হলেও আমরা আসলে পাশেই আছি।
আশা করছিলাম, একটু পরই বলবে তাইলে চল কোথাও থেকে ঘুরে আসি। কিন্তু না, সে আমাকে তার গরু কেনার জন্য হাটে যাওয়ার বুকিং দিয়ে দিল। আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই এই বলে সতর্ক করে দিল যে, তাকে দেয়া সময় আমি কোনোভাবেই অন্য কাউকে দিতে পারব না এবং এই সিডিউল আমি যদি ফাঁসাই তাহলে আমার নাকি নিউজ হ্যাজ! (খবর আছে)। হুমকিতে আমি ভয় পেয়ে গেলাম। চোখ থেকে ঘুম ছুটে গেল, যখন দেখি সেই বন্ধু ফেসবুকে আমারে ট্যাগ মেরে স্ট্যাটাস দিয়ে দিল যে, আমি তার সঙ্গে গরু কিনতে যাচ্ছি! অনলাইনে থাকা অন্যরাও লাইক মারা শুরু করল।
এই ফোন রাখতে না রাখতেই আরেকজন এ্যাই জাফরি কইল তুই নাকি তার সঙ্গে গরু কিনতে যাইতেছস? তাইলে আমার সঙ্গে গরু আনতে যাবি কিন্তু। আমি ঢোক গিললাম। তুই ঢোক গিলতেছস ক্যান? দেখ, কোনো রকম চালাকি করার চেষ্টা করবি না তুই কিন্তু আমার বাচ্চা কালের ফ্রেন্ড! অথচ আমার সঙ্গে এই বন্ধুর পরিচয় ভার্সিটিতে উঠে! আসলে ভার্সিটিতে তো বাচ্চারাই পড়ে, তাই না! আমার লম্বা ছুটি শুরু হয়েছে। গরুর লেজের মতোই লম্বা। একটানা ১৫ দিন।
বছরে একবার পাওয়া যায়। তাই আমার চেয়ে সুখী আমার ছোটভাই আর বন্ধু-বান্ধব। কারণ আর কিছুই না! গরুর হাটে যাওয়ার জন্য একজন পার্মানেন্ট লোক পাওয়া গেছে। এতদিন অফিসের উছিলায় নিজের গরু কেনার ভারটাও ছোটভাইয়ের ওপর চাপানো যেত। এখন তো তাও বলা যাবে না।
বলে রাখা ভালো, ঢাকায় ঈদ করে এলাকায় আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু-বান্ধব বার জন, সেমি ঘনিষ্ঠ আরও জনাদশেক আর বন্ধুর ঘনিষ্ঠ বন্ধু মিলিয়ে তা পঞ্চাশে জনে গিয়ে দাঁড়াবে... সেদিন সন্ধ্যার আড্ডায় তো আমি পুরাই আঁতকে উঠলাম। কারণ আমি আমার প্রায় সব বন্ধুর গরু-ছাগল কেনার লিস্টে অই অবলা জীবের পাশাপাশি আমার নাম কমন দেখতে পেলাম। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, আমার আর আগামী কয়েকদিন বাসায় ফেরা হবে না। একেকজন একেক সময় গরু-ছাগল কিনতে যাবে, একেক হাটে! তাদের সঙ্গে তাল মেলানোর জন্য আমাকে হাটেই বসে থাকতে হবে, মাঝে মাঝে নিজেকে হাট থেকে হাটে স্থানান্তর করতে হবে... এখন উপায় কি? আমি যে ভালো গরু কিনতে পারি না, তা ওইসব গরুকে বোঝাতে পারলাম না। গত বছর হাটে গিয়ে বিরাট ধরা খেয়েছিলাম।
সেটাও বললাম। কিন্তু তারা এটাকে কোনো গুরুত্বই দিল না। প্রমাণস্বরূপ গত বছরের গরুর ছবিটাও দেখালাম। তাদের এক কথা, আমাকে যেতেই হবে। আগে যদি জানতাম, ঈদের আগে এভাবে ছুটি নিতাম না।
শেষ পর্যন্ত আমার সাধের ছুটি কিনা গরুর হাটে...
কিছু একটা তো করতেই হবে। গেলাম একজনের সঙ্গে হাটে, উদ্দেশ্য গরু কেনা... আমার উদ্দেশ্য ভিন্ন। গরুর যখন দামাদামি শুরু হয়, তখন আমি উদাস হয়ে অন্য গরুর মায়াবী চোখের দিকে তাকিয়ে থাকি, কোনো কথা বলি না। বন্ধু আমার উপর বিরক্ত হয়, কি রে তুই তো কোনো কথাই বলিস না, তোকে কি এমনেই আনসি নাকি? পরের গরুর কাছে গিয়ে আকাশ-পাতাল দাম বলে ফেলি। এবারও বন্ধু আমার উপর বিরক্ত।
তুই এগুলা কি দাম বলতেছস? আমি উদাস হয়ে বলি। আগেই তো বলছিলাম ‘আমি গরু বিষয়ে পুরাই গরু’। সারাদিন আমাদের কেটে যায়, গরু কেনা আর হয় না, হবে কেমনে? আমি কি আর গরু কেনার চেষ্টা করছি নাকি!! সবাই ক্লান্ত পরিশ্রান্ত। গরু ছাড়াই আমরা ফিরে আসি। এলাকায় কথা ছড়াতে বেশি সময় লাগে না যে আমরা গরু আনতে ব্যর্থ।
আর আমি যে একেবারেই গরু চিনি না, সেটা আরও বেশি ছড়িয়ে পড়ে। আমি তো এটাই চাইছিলাম। এরপর এর ঘটনা আরও মজার। যারা যারা আমাকে তাদের লিস্টে ধরেছিল তাদের সঙ্গে গরুর হাটে নিয়ে যাবে, তারা নিজে থেকেই আমাকে বলতে লাগল ‘থাক তুই অনেকদিন পর লম্বা ছুটি পেয়েছিস রেস্ট নে... হাটে যেতে হবে না। আমি দুঃখভারাক্রান্ত মনে বলি, সেকি— তোরা পারবি তো?
তারা সঙ্গে সঙ্গে বলে ওঠে, পারব! খুব পারব।
দৈনিক আমার দেশ এর রম্য সাময়িকী "ভিমরুল-৩৪৫" এ প্রকাশিত ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।