আমি মৌলিকতায় বিশ্বাসী । আসলে নিজেই বুঝতে পারছি না কিভাবে শুরু করবো !! এটা কি আসলে লেখার মত কোন ব্যাপার ? তা আসলে ভেবে দেখার যথেষ্ট কারন আছে মনে হয় । পুরোটাই আসলে আমার অনুভূতি । হয়তো এটাই বাস্তবতা । এই ব্যাপারটা বেশ কিছুদিন হল মাথায় ঘুর ঘুর করছে ।
ভাবলাম লিখেই ফেলি । অনুভূতি ভাবনা এসব আটকে রাখতে নেই । তাহলে অযাচিত নিজের মধ্যে পুষে রাখা হয় ।
ব্যাপারটি আসলে তেমন কিছুই না । ভাবছিলাম মানুষের বয়স নিয়ে ।
হঠাৎ কোত্থেকে এল একটু বলে নেই । একদিন মিরপুর যাচ্ছি এক বড় ভাইয়ের বাসায় । কনক বাসে মিরপুর ১০ থেকে বেশ কিছু ছোট বাচ্চা উঠলো । সাথে তাদের মা । স্কুল ফেরত বাচ্চারা মাকে পাত্তা না দিয়ে বসে পড়ল তিনজন একসাথে ।
আমি নামার আগ পর্যন্ত তাদের কি নির্মল বিনোদন । কোথায় কি হচ্ছে যাচ্ছে এসবে তাদের কিচ্ছু খেয়াল নেই । সেদিন মিরপুর শিবির-পুলিশ সংঘর্ষ হয়েছিল । আমি ছিলাম সেই ভয়ে। কখন না আবার কি হয় ।
বাসযাত্রীদের জন্য এসব তো ভয়াল স্মৃতি হয়ে থাকে । প্রথমেই আগে গাড়ি ভাঙ্গ । ছুটে আসা ঢিলটা কি বাবার বয়সী লোকের গায়ে নাকি ছোট্ট একটা বাচ্চাকে আঘাত করলো তা ভাবার সময় নেই । তো বাচ্চাগুলোকে দেখে মনে হল আমার স্কুল জীবনের স্মৃতি । এভাবে আমরা সবাই বাসে উঠতাম ।
সাথে আম্মু থাকলেও বন্ধুর পাশে বসা চাই । আম্মুরা সব একসাথে আর অধিকাংশ বাচ্চারা আমরা এক সাথে বন্ধুর কাছে বসতাম । বাসে বসে খুব মনে হচ্ছিলো সেই দিনগুলির কথা । ইশ ! একবার যদি ফিরে পেতাম সেই সোনামাখা দিনগুলো । কি নির্ভাবনাই না কাটতো সময়গুলি ।
এখন কলেজ এর ছেলে-মেয়েগুলোকে দেখে মনে হয় আবার যদি ওই সময়টা পেতাম । বন্ধুদের সাথে একসাথে বাসে বাদুরঝোলা হয়ে ক্লাসে যাওয়া । স্কুল থেকে একটু স্বাধীনতা পেয়ে অবাধ উড়ে চলা । স্বপ্নের পথে গা ভাসিয়ে বেড়ানো । আজ যখন চা খেতে যাই দোকানে দেখি এক বয়স্ক লোককে ।
চা খাচ্ছিলেন । দিনের ক্লান্তি তার চোখে সুস্পষ্ট । আমার দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে । হঠাৎ পুরনো সেই অনুভুতির কথা মনে পড়ল । আমার মন বলছিল, তিনি হয়তো ভাবছেন ।
এই যুবক বয়স আমারও ছিল । ঠিক তোমার মত আমিও কাটিয়েছি কতশত রাত বন্ধুর ছাদে আড্ডা দিয়ে । সবাই মিলে একসাথে জন্মদিন করে । রাতের বেলা সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে বন্ধুদের সাথে এক হওয়া । রেস্টুরেন্টে যেয়ে একসাথে খেয়ে বিল না দেবার ফন্দি-ফিকির করা ।
দলবেঁধে একসাথে সিনেমা দেখতে চলে যাওয়া । পড়ার টেবিলে বসে একমনে পাশের বাড়ির কোন মেয়ের কথা ভাবা । সব ছিল , যা তোমরা এখন করছ । একটার পর একটা পৃষ্ঠা উলটাতে থাকে স্মৃতির । মলিন পাতাগুলো সাবধানে উলটাতে হয় ।
নয়ত ছিঁড়ে গিয়ে হারাতে পারে মধুর কোন স্মৃতি । কেন জানি মনে হচ্ছিলো । হয়তো পুরোটাই আমার অবচেতন মনের কথা । আমার নিজের ভাবনা । অথবা হতে পারে পুরোটাই সত্যি ।
তার চোখদুটো থেকে ঠিকরে বের হচ্ছিলো সেই স্মৃতিকাতরতা । আমার এই খুব অল্প সময়ের জীবনে যদি আমি ফিরে যেতে চাই সেই মধুর দিনগুলোতে তাহলে ব্যস্ত জীবনের কঠিন নিষ্পেষণে বন্দি মনটাকি একবারও চায় না সব ছেড়ে পিছনে ফিরে যেতে । ভাবতেই জানি কেমন লাগে । বয়স যত বেশি হয় তত স্মৃতির পাহাড় জমতে থাকি । ভেবে আঁতকে উঠি ।
যদি আমি ফিরে যেতে চাই শৈশবে তাহলে এই যে বৃদ্ধ মানুষগুলো তাদের মনে কি ঝড় না ওঠে সেই সময়ে !! এই ঝড় হচ্ছে স্মৃতিঝড়, এর তীব্রতা বড়ই কঠিন ।
এমন কথা আসতেই পারে এটা তো জীবনের বাস্তবতা । সময় পেরুবে, বয়স বাড়বে । তারপরও মেনে নিতে কষ্ট হয় । নিজের আব্বুর কথা ভাবলেই কেমন বুকটা মোচড় দিয়ে ওঠে ।
আমাদের মানুষ করার জন্য পরিশ্রম করে আমাদের বাপগুলো আসলে বুড়িয়ে যাচ্ছে । পুরনো অ্যালবাম দেখে আব্বুর আমার বয়সী ছবি দেখে চুপ করে থাকি । নিঃশব্দে একমনে ভাবতে থাকি তারাও ছিলেন আমাদের মত । হয়তো আমাদের থেকে তাদের জীবন ছিল আরেক কাঠি সরেস । কোথায় আছে আব্বুর সেই দস্যি দিনের সঙ্গী বন্ধুগুলো ।
এরকম আমাদের মত আড্ডা তো তারা আর দিতে পারেন না । হয়তো সামাজিক নয়ত ব্যস্ততার কারনে। একেকটি জীন যাওয়া মানে কি তাহলে স্মৃতির বোঝা নিয়ে চলা নয় ?? যত সময় গড়াবে তত বাড়বে স্মৃতির বোঝা । সেই বোঝা বইতে বইতে আমিও হয়তো পৌঁছে যাবো বার্ধক্যে । ঠিক এমন ভাবে হয়তো চা খেতে বৃষ্টির রাতে আমিও নামবো বাসা থেকে ।
দোকানে আসবে একটি তরুন ছেলে । তাকে দেখে হয়তো আমারও মনে পড়বে আমার উচ্ছল জীবনের কথা । সেই দিনগুলির কথা । জানিনা সেই অনুভূতিটা আসলে কেমন !! অতীতে ফিরে যেতে না পারার কষ্ট নাকি হঠাৎ এক পশলা স্মৃতির অবগাহনে আনন্দ তা সময়ি বলে দেবে । অপেক্ষায় থাকলাম ।
। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।