আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নীললোহিত'র কৈশোর, আমার কৈশোর (সুনীলকে নিয়ে বিশেষ রচনা)

বসন্তে মাতাল আমি এক অপূর্ণতা ... একেবারে ছোট্ট আমি, সবে ক্লাস সিক্সে উঠেছি। পেপারে নিয়মিত এডগার রাইজ বারোজ এর টারজান পড়ি, দাদাভাইয়ের কঁচিকাঁচার আসরে ছড়া পাঠাই, ছড়া পড়ি, রকিব হাসানের ধারাবাহিক পড়ি বড় বোনেরা শরত্‍ পড়ে, হুমায়ূন পড়ে, ইমদাদুল পড়ে। সেইসব আমার পড়া নিষেধ। নিষেধ জিনিসের প্রতি বরফের মত জমে আগ্রহ। হুমায়ূন আহমেদের ভৌতিক গল্প চুরি করে পড়ে ধরা খাওয়ার পরও আরো একটা বই চুরি করে পাঠ্য বইয়ের ভিতরে পড়া শুরু করি।

বইয়ের নাম 'কৈশোর'। লিখেছেন 'নীললোহিত'। এ কেমন নামরে বাবা! বই পড়ে চমত্‍কৃত হই, কলকাতার ভাড়ের চা, বিক্রমপুর থেকে নৌকাযোগে মাদারীপুর। উফ কি দারুন একটা বই। নীললোহিতের আরো কয়েকটা বই পুরাতন বইয়ের দোকান থেকে কিনে পড়ে ফেলি।

আমার চোখের সামনে তখন এক কবি যে কলকাতার পথেঘাটে ঘুরে বেড়ায়। অদৌ সেই কবি কোনদিন কিছু করতে পারবে কি না সেই চিন্তায় তার শুভাকাঙ্খীরা চিন্তিত কিন্তু কবি চিন্তিত নয়। অনেক পড়ে জানতে পারি নীললোহিত কিংবা নীল উপাধ্যায়ের আড়ালের কবির আসল নাম সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। তার 'সতের বছর বয়সে' পড়ে যৌবনের সাথে পরিচিত হয়েছি। অনেক কেঁদেছি 'পূর্ব পশ্চিম' এর শংকর মৃত্যুতে।

'একা এবং কয়েকজন' 'প্রথম আলো' 'সেই সময়' কিংবা কাকাবাবু সিরিজ পড়ে দুর্ধ্বষ গোয়েন্দা হওয়ার নেশায় পাগল হয়ে উঠেছিলাম। সুনীলের লেখা আমার নিকট একটা মানচিত্র যেটা দিয়ে কলকাতার লালবাজার, পার্কস্ট্রিট, সল্টলেক, হাওড়া, ভবানীপুর এমনকি সোনাগাছিও ঘুরে বেড়িয়েছি। তার লেখার গভীরতায় ঢুকে যে জিনিসটি আমি পেয়েছি বা হারিয়েছি তা হলো মুভি দেখার ক্ষমতা। একটা মানুষ কিভাবে ৩ ঘন্টা মুভি দেখতে পারে? তারচেয়ে একটা উপন্যাস অনেক বেশি জীবন্ত হয়ে যায় আমার কাছে। আমাকে যখন কেউ প্রিয় লেখক সম্পর্কে প্রশ্ন করে তখন এর উত্তর এক কথায় দিতে পারি না।

প্রোফাইল সাজানোর মত উত্তর আমার কাছে মলিন হয়ে যায়। তবে যদি প্রিয় উপন্যাসের কথা জিজ্ঞেস করা হয় তাহলে আমি নিদ্বিধায় বলে ফেলি 'জীবন যে রকম' লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। খুবই সাদামাটা একটা উপন্যাস। অনেকের কাছে ভালো লাগলেও সেই মাপের মনে হবে না। কিন্তু এই উপন্যাসের চরিত্র দিপু আমাকে মারাত্মক ভাবে আকর্ষন করে ফেলে।

জীবনে বহুবার হতে চেয়েছি দীপুর মত অভাবী একটা ছেলে। পাশে চেয়েছি 'শান্তা'র মত সুশ্রী তরুনী। যার কাছ থেকে অনেক দূরে পালিয়ে বন্ধুর চাকুরিস্হল ডাকের ঘরে আশ্রয় নিয়ে বেঘোরে জ্বরে পড়েও দুর্বার আকর্ষনে কিংবা একটা নীল শাড়ির আচলের টানে কলকাতায় ফেরত আসবো। কবি সুনীলের চেয়ে ঔপন্যাসিক সুনীল আমার নিকট বেশি পরিচিত। শারদীয়া সংখ্যার তার লেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতাম।

সেই অপেক্ষার ইতি টানলেন তিনি। চলে গেলেন আমাদের আর অপেক্ষায় না রেখে। বিদায় নীল লোহিত, নীল উপাধ্যায় কিংবা গাঙ্গুলি বাবু। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।