ভার্সিটির সামার ১১ এর অ্যাডভাইজিং চলছিলো। তখন তো পিচ্চি ছিলাম সারাদিন ডিপার্টমেন্ট এর এই কোনা থেকে ওই কোণা বেড়ানো ছিলো আমার প্রধান কাজ। তেমন বিশেষ কোন বন্ধুবান্ধব না থাকায় সারাদিন এক স্টুডিও (আর্কিটেকচার ডিপার্টমেন্ট এর ডিজাইন ক্লাসগুলো কে আমরা স্টুডিও বলি) থেকে আরেক স্টুডিও তে ঘুরে বেরাতাম। ঘুরতে ঘুরতে গেলাম আমার ইমিডিএট জুনিয়রদের স্টুডিওতে। গিয়ে দেখি অই স্টুডিও'র সবচেয়ে ধান্দাবাজ+ ফাকিবাজ + টাঙ্কিবাজ কইন্যা মৌসুমি মূডঅফ করে বসে আছে।
আমাকে দেখে বলল আপু আমি আবার প্রবেশনে পড়ছি ভাবটা এমন যেন কোন অসাধ্য সাধন করে বসে আছে আমি বললাম দুইদিন পর রেকর্ড বুকে তোর নাম উঠবে শিয়র। ও বলে আপু কি বলে এগুলা? আমি বললাম ঘন্টায় ফেসবুকের প্রোফাইল পিক চেঞ্জ করগা যাহ এই কথা শুনে বেটি বলল আমার আব্বু আম্মুর অনেক শখ আমি ইঞ্জিয়ার হব (আমি মনে মনে বলছিলাম আর্কিটেকচার পড়ে ইঞ্জিনিয়ার হতে চাস? লাফ দে শালি ৯ তলার জানালা দিয়ে) আরো বলল আপু আমার আব্বু আম্মু যদি শুনে আমার এই অবস্থা তাহলে খুব কষ্ট পাবে আব্বু হার্ট অ্যাটাক ও করতে পারে। এই কথা শুনে আমিই ইমোশনাল গেলাম ও বলল আমার আব্বুর কিছু হলে আমিও বাচবো না। ব্যাগ থেকে তিন পাতা অ্যালাট্রল বের করে বলল আজকে স্যার আব্বুকে ফোন দিয়ে কিছু বললে আমি নিজেকে শেষ করে দিবো। (পুরাই মৌসুমির মত ডায়ালগ ) তারপর বহুত ব্রেইন্সটর্ম করে বের করলাম হোয়াট টু ডু মৌসুমির আম্মার সেজে কথা বলব স্যারের সাথে।
মৌসুমির ফ্যামিলির ডিটেইল মুখস্ত করে ওকে পাঠালাম স্যারের রুমে। আর আমি চলে গেলাম নিরাপদ দুরত্বে যাতে কেও না দেখে।
হারুন স্যারকে ফাকা পাওয়া আর ডুমুড়ের ফুল দেখা সমার্থক কথা প্রায় দেড় ঘন্টা পড়ে ও স্যারের রুমে গেলো অ্যাডভাইজিং এর জন্যে। কিছুক্ষন পর স্যার ফোন দিলো ঃ
--------আমি রেডি
আমিঃ হ্যালো আসসালামুয়ালাইকুম
স্যারঃ ওয়ালাইকুম সালাম। আপনি কি মিসেস ভুইয়া বলছেন?
(ভেবেছিলাম যেভাবে হোক ভালো ব্যাবহার করে আমার বানানো কইন্যারে সেইফ করবো কিন্তু নামের আগে মিসেস শুনে মেজাজ উঠে গেলো )
আমিঃ বলার ইচ্ছে ছিলো 'না, আমি মিসেস চৌধুরি বলতেছি।
আপনি কে?' কিন্তু রেগে না গিয়ে তিরিক্ষি মেজাজে বললামঃ হ্যা। কিন্তু আপনি কে? এই রান্না বাড়ার টাইমে ফোন দিছেন।
স্যারঃ আমি আপনার মেয়ের ইউনিভার্সিটি থেকে বলছি । আমি ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান হারুন- উর রসিদ
আমিঃ ও স্যার আপনি? সরি স্যার আসলে আমি বুঝিনি
স্যারঃ আমি আপনাকে একটা কথা জানাতে ফোন করেছি। ।
আসলে আপনার মেয়ে পড়াশুনাই করে না
স্যার কথা শেষ না করতেই আমি বললামঃ ইশ আপনি বললেই হল আমার মেয়ে সারাদিন রাত খালি পড়াশুনাই করে রাত জেগে মডেল বানায়, ড্রয়িং করে
স্যারঃ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললেন আসলে আমি বুঝাতে চেয়েছি ও পড়াশুনায় ভালো করছে না। টানা ৩ বার প্রবেশনে পড়েছে আরেকবার ফেইল করলে রি অ্যাডমিশন নিতে হবে
আমিঃ পড়াশুনায় ভালো করছে না মানে? প্রতি সেমেস্টার এ হাজার হাজার টাকা দেই । মেয়েও আমার পড়তে পড়তে রাতদিন এক করে দিতেছে তাহলে আপনারা বসে বসে কি করতেসেন
স্যারঃ আসলে আমি বলতে চাইছি আমরা তো আছিই আপ্নারাও একটি দেখবেন ভুইয়া সাহেব কি বাড়ীতে আছেন?
আমিঃ জি নাহ উনি হজ করতে গেছেন ফিরবেন আগস্টে
স্যারঃ জুন মাসে হজ করতে গেছেন মানে
আমিঃ না মানে হজের কন্টাক্ট নিয়ে কথা বলতে মক্কায় গেছেন (ওই মেয়েদের ট্রাভেল এজেন্সি ছিল)
স্যারঃ ও হ্যা তাহলে ঠিকাছে ভালো থাকবেন মেয়ের দিকে যত্ন নেবেন আরেকটু দেখবেন নাহলে ভার্সিটি ওরে ডিস্মিস করে দিলে আমাদের কিছু করার থাকবে না।
আমিঃ অবশ্যই খেয়াল রাখবেন মেয়েকে তো আপনাদের হাতে তুলে দিছি মানুশ করে বাড়ি পাঠাইয়েন
স্যারঃ ভালো থাকবেন তাহলে আমি অ্যাডভাইজিং করে দিচ্ছি।
আমিঃ জি আচ্ছা
ফোন কেটে দৌড়ে আবার আমি আমার আগের জায়গায় মানে স্যারের রুমের সামনে ফিরে এলাম মঊসুমি বের হবার পর স্যার আমাকে দেখে নাম ধরে ডেকে বলল 'কি চাও?' আমিঃ স্যার আমার ফোনের ঘড়িটার টাইম সেট করবো।
আপনি তো টাইমের আগে ক্লাসে চলে যান তাই আপনার রুমের ঘড়ির সাথে টাইম মিলাতে আসলাম
তারপর অই মেয়েকে বললাম তোর ব্যাগের ট্যবলেট গুলা দে। লাইফ ইজ বিউটিফুল এই সব কখনো চিন্তাও করবি না। তবে নেক্সট টাইম প্রবেশনে পড়লে আমিই তোরে এগুলা গিফট কইরা দিব
পরের সেমেস্টার থেকে ও ই পড়াশুনা ছেড়ে ঢ্যাং ঢ্যাং করে ঘুরে বেরাচ্ছে। ও যেই এলাকায় যায় সেই এলাকার আম জাম লিচু বৃক্ষগুলাও মনে হয় অর জ্বালায় বিরক্ত :/ যেদিকে যায় খালি ফ্ল্যাশ মারে ডাস্টবিন দেখলে ওটার সামনেও পোজ দেয় :/
এই সেমেস্টারের শুরুতে জোহরের টাইমে গার্লস লাউঞ্জে গিয়ে দেখি টিভিতে 'সাথ নিভানা সাথিয়া' দেখতেছে। ভার্সিটি তে নাকি ঘুরতে আসছে।
বাবা মা'র ইঞ্জিনিয়ার হবার স্বপ্ন পুরা করার জন্যে নাকি একখান আর্কিটেক্ট বয়ফ্রেন্ড ও জুটায়ে ফেলছে
ভাল তো, ভালো না :/
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।