জীবনকে ভালোবাসি, তার চেয়েও বেশী ভালোবাসি মেয়েকে। জানিনা সময় কোন পাগলা ঘোড়ায় চেপে ছুটে চলে, সেদিনের কথা মনে হলে মনে হয় যেন এইতো সেদিন দুই কি তিন সপ্তাহ আগের কথা। অথচ ১১বছর অতিবাহিত হয়ে আজ আমাদের সম্পর্ক যুগ পূর্তির পথে পা বাড়িয়েছে। পরম করুনাময় আল্লাহর কাছে হাজার হাজার শুকরিয়া আমাদের একটি সুন্দর জীবন দেয়ার জন্য আর অসাধারণ একজন জীবন সঙ্গি দেয়ার জন্য যার সাহায্য সহযোগীতা আর ভালোবাসা আমার জীবন চলার পথকে করেছে খুব মসৃণ আর আনন্দের।
১১ বছর আগেকার এই দিনের গল্পটা শেয়ার করতে ইচ্ছা করছে সবার সাথে।
কেউ বিরক্ত হলে আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
কেউ কি ভাবতে পারেন কোন প্রেমিক তার প্রেমিকাকে কদবেল খাইয়ে প্রপোজ করতে পারে? আমার স্বামী তাই করেছিলেন। তাও আবার তার সাথে আমার পরিচয়ের ১০ দিনের মাথায়। আমার টিনএজ বয়সের একটা ভুল ছিলো যে একজনের চেহারার সৌন্দর্য দেখে মোহিত হয়ে তার প্রেমে হাবুডুবু খেয়েছি তার আগের ৫টি বছর, আর তার অন্তরের সৌন্দর্য খুঁজতে যাইনি বা যা কিছু অসুন্দর খুঁজে পেয়েছি তা দেখেও না দেখার ভান করে অন্ধ হয়ে থেকেছি। যদিও তা কোন কাজে আসেনি কারন মিথ্যে অভিনয় দিয়ে একটি সম্পর্ক আর কতদূর যেতে পারে? আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে প্রায় ২মাস অসহায় এতিমের মত দিন কাটিয়েছি, কারো সাথে কথা বলতামনা, শুধু ক্লাস করতাম আর বাসায় আসতাম।
এভাবে দিনগুলো কেটে যাচ্ছিলো এমনি এমনি। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের কোন ঘটনা কোন উৎসব তখন আমাকে স্পর্শ করতোনা। এভাবে আমাকে দেখে খোদার বুঝি দয়া হয় আমার উপর। একদিন এক ক্লাসে এক স্যার আমাদের একটি এসাইনমেন্ট করতে দেয় যা গ্রুপে করতে হবে। সবাই যার যার মত গ্রুপ করে নেয়, শেষে দেখা যায় আমি কোন গ্রুপে ঢুকতে পারছিনা আর আমার হবু প্রেমিক যে কিনা অন্যদের মাঝে আগে থেকেই বেশ হিট এবং ইতিমধ্যেই ৩/৪ জনের একটা গ্রুপ করে ফেলেছে সে আমাকে তাদের গ্রুপে যোগ দেয়ার কথা বলে।
আমিও অথৈ সাগরে ভেসে যাওয়া থেকে রক্ষা পাওয়ার আশায় আনন্দের সাথে ওদের গ্রুপে যোগ দেই। তারপরতো এক একটি দিন হাওয়ায় উড়ে যেতে থাকে। একদিন তাকে আমি আমার পূর্ববর্তী সব অভিজ্ঞতা শেয়ার করি এই আশায় যে সবাই আমার এসব কথা জানলে আর আমার প্রতি আগ্রহী হবেনা। আমার অবস্থা ছিলো তখন ঘর পোড়া গরুর মতো, আগের তিক্ত অভিজ্ঞতার পর আর এসবে জড়াতে চাইনি। এরমাঝে একদিন আমরা সবাই মিলে সাভার এক বান্ধবীর বাসায় যাওয়ার পরিকল্পনা করি।
ঐদিন আমি আমার সম্পর্কে তার অনুভূতির কিছুটা আভাস পাই। বাসে সে নিজে থেকে আমার পাশে এসে বসে, আমার বাসে বমি করার বদঅভ্যাস ছিলো, সে তাই আমাকে জানালার পাশে বসতে দিয়েছিলো, তারপরও আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। কিছুদুর যাওয়ার পর দিলাম বমি করে আর সে যত্নের সাথে আমাকে ঐ সময় ধরে রেখেছিলো যেন আমি একটু ভালো বোধ করি, আমি অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম তার মধ্যে ঘৃণার কোন চিহ্ন ও ছিলোনা। অথচ স্বভাবতই একজনকে বমি করতে দেখলে আমাদের অনেকেরই গা গুলায়, বমি ভাব হয়। যাইহোক সারাদিন ঐ বান্ধবীর বাসায় কাটানোর পুরো সময়টা সে অনেকভাবে আমাকে তার মনোভাব বুঝাতে চাইলো, কিন্তু আমি পাত্তা দিলামনা।
আমিতো চাইছিলাম না আর কোন নতুন সম্পর্কে জড়াতে। ফেরার পথে আমি আর তার পাশে বসলামনা, পুরোটা পথ সে মন খারাপ করে থাকলো। তার একদিন পর সে আমাকে প্রপোজ করে। আমি হতবাক হয়ে যাই আমার সব কথা কোথায় যেন হারিয়ে যায়। আমি শুধু ভাবছিলাম আমার আগেকার সব ঘটনা জানার পরও কেউ কি ভেবে আমাকে ভালোবাসতে পারে? যেহেতু আমাদের পরিচয় হয় তার অল্প কিছুদিন আগে তাই প্রথমেই সে আমাকে তার নিজের জীবনের বিস্তারিত সব জানায়।
অনেক কথা বলে সে আমাকে কোন কথা বলতে না দিয়ে শুধু শুনে যাওয়ার অনুরোধ করে। আমি শুনলাম। যে আমি তার আগেরদিনও আরেক বান্ধবীর সাথে বসে পরিকল্পনা করেছি যে ও আমাকে প্রপোজ করলে আমি কিভাবে কি বলে তাকে না বলবো সেই আমি সেদিন ওর সব কথা শুনার পর আর কেন যেন না বলতে পারিনি। শুরু হয় আমাদের আনন্দময় পথ চলা। এই আনন্দময় পথচলার শুরুতে সে আমাকে একটা হিন্দি গানের দুটো লাইন শুনিয়েছিলো, যা ছিলো পুকার ছবির গান - কিসমাত সে তুম হামকো মিলোহো গানটির যে দুটো লাইন সে আমাকে শুনিয়েছিলো তা হলো -
টুকরে দিলকে হাম তুম মিলকে ফিরসে জোড়েঙ্গে,
এ হাত হাম না ছোড়েঙ্গে।
এই অংশটুকু অনেকের কাছে ছবির মতো মনে হবে কিন্তু আমার যে ঐ মুহুর্তটি কেমন লেগেছিলো তা প্রকাশ করার কোন ভাষা আমার জানা নেই। শুধু নিজেকে অসীম ভালোবাসায় পরিপূর্ণ একজন সুখী মানুষ মনে হয়েছিলো, আর আল্লাহর কাছে শুকরিয়া করেছিলাম এই জন্য যে আমি আমার অগাধ ভালোবাসা আগে যে অপাত্রে দান করেছিলাম তার চেয়ে কয়েকগুন বেশী ভালোবাসা আল্লাহ আমার জন্য সন্চিত করে রেখেছিলেন আমার স্বামীর মনে। আমি গর্বিত এমন একজন মানুষের অসীম ও নিঃস্বার্থ ভালোবাসার হকদার হতে পেরে। সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন।
আল্লাহ সবাইকে ভালো রাখুক এই কামনা করি।
* কেমন যেন লজ্জা লজ্জা লাগছে লেখাটা শেয়ার করতে তবুও করছি আনন্দময় ঘটনা বলে। প্রতিদিন যেহারে একে অন্যকে উদ্দেশ্য করে হেয় করে পোস্ট আসে সামুতে তার চাইতে আমার এই পোস্টতো বেশী সুখপাঠ্য হওয়ার কথা। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।