জীবনকে খুব কাছে থেকে দেখার চেষ্টা করছি....... আজকে ১০ বছর পর পার্কে আসলাম। আমরা যারা ময়মনসিংহবাসী তাদের সবার কাছে বিনোদনের একমাত্র জায়গা এই পার্ক। ব্রম্মপুত্র নদীর পার ঘেঁষে গড়ে উঠা পার্কে আমি কাটিয়েছি আমার শৈশব ও কৈশরের দুরন্ত দিনগুলি। আজকে এত বছর পরে এখানে এসে অনেক অবাক লাগছে। অনেক কিছুই বদলেছে এখানে শুধু বদলায়নি ব্রহ্মপুত্র।
সে তার আপন মনে বয়ে চলেছে। আজকেও আমি আগের মত এসে দাঁড়িয়েছি সেই ঘাটটিতে যেখানে ছিল আমার সব। আজ কেও নেই। আমার বন্ধুরা এবং সে। হথাঠ তার কথা মনে করে অনেক নস্টালজিক হয়ে পরছি।
...........................।
(১২ বছর আগে)
তার সাথে আমার প্রথম দেখা হয় আমাদের কলেজের ওরিয়েন্টেশনের দিনে। আমি তখন ময়মনসিংহ জিলা স্কুল থেকে এস এস সি পাস করে সরকারি আনন্দমোহন কলেজ এ ভর্তি হয়েছি আর সে এসেছে বিদ্যাময়ী স্কুল থেকে। ওরিয়েনটেসন এর দিনে মেয়েরা একপাশে এবং ছেলেরা একপাশে বসেছিল।
একটা মেয়ে বসেছিল আমার ঠিক সামনের বেঞ্চ এ আর তাই আমি পিছন থেকে ওর চুলগুলো দেখতে পাচ্ছিলাম।
যেন সাদা জামায় ঘন কলো রেশমী চুলের এক সাদা পরী। অনুসঠানের এক পর্যায়ে স্যাররা নতুন ছাত্রছাত্রীদের মধ্য থেকে এক জন ছাত্র এবং এক জন ছাত্রীকে স্টেজে ভাষণ দিতে ডাকে। আমি তার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে টের ই পাইনাই যে আমার বাদর বন্ধুর দল আমাকে দেখিয়া দিয়েছে ভাষণ দেয়ার জন্য। এর আগে কখনও ভাষণ দেইনাই। স্কুল এ থাকতে সবসময় ছিলাম ব্যাকবেঞ্ছার তাই ভাষণ দেয়ার তো প্রশ্নই উঠে না।
শত আকুতি মিনতির পরেও যখন আমার রক্ষা হলনা তখন কি আর করা আয়াতুল কুরসি জপতে জপতে স্টেজে গিয়ে উঠলাম।
স্টেজে উঠে ত আমার চক্ষু চড়কগাছ!এ কি আমি যেই মেয়েটাকে এতক্ষণ লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছিলাম এই তো সেই মেয়ে। এই প্রথম আমি তার চেহারা দেখলাম কি সুন্দর!বিধাতা যেন সম্পূর্ণ নিজ হাতে তৈরি করেছেন। অপুর্ব টানা টানা চোখ,কোমর পর্যন্ত রেশমি কাল ছুল,দহারা গঠনের এক অপুর্ব নারীসত্তা। আল্লাহ মেয়েদেরকে বানিয়েছেনই ছেলেদের মনের সব কথা বোঝার জন্য।
তাই সেও মনে হয় আমার মন টা বুঝতে পেরেছিল এবং ভাষণ দেয়ার ব্যাপারটা খুব সহজেই সামলে নিল। তার কথায় আমি অভিভূত হয়ে গেলাম।
অনুসঠান শেষ হলে আমি তার কাছে গেলাম ধন্যবাদ জানানোর জন্য। আমি দৌড়ে তার কাছে গিয়ে দেখি যে সে তার বন্ধুদের সাথে বসে আছে। আমি তখন আমার কম্পিত পা দুটি নিয়ে তার কাছে গেলাম।
সারা জীবন ছেলেদের স্কুল এ পড়ার কারনে মেয়েদের সাথে তেমন ভাল করে কথা বলতে পারিনা তাই তাকে ডাক দিলাম কিন্তু সে যখন আমার কাছে এসে আমাকে জিজ্ঞাসা করলো যে কান আমি তাকে ডেকেছি। এই শুনে আমার মুখ দিয়ে কোন কথা বের হল না। আমি কিছুই না বুঝে একবার ধন্যবাদ বলে উল্টা ঘুরে এক দৌড় দিলাম। আমাকে আর পায় কে!জীবনে প্রথম কোন আপরিচিত মেয়ের সাথে কথা বললাম তাই মনে হচ্ছিলো যেন কয়েকটা হার্টবিট মিস করেছি। ওইদিনের কাহিনি ওইখানেই শেষ
পরের দিন কলেজ এ গেলাম জটিল প্রকারের আতেল মার্কা ভাব নিয়ে।
এর আগে এই কলেজ া খুব কম আসছি তাই ক্লাস চিনিনা তাই বহু কষ্টে ক্লাস চিনে ক্লাস এ গিয়ে হাজির হলাম ক্লাস এ গিয়ে আরেকবার শক খেলাম প্রথম বেঞ্ছেই বসে আছে আই মেয়ে। আমি তো তখন খুশিতে আর কষ্টে আত্মহারা খুশি এই কারনে যে এই মেয়েকে প্রথম দেখায় আমার ভাল লেগেছে আর সে আমার ক্লাসমেট আর কষ্টের কথা হল তাকে দেখলেই আমার হার্টবিট বেড়ে জায়। আমার এইরুপ অবস্থার কথা হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে আমার বাঁদর প্রকিতির বন্ধুদের কানে পৌঁছে যায় আর তারা সিদ্ধান্ত নেয় আমাকে সাহায্য করার। তাদের সুবাদে আমি মেয়েটির নাম জানতে পারি। ওর নাম ছিল রাত্রি।
ওর নাম জানার পর থেকে আমি শুধু ওকে নিয়ে ভাবতে লাগলাম। সারাদিন খালি রাত্রি আর রাত্রি। এক পর্যায়ে আমার বন্ধুদের কল্যানেই ওর সাথে আমার বন্ধুত্ত হয়। ওর সাথে বন্ধুত্ত হউয়ার পড় থেকে আমি ওকে নতুন করে আবিস্কার করতে শুরু করলাম। ও ছিল অনেক কেয়ারিং একটা মেয়ে।
অনেক বুদ্ধিমতি একটা মেয়ে যে কারোরেই মন বুঝতে পারতো আর ছিল অসম্ভব হাশিখুসি,চঞ্ছল,প্রানবন্ত। আমরা কলেজের প্রথম বর্ষ একদিনও ফুল ক্লাস করেছি কিনা সন্দেহ আছে ও আর আমি ক্লাস ফাকি দিয়ে চলে যেতাম ব্রম্মপুত্র নদীর পাড়ে ও সারাখন বকবক করতো আর আমাকে তা শুনতে হত। কখনও ওর কথা সুনে বিরক্ত হইনি আমি। অ কথা বলার সময় খুব গুছিয়ে কথা বলত আর একটা স্বভাব ছিল ওর কথা বলার সময় হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে কথা বলত আমাদের বন্ধুত্তের জুটি ছিল কলেজের সেরা জুটি যা অনেকের জন্য ঈর্শণীয়। তাই সবাই চাইত আমাদের মাঝে ঝগরা লাগাতে।
কিন্তু আমাদের বন্ধুত্ত এতই মজবুত ছিল যে কেও আমাদের কিছুই করতে পারেনি।
সময়টা ২০০০ সাল। মুক্তি পেয়েছে মুভি টাইটানিক একদিন কলেজ এ থাকতে ওকে জিজ্ঞাসা করলাম যে আমি মুভি দেখতে যাচ্ছি ও যাবে কিনা?অ মহানন্দে রাজী হয়ে গেল। ঠিক হল যে আমরা আসছে মে এর ২৫ তারিখ যাবো কারন ওইদিন ওর জন্মদিন। কথামত ওইদিন আমরা মুভি দেখলাম।
ও সারাটা সময় আমার হাত ধরে ছিল এবং মুভির শেষ অংশে অঝোর ধারায় কান্না করছিল আমার কাধে মাথা রেখে। মুভি দেখা শেষ হলে আমরা চলে আসলাম সেই চিরচেনা ব্রম্মপুত্রের পাড়ে। শান্ত দুপুর। নদীর বহমান স্রোত ছাড়া আর কন শব্দ নেই। হঠাৎ আমি অর হাতে হাত রেখে বললাম আমি জ্যাক এর মত তোমাকে আমার জীবন থেকে হারাতে ছাইনা।
আমি তোমাকে ভালবাশি। চারিদিক স্তব্ধ এরি মাঝে ও আমাকে অবাক করে দিয়ে আমাকে জরিয়ে ধরে বাচ্চাদের মত ফুপিয়ে কান্না করতে লাগল আর বলতে লাগল “আমিও তোমাকে অনেক ভালবাসি কিন্তু আমার বাবা আমার বিয়ে ঠিক করে রেখেছে। এইচ এস সি পরীক্ষার পর আমার বিয়ে!!!!!!!
শেষের কথাগুলো আমার কানে বজ্রের মত লেগেছিল। আমি অকে আশ্বস্ত করলাম যে আমি তোমার বাবার সাথে কথা বলব দেখি কি হয়
আমি গিয়েছিলামও কথা বলতে কিন্তু তিনি আমাকে যা বললেন তা নিতান্তই অপমান। এর পর রাত্রির কলেজ এ আসা বন্ধ হয়ে যায়।
বন্ধুদের সাহায্যে অনেক কষ্টে ওর সাথে দেখা করি। আমার কথা জানতে পেরে ওর বাবা তরিঘরি করে ওর বিয়ের আয়োজন কোরে।
আমরা শেষ দেখা করি ২০০০ এর ১৩ই ডিসেম্বর ওর বান্ধবি স্বর্ণার সাহায্যে অনেক কষ্টে এসেছিল আমার সাথে দেখা করতে সেই আমাদের চিরচেনা জায়গায় সবই ঠিক ছিল খালি ওর প্রানবন্ত মুখটা ছিল অনেক মল্লিন। অর সেই ভুবন ভোঁলানো হাসিটাই ছিল না। ও আমাকে বলেছিল ওকে নিয়ে পালিয়ে জেতে।
কিন্তু আমি হার মেনেছি বাস্তবতার কাছে। হ্যাঁ পারিনি আমি। যার কারনে চলে যেতে হয় আমার ভালবাশাকে। আমার রাত্রিকে। বিয়ের রাত্রে ও বিষপানে আত্মহত্যা করে।
ও চলে যাওয়ার পর ওর বান্ধবি স্বর্ণা আমাকে একটা চিরকুট দেয় যার মাঝে লিখা ছিল
আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি শুভ এবং জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তোমাকেই ভালবাসব। আমাকে মাফ করে দিও-তোমার রাত্রি
এইচ এস সি এর পর আমি চান্স পাই দেশের সেরা বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ। এর মাঝে আর ময়মনসিংহে আসা হয়নি। জীবনের স্রোতে আমি হারিয়ে গেছি অন্য কোথাও। আজ এই ব্রম্মপুত্রই আমাকে নিয়ে গেল আমার অতীত এ।
এখনও আমি রাত্রিকেই ভালবাসি এবং সারাজীবন ওকেই ভালবাসবো .................................... ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।