ড. কামাল হোসেন নাকি ইদানীং 'গুম আতঙ্কে' ভুগছেন। যে কোনো সময় নাকি তাকে গুম করা হতে পারে। শুনে হাসব না কাঁদব ঠিক বুঝতে পারছি না! এমন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী, হৃষ্টপুষ্ট শরীরের লোকটাকে যদি গুম করে ফেলা যায় তা হলে তো বলতে হয় বাংলাদেশটা সম্পূর্ণ বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে! এর চেয়ে নিরাপদ দেশ তো পাকিস্তান! ড. কামাল হোসেনের মূল ঠিকানা তো ওই দেশেই। মুক্তিযুদ্ধের পুরো নয় মাস তার জন্য নিরাপদ দেশ পাকিস্তানেই তো কাটিয়েছিলেন ড. কামাল হোসেন। শ্বশুরবাড়িতে।
অনেক সময় কারাগারকে ঠাট্টা করে শ্বশুরবাড়ি বলা হয়। না, সেরকম শ্বশুরবাড়িতে নয়। 'আসলি' শ্বশুরবাড়িতে। এ সময় বাঙালিদের ওপর গণহত্যা চালিয়েছে বর্বর, পিশাচ পাকিস্তান বাহিনী। এ সময় লাখ লাখ লোক পাশব বাহিনীর ভয়ে পালিয়ে যাচ্ছে পাশর্্ববর্তী দেশ ভারতে।
বাঙালিরা পাকিস্তান বাহিনীর হাতে মার খেতে খেতে শেষে রুখে দাঁড়িয়েছিল। পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুপস্থিত নেতৃত্বে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বাঙালিরা। কই ড. কামাল হোসেনের তো কোনো রা-শব্দ শোনা যায়নি বাঙালির এ ঘোর দুর্দিনে। সে সময় শ্বশুরবাড়ির নিরাপদ আশ্রয় এবং আদর-যত্নে নিজেই বোধকরি ড. কামাল হোসেন নিজেকে 'গুম' করে ফেলেছিলেন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সফল সমাপ্তি ঘটেছিল! ৯৫ হাজার পাকিস্তানি সেনা ও তাদের সেনাপতি জেনারেল নিয়াজীর শোচনীয় পরাজয় এবং যৌথবাহিনীর হাতে অসহায় আত্দসমর্পণের মাধ্যমে পতন ঘটেছিল পাকিস্তানের, উত্থান ঘটেছিল স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশের।
বাঙালির মহান আত্দত্যাগ, রক্তক্ষয় এবং বীরত্বের ইতিহাসে এক ফোঁটা অবদান নেই হালে বাংলাদেশের তরুণ সমাজের আদর্শ হওয়ার চেষ্টায়রত ড. কামাল হোসেন কিংবা কিছু হলেই যাকে নোবেল পুরস্কারজয়ী বলে হাউমাউ করে ওঠে কোনো কোনো পত্রিকা এবং তাদের লেজধরা কিছু জ্ঞানপাপী, সেই ড. মুহাম্মদ ইউনূসের।
ড. ইউনূসের কথায় পরে আসছি। তিনি তো বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের আমলে 'গুম আতঙ্কে' ভুগছেন বলে শোনা যায়নি। 'গুম' আতঙ্কে আছেন মাতৃভাষা উর্দুর টানে বাংলা বলা ড. কামাল হোসেন। ২০০১-২০০৬ শাসন-পর্বে বাংলাদেশ শাব্দিক অর্থেই বসবাসের অযোগ্য এক নরকে পরিণত হয়েছিল।
জঙ্গি উত্থান, গ্রেনেডবাজি, বোমাবাজি, হত্যা, গুম, অবাধ লুটপাট, আইন ও ক্ষমতার অপব্যবহার এবং অর্থ ও সম্পদ পাচারের এক বিভীষিকাপূর্ণ দেশে পরিণত হয়েছিল বাংলাদেশ। সেই ভয়াবহ দিনগুলোতেও তো টুঁ-শব্দটি করেননি ড. কামাল হোসেন বিএনপি-জামায়াত জোটের বিরুদ্ধে! এই বিশ্বমন্দার দুর্দিনেও যখন আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রায় প্রতিটি সূচক ইতিবাচক, জঙ্গি উত্থান, সন্ত্রাস, বোমাবাজি, গ্রেনেডবাজি সম্পূর্ণ দমন করা হয়েছে, ঠিক এ সময় ড. কামাল হোসেন কেন 'গুম' আতঙ্কে ভুগছেন! কেন বার বার বলছেন, যে কোনো সময় তাকে 'গুম' করে ফেলা হতে পারে?
পাকিস্তানের 'নিরাপদ' আশ্রয়ে, শ্বশুরবাড়িতে ভালোই ছিলেন ড. কামাল হোসেন। ১৯৭২ সালের জানুয়ারির ১০ তারিখে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে স্বাধীন মাতৃভূমি বাংলাদেশে ফিরবেন। আন্তর্জাতিক চাপ ছিল। পাকিস্তান বাধ্য হয়েছিল বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে।
সদ্য কারাগার মুক্ত বঙ্গবন্ধুকে সে সময়কার পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো অনেকটাই ভদ্রতা করে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, শেখ সাহেব আপনাকে আমরা কি উপহার দিতে পারি। জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আর কিছুই না, শুধু আমার কামাল হোসেনকে ফেরত দিন। বঙ্গবন্ধুর ক্ষমা-ভালোবাসায় বাংলাদেশে ফিরতে পেরেছিলেন ড. কামাল হোসেন! বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে তখনো বয়সে যুবক কামাল হোসেনকে তার মন্ত্রিসভায় আইনমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্তি দিয়েছিলেন। সারা জীবন এই ড. কামাল হোসেন আওয়ামী লীগ ও স্বাধীনতা পক্ষের শক্তির বিপক্ষে পরোক্ষে-প্রত্যক্ষে রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে কৃতজ্ঞতার বদলে অকৃতজ্ঞতার পরাকাষ্ঠা দেখাতে কখনো ভুল করেননি!
বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবার-পরিজনের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঠিক আগে হঠাৎ কি একটা বৃত্তি নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে গিয়েছিলেন ড. কামাল হোসেন! তিনি কি জানতেন ১৫ আগস্টে দলছুট কিছু সেনা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করবে? এই রহস্য থেকেই যায়। মুক্তিযুদ্ধের সময় বিদেশে অবস্থানরত বহু বিশিষ্ট বাঙালিই হানাদার পাকিস্তান বাহিনীর বিপক্ষে প্রচারণাভিযান চালিয়েছেন, বাঙালির স্বাধীন ভূখণ্ডের পক্ষে কাজ করেছেন।
টুঁ-শব্দটি শোনা যায়নি শুধু ড. কামাল হোসেন এবং ড. ইউনূসের। এই লোক দুটিই এখন বাংলাদেশের তরুণ সমাজের 'আদর্শ' ব্যক্তি হয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন! আমি বিশ্বাস করি, মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণাই বাংলাদেশের তরুণ সমাজের আদর্শ। তারা যুদ্ধাপরাধীদের সমুচিত বিচার ও প্রাপ্য শাস্তি প্রত্যাশা করে। তারা আমাদের মতো অনেকেই আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের শ্লথগতির কারণে উদ্বিগ্ন, হতাশ। সময়ক্ষেপণের কারণে যুদ্ধাপরাধীরা যদি তাদের প্রাপ্য কঠিন দণ্ড না পায়, তাহলে এই একটামাত্র ইস্যুতেই বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের আগামী নির্বাচনে ভাগ্যবিপর্যয় ঘটা বিচিত্র নয়।
বিলম্বিত বিচার ন্যায়বিচারের পরিপন্থী। কোনো সভ্য দেশের আদালতে 'স্বচ্ছতার' নামে অভিযুক্ত আসামি এবং তাদের আইনজীবীদের অহেতুক সময়ক্ষেপণের এমন-ধারা সুযোগ দেওয়া হয় বলে আমার জানা নেই!
ড. কামাল হোসেনের প্রসঙ্গে ফিরে আসি। তিনি দেশের গণ্যমান্য ব্যক্তি। ড. ইউনূসের মতোই সম্মানের পাত্র। কিন্তু দুঃখ এখানেই যে, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন এই দুই ব্যক্তিই দুই নিরাপদ দেশে চলে গিয়ে পলায়নী মনোবৃত্তির চরম পরাকাষ্ঠা দেখিয়েছেন।
যুদ্ধাপরাধ এবং মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে পরবর্তী সময়ে ড. কামাল হোসেন তবু দু-একটা কথা বলে থাকবেন। কিন্তু ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিপক্ষে একটা কথাও কখনো উচ্চারণ করেছেন বলে শুনিনি। ড. ইউনূস জাতির পিতা বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের নেতা-প্রেরণাদাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামটি কখনো উচ্চারণ করেননি। শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কার লাভ করেছেন। অথচ বিএনপি-জামায়াত কিংবা আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন থাকার সময় সংঘটিত ভয়ঙ্কর সব হত্যা, বাংলাভাই ও জঙ্গিবাদের উত্থান, লুটপাট বা ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতার অপব্যবহার করা নিয়ে কখনো ভুলেও টুঁ- শব্দটি পর্যন্ত উচ্চারণ করেননি।
নোবেল প্রাইজ পাওয়ার পরও জাতীয় স্মৃতিসৌধ কিংবা শহীদ মিনারে যাননি। বঙ্গবন্ধুর মাজার জিয়ারত করা তো দূরের কথা। তার আমলে গ্রামীণ ব্যাংকের লোকেরা কিস্তি শোধ না করার 'অপরাধে' গরিব ঋণগ্রহীতার ঘরের টিনের চাল, জোর করে গৃহবধূর কানের সোনা এবং নাকের নথ পর্যন্ত খুলে নিয়েছে। নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়ার এবং শাস্তিদানের অধিকার ড. ইউনূস এবং তার গ্রামীণ ব্যাংকের লোকদের কে বা কারা দিয়েছিল? তার এবং তার মতো ড. কামাল হোসেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে কিছুমাত্র অবদান না রেখেও এখন চাইছেন স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অটল, অবিচল, বাংলাদেশের জাগ্রত এবং সদা-সচেতন তরুণ সমাজের 'আদর্শ' হতে! দেখেশুনে ঢাকাইয়া গাড়োয়ানের সেই বিখ্যাত রসিকতার গল্পটাই মনে পড়ে। ঘোড়ার গাড়ির দরাদরির প্রশ্নে ঢাকাইয়া গাড়োয়ানটি যাত্রীকে উদ্দেশ করে বলেছিলেন : 'আর কইবেন না ছ্যার।
সুইনা আমার ঘোড়াডা ভি হাসব!'
দেশের তরুণসমাজকে ঘন ঘন 'অনুপ্রেরণা' দেওয়া এবং যে কোনো মুহূর্তে 'গুম' হওয়ার আতঙ্কের কথা শুনে ড. কামাল হোসেন সম্পর্কে এই রসাত্দক গল্পটাই বলতে ইচ্ছা করে। এসব রাজনৈতিক চালাকির নানারকম কারণ রয়েছে। একটি কারণ যে, দেশ সম্পর্কে ভুল ম্যাসেস দিয়ে ড. কামাল হোসেন যুদ্ধাপরাধজনিত অগি্নগর্ভ ইস্যুকে গৌন করার চেষ্টা করছেন। এ বিষয়ে অনেকের মতো আমার মনেও কোনো সন্দেহ নেই।
সমালোচনা ও নিন্দা করার মতো ইস্যু কি বর্তমান সরকারের বিপক্ষে নেই? অবশ্যই আছে।
শেয়ার কেলেঙ্কারি এবং কেলেঙ্কারির মূল হোতাদের নাম গোপন করা, তেমন কোনো দণ্ড না দেওয়া, প্রায় সর্বত্র মহামারীর মতো দুর্নীতির বিস্তার, দুর্নীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে কতিপয় উপদেষ্টা-মন্ত্রীর বিপক্ষে সরকারের নীরব ও নিষ্ক্রিয় ভূমিকা, ডেসটিনির হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাটের ঘটনা, হলমার্ক কেলেঙ্কারি_ এসবই তো বর্তমান সরকারের বিপক্ষেই যায়। তবে নিরপেক্ষ বিচারে স্বীকার করতে হবে যে, বহু ক্ষেত্রেই কথিত অপরাধের বিপক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। স্বীকার করতে হবে গত পৌনে চার বছরে দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে সরকারের অর্জন যেমন বিশাল তেমনি ব্যাপক। অর্জনের তালিকাও দীর্ঘ। দেশে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন তো কোনো ফেলনা অর্জন নয়।
বিএনপি-জামায়াতের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে লালিত-পালিত জঙ্গি-সন্ত্রাসী এবং ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের যথেচ্ছচার দমন করা, তাণ্ডব ও দৌরাত্দ্য শূন্যে নামিয়ে আনা কি একটা বিশাল অর্জন নয়? বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা ও সমুদ্র-ব্যবহারের ব্যাপকতা বৃদ্ধিও তো যে কোনো বিচারে দেশের জন্য বিশাল এক সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে। অধিকাংশ ইউনিয়ন লেবেল পর্যন্ত প্রযুক্তির প্রসার ঘটানো, শিক্ষার মৌলিক সংস্কার [যে কারণে সম্প্রতি বাংলাদেশ শিক্ষা-উন্নয়নে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেছে] বিদ্যুতের ঘাটতি ও জনদুর্ভোগ নমনীয় পর্যায়ে আনতে পারা, দেশের স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনাকে কৃষিবান্ধব করা, পরিবেশ রক্ষায় সচেতনতা সৃষ্টি এবং পরিবেশ-বিনষ্টকারীদের বিপক্ষে আপসহীন ব্যবস্থা নেওয়া, বিশ্বমন্দার কারণে বিশ্বজুড়ে সর্বত্র বিরাজমান নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের উচ্চ মূল্য বিরাজমান থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশে ভোজ্যতেল ছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব জিনিসপত্রের দামই সহনীয় মাত্রা ছাড়িয়ে না যাওয়া, এসব সাফল্য ও অর্জন বুঝি 'গুড গভর্নেন্স'র আওতায় পড়ে না?
দেশের এতসব অর্জন সত্ত্বেও কিছু জ্ঞানপাপী নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার পক্ষে মনসার ভাসান গাইছে। এই চাওয়ার একটা গূঢ় অর্থ যে আছে, তাতে আর সন্দেহ কি! নির্দলীয় এবং অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার তো নির্বাচন করতে আসে না, আসে দেশ-শাসন করতে! ফখরুদ্দীন সরকার সেনা-সমর্থন নিয়ে তিন মাসের জায়গায় দুই বছর দেশ শাসন করেছিল। ড. ইউনূস তখন ভারী উৎসাহিত ও উজ্জীবিত ছিলেন। দশ বছরের জন্য দেশ শাসনের গ্যারান্টি চেয়েছিলেন।
কিন্তু না সেনাবাহিনী, না মিত্র ও দাতা দেশসমূহ ড. ইউনূসকে দ্বিতীয় মার্কোস হিসেবে দেখতে কিংবা গ্যারান্টি দিতে রাজি ছিল। ড. ইউনূস এ সময় একটা রাজনৈতিক দলও গঠন করতে চেয়েছিলেন। সাংবাদিকদের মোকাবিলায় এ ব্যাপারে খুব তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে বলেছিলেন রাজনৈতিক দল গঠন? এটা এমন কি ব্যাপার। করে ফেলব। এরপর রাজনৈতিক দল গঠন করতে গিয়ে তিনি তার দলের সম্ভাব্য সেক্রেটারি জেনারেল ছাড়া আর কাউকে পাননি।
ড. কামাল হোসেন, ড. ইউনূস এ দুজন হলেন দেশের অতিথি পাখি। পাঁচ সপ্তাহ দেশে থাকেন তো পাঁচ মাস থাকেন বিদেশে। তবে হ্যাঁ, দেশ শাসনে উৎসাহ কারই বা কম আছে। প্রাসাদ-ষড়যন্ত্রকারীদের বরং একটু বেশি আছে। অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচনের আগে ক্ষমতায় আসীন থাকলে একশ্রেণীর মেরুদণ্ডহীন বিচারপতির ভাষায় 'ল অব নেসেসিটি'র দোহাই দিয়ে সবই করা যায়।
নির্বাচন উহ্য রেখে জনগণের স্বার্থে, দুর্নীতি ও কু-শাসন উচ্ছেদের স্বার্থে, তিন মাসের মেয়াদ তারা দশ বছর করে ফেলতে পারেন অনায়াসে। প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের বড়-ছোট খেলোয়াড়রা সে কারণেই বোধ করি বিএনপি-জামায়াতের নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বড় সাপোর্টার হয়ে দাঁড়িয়েছেন। দেশের দু-একটি সংবাদ মাধ্যম বস্তুত এ লক্ষ্যেই মাঠে নেমেছে। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বহাল হলে যদি আবার হাওয়া ভবনের পত্তন হয়, দেশি-বিদেশি জঙ্গিদের উত্থান ঘটে, যুদ্ধাপরাধীরা সসম্মানে মুক্তি পায়, দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কয়েক হাজার লোক নিহত হয়, তাদের স্ত্রী-কন্যা লাঞ্ছিত হয় তো হোক না। তাদের তো লোকসান নেই তাতে।
তারা তো 'ল অব নেসেসিটি'র দোহাই দিয়ে তিন মাস মেয়াদি শাসন পাঁচ বছর-১০ বছর বাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে পারবেন। 'ল অব নেসেসিটি'র দোহাই দিয়ে বার বার পাকিস্তানে সেনা শাসন কায়েম হয়েছে এবং ক্রমে ক্রমে দেশটা জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। নিট ফলাফল : পাকিস্তান এখন সন্ত্রাসের রাজধানী এবং বসবাসের অযোগ্য প্রায় ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। ড. কামাল হোসেন অধুনা গুম আতঙ্কে আছেন। অবস্থাটা যদি তেমনই হয় তা হলে তো বলতে হয়, বর্তমান মহাজোট সরকারের বিশাল সব অর্জন ও সাফল্য সত্ত্বেও দেশটা বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠেছে।
এ অবস্থায় শ্রদ্ধেয় ড. কামাল হোসেনকে বিদেশে কিংবা পাকিস্তানে 'শ্বশুরালয়ের' নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া ছাড়া আর কি বা করতে পারি। তথ্যসূত্র: রাহাত খানের কলাম ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।