রাত ১০: ০৬, ০২ সেপ্টেম্বর, ২০১২
শিরোনাম দেখে নিশ্চয়ই সবাই ভাবছেন, ক্যালিফোর্নিয়া ভ্রমন বা তেমন কিছূ একটা নিয়ে বলবো। নাহ! ব্লগারদের হতাশ করতে হচ্ছে। আজকে সারাদিনই ' দি ঈগলস' এর এই গানটি কানে বাজছে। মাথা থেকে সরাতেই পারছি না। কেন? সেটা পরে বলছি।
On a dark desert highway, cool wind in my hair
Warm smell of colitas, rising up through the air
Up ahead in the distance, I saw a shimmering light
My head grew heavy and my sight grew dim
I had to stop for the night
There she stood in the doorway;
I heard the mission bell
And I was thinking to myself,
"This could be Heaven or this could be Hell"
Then she lit up a candle and she showed me the way
There were voices down the corridor,
I thought I heard them say...
Welcome to the Hotel California
Such a lovely place (Such a lovely place)
Such a lovely face
Plenty of room at the Hotel California
Any time of year (Any time of year)
You can find it here ....................
১৯৭৭ এ হিট করা এই গানটি দিয়ে 'ঈগলস' সারা দুনিয়ার মন জয় করে নিয়েছে। গানটি যারা শুনেছেন তারা নিশ্চয়ই আমার সাথে একমত হবেন যে, যে কটি বিখ্যাত গান গীটারের কারুকার্যে জগৎ জোড়া মানুষের মন ছুঁয়েছে এটি তাদের একটি। গানটিতে কথার চেয়ে অ্যাকুস্টিক গীটারের হৃদয় ছোঁয়া কম্পোজিশনটাই সবচেয়ে ভালো লাগে। সেই কলেজ জীবনে প্রথম শুনেছিলাম। তাও এক বন্ধুর কম্পিউটারে মিউজিক ভিডিও আকারে।
সেটা ছিল এক কনসার্টের মিউজিক ভিডিও। তখন থেকেই প্রিয় গানের লিস্টের প্রথম দিকে তার অবস্থান।
নাহ! আমি আসলে গান নিয়ে গবেষনা করতে বসিনি। বসেছি আমার নিজেকে নিয়ে ভাবতে। গানটির কথা কেন বললাম সে কথায় আসছি।
আজকে গানটি কয়েকবার শুনতে হয়েছে। যাচ্ছিলাম লন্ডন আন্ডারগ্রাউন্ডের 'জুবিলী' লাইনে। 'ওয়াটারলু' স্টেশনে ইন্টারচেঞ্জ করতে হচ্ছিল 'বেকারলু' লাইন ধরার জন্য। এই ইন্টার চেঞ্জে প্রায় আধা মাইল হাঁটতে হয়। আর আমিও তাই ব্যস্ত লন্ডন বাসীর সাথে পাল্লা দিয়ে হাঁটছিলাম দ্রুত গতিতে।
হঠাৎ কানে এল সেই সুর। সুরটা চেনা লাগায় মন দিয়ে শুনতে লাগলাম। যতই এগুচ্ছি ততই আওয়াজ বাড়ছিল। তখনই বুঝলাম কোন 'বাস্কার' (লাইসেন্সপ্রাপ্ত ভিক্ষুক, যারা গান গেয়ে বা কসরত দেখিয়ে ভিক্ষা করে) নিশ্চয়ই বাজাচ্ছে। তখনই বরাবরের মতো পকেটে হাত চলে গেল চেঞ্জের আশায়।
ভাবলাম আজকে দেবই দেব। সব সময়ই এমনটা হয়। মনে মনে ভাবি বেচারা কষ্ট করে গাচ্ছে, দেইনা কয়টা চেঞ্জ। কিন্তু কি যেন এক সংকোচে আর দেয়া হয় না। আসলে জনস্রোতে হঠাৎ থেমে যেয়ে আর দেয়া হয় না।
আসলে থামাই হয় না কখনও। আজকে তাই ভাবলাম দেবই।
কাছে যেতেই দেখি একটা শ্বেতাঙ্গ একহাতে গীটার নিয়ে বাজাচ্ছে 'Welcome to the Hotel California.....' সেই সাথে বাজাচ্ছে মাউথ অর্গান। মাউথ অর্গানটা বিশেষ কায়দায় মুখের সামনে এনে গলার সাথে ফিট করা। একই সাথে দুটো যন্ত্র বাজাচ্ছিল সে।
সামনে গীটারের বাক্স খুলে রাখা। তাতে কিছূ খুচরা পয়সা। আমি বরাবরের মত হেঁটে পার হয়ে গেলাম সামনে দিয়ে। এবারও দেয়া হলো না কোন খুচরো পয়সা। মনটা ভরে উঠলো আত্মগ্লানিতে।
কেন এমন হয়? কেন পারিনা সংকোচ কাটিয়ে উঠতে? কেন 'পাছে লোকে কিছূ বলে' টাইপের ভয় আমাকে আঁকড়ে ধরে? জবাব কখনওই খুঁজে পাই না।
মনে পড়ে ২০০৫ এর দিকে প্যারিস গিয়ে ছিলাম রুমমেট সহ। আইফেল টাওয়ারের নীচে সামনের দিকে একটা নদীর উপর ব্রীজ আছে। সেই খানে এই রকম এক লোক গীটার বাজিয়ে গাচ্ছিলো সব বিখ্যাত গান। অনেকক্ষন ধরে তার গান শুনছিলাম বিকেলের হালকা বাতাসে বসে।
নাহ, তাকেও কিছু দেয়া হয়নি।
বর্তমানে ফিরে এলাম। মন খারাপ করে ভাবছিলাম আর হাঁটছিলাম। খানিক্ষন পর অক্সফোর্ড সার্কাসে ইন্টারচেঞ্জ করছিলাম সেন্ট্রাল লাইনের জন্য। কাকতালীয় ভাবে আবার কানে এল সেই সুর।
আমি চমকে উঠলাম। এটা কি করে সম্ভব! আমাকে অবাক করে দিয়ে এক জ্যামাইকান বাজাচ্ছে একই সুর একই বাজনা। আমি আবারো সামনে দিয়ে হেঁটে চলে গেলাম। ধিক্ আমাকে! কবে পারবো সংকোচ কাটিয়ে নিজেকে মেলে ধরতে?
আমি পারি না। পারি না অনেক কিছুই করতে।
বিদায় বেলায় বাবা মাকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়তে পারি নি কোনদিন। অন্যদিকে চোখ ফিরিয়ে রেখে বিদায় নিয়েছি। এখনও টেলিফোনে মা-কে, বাবাকে বলা হয় না, 'তোমাদের কত ভালবাসি, কতটা মিস করি। ' ছোটভাই বোনকে বলা হয় না ' তোদের খুব জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করে। ' বন্ধুদের বলা হয় না ওদের সাথে কাটানো সময়টা কত মিস্ করি।
' মুখ ফুটে আমার অনেককে অনেক কিছুই বলা হয় না।
সবার কাছে আমি তাই 'আনসোশ্যাল' আর 'কোল্ড হার্টেড' রয়ে গেলাম।
আর কতদিন?
বন্দী বেদুঈন
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।