কতশত চেনা মুখে দেখেছি আমি অচেনা মানুষের ছায়া! 'সুপ্তির বাসা থেকে বের হতে একটু রাতই হয়ে গেল। গ্রুপ অ্যাসাইনমেন্টের সাবমিশন আগামীকাল। আজকে কাজ শেষ না করে উপায় নেই। নাহ, একটু বেশিই রাত হয়ে গেল। সুপ্তি বলছিল থেকে যেতে।
কিন্তু উপায় তো নেই। বাসায় মা একা ...' এসবই ভাবতে ভাবতে নিঝুম বড় রাস্তার দিকে এগোচ্ছিল। লম্বা গলিটার মাঝ পর্যন্ত না পৌঁছাতেই লোডশেডিংএ অন্ধকার হয়ে গেল পুরো এলাকা। অন্ধকারে একটু ভয়ই পেয়ে গেল নিঝুম।
' ঐ তো, আর একটু এগোলেই বড় রাস্তা ' ... নিজেকে সাহস দিতে থাকলো।
হঠাৎ ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় সতর্ক করে দিল তাকে, কেউ অনুসরণ করছে ওকে। একজন না, বেশ কয়েকজন। ওর সন্দেহ সত্যি হল। আড় চোখে পেছনে তাকিয়ে অন্ধকারে চার-পাঁচটা ছায়া দেখতে পেল। অন্ধকারে একটি আগুনের বিন্দু ওঠা-নামা করছিল দ্রুত।
ধীরে ধীরে ছায়াগুলোর সাথে নিঝুমের দূরত্ব কমে আসতে লাগলো। দ্রুত হাঁটতে লাগলো নিঝুম। অন্ধকার গলিতে নিঝুম আর ছায়াগুলো ছাড়া আর কাউকে দেখা গেল না। প্রায় নিস্তব্ধ গলিটিতে নিঝুমের পায়ের নূপুরের শব্দ আর ওদের পায়ের আওয়াজ ছাড়া আর কিছু শোনা গেল না। দূরত্ব কমতে কমতে ওরা নিঝুমের পাশাপাশি চলে এলো।
চিৎকার করে ওঠার আগেই ওর মুখ চেপে ধরলো শক্ত একটা হাত। আর বাকি হাতগুলো টেনে হিঁচড়ে ওকে নিয়ে যেতে থাকলো পেছনের ৩৫ নং প্লটে নির্মাণাধীন বিল্ডিংএর তিন তলায়। এর মাঝে ইলেক্ট্রিসিটি চলে আসলে আবছা আলোতে নিঝুম দেখতে পায় মুখগুলো। চিনতে পারে একজনকে, সুপ্তির বড় ভাই, সুমন।
আশেপাশের বিল্ডিংগুলো থেকে অস্পষ্ট, চাপা গোঙানি ছাড়া আর কিছুই শোনা গেল না।
... ... ...
পার্টি শেষ করে ফিরতে একটু বেশিই দেরী হয়ে গেল। সি,এন,জিওয়ালা গলির ভিতরে ঢুকতে রাজি না, অগত্যা গলির মুখেই নেমে যেতে হল। গলিটা পুরো অন্ধকার। এই মধ্যরাতেও লোডশেডিং !! অন্ধকারে অনেকটা হাতড়ে হাতড়েই বাসার দিকে এগোচ্ছে সুমন। হঠাৎ মনে হল, পেছন পেছন কেউ আসছে।
পায়ের শব্দ, নূপুরের আওয়াজ। ' এত রাতে , এই অন্ধকারে আবার কে বের হবে? তাও আবার মেয়ে। নাহ, আজকে মনে হচ্ছে একটু বেশিই গিলে ফেলেছি । ' ... ভাবছে আর টলতে টলতে এগোচ্ছে সে। এবার নূপুরের আওয়াজ আসছে সামনে থেকে।
অন্ধকারে, এক নারী ছায়ামূর্তি।
'কি যে আবোল-তাবোল দেখছি। ' ... দ্রুত পা চালাতে চেষ্টা করে সে। একসময় অবাক হয়ে খেয়াল করে বাসা পার হয়ে এগিয়ে যাচ্ছে ৩৫ নং প্লটের দিকে। বিল্ডিংটার কাজ আজও শেষ হল না।
হঠাৎ খেয়াল করে, বিল্ডিংটার তিনতলার কার্নিশে দাঁড়িয়ে আছে সে। পাশে সেই ছায়ামূর্তি। এতক্ষণ তাহলে সম্মোহিতের মত মেয়েটাকে অনুসরণ করছিল ও !
"ভাইয়া, আমাকে চিনতে পেরেছেন? আমি নিঝুম, সুপ্তির বান্ধবী ছিলাম", ক্ষীণস্বরে বলে ওঠে ছায়ামূর্তিটা ।
এবার সুমনের ভয় পাবার পালা। হঠাৎ করেই যেন মস্তিষ্কের সবগুলো কোষ সজাগ হয়ে ওঠে।
৩ বছর আগের এক রাতের সব দৃশ্য পরিষ্কার দেখতে পায় চোখের সামনে। নিঝুমের কথা মনে পড়তেই শীতল একটা স্রোত বয়ে যায় শিরদাঁড়া বেয়ে।
"সেদিন কেন এমন করলেন ভাইয়া? আমি তো আপনারই আরেক ছোট বোন ছিলাম!"
সুমন হঠাৎ খেয়াল করে ছায়ামূর্তি ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে তার দিকে। আর সে ধীরে ধীরে পিছিয়ে যাচ্ছে। এভাবে পিছিয়ে যেতে যেতে একসময় কার্নিশের শেষ কোনায় নিজেকে আবিষ্কার করে সুমন।
... ... ...
পরদিন সকালে ৩৫নং প্লটের পিছনের জংলামত জায়গায় একটা থেতলানো শরীর পাওয়া যায়। মুখ দেখে চেনার উপায় নেই। লাশের গলায় ফাঁসের মত এঁটে ছিল এক জোড়া রূপার নূপুর ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।