আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঝরা পালক

আমার হেডফোনটা নষ্ট হয়ে গেছে। তাই সারাতে নিয়ে এসেছি কম্পিউটারের দোকানে। কিন্তু দোকানদার দেখেশুনে বলল, 'ভাইয়া, আমরা তো এইগুলা বিক্রি করি। সারানোর কাজ তো আমাদের না। ইলেক্ট্রনিক্সের দোকানে গিয়ে ট্রাই কর।

দেখ কাজ হয় কি না। তবে আমার মনে হয় না কোন লাভ হবে। হেডফোন বা এ জাতীয় জিনিস সাধারণত নষ্ট হয় না। আর একবার নষ্ট হয়ে বসলে সারানোও যায় না। তোমার ভাগ্য খারাপ ভাই! এটা দিয়ে তোমার আর কাজ হবে না।

আর এর সাথে তো গ্যারান্টি কার্ডও কোম্পানি দেয় না যে তোমাকে পালটায় দেবো। ' সব শুনে আমার তো মাথায় হাত! মাত্র দুইমাস হল নতুন এই হেডফোনটা কিনেছি পাক্কা চৌদ্দশো টাকা দিয়ে। আর এখনি যদি এটা নষ্ট হয়ে পড়ে, তাহলে আমার চলবে কি করে? তাই দোকানদারের সাথে ঝুলোঝুলি করতে লাগলাম! 'দেন না ভাই পালটায়। আমি টাকা দিয়েই কিনব বাট একটু কম রাখেন আমার কাছ দিয়ে!' ঠিক এসময় দোকানে একটা মেয়ে এসে ঢুকল। দোকানদার আমার সাথে কথা বলছে দেখে সে আমার পাশে এসে চুপ করে দাঁড়ালো।

আমি মেয়েটাকে আড়চোখে দেখে আবার বলা শুরু করলাম, 'দেখেন ভাই আমার কিন্তু আজকে জন্মদিন। বার্থডে বয়কে 'একটু' কন্সিডার করেন!' দোকানদার তবু নারাজ। বলল, 'দেখ ভাই এসব বললে ক্যামনে হয়। তাহলে তো আর আমি ব্যবসা করে খেতে পারব না। আমি তো আর তোমাকে নিজে থেকে খারাপ মালটা গছিয়ে দেই নি।

তুমিই একই মডেলের এতগুলা থেকে এইটাকে চুজ করেছিলে। ' আমার পাশে দাঁড়ানো মেয়েটা তখন দোকানদারকে 'ভাইয়া এদিক একটু আসেন' বলে ডেকে অন্য একটা ঘরে নিয়ে গেল। মিনিটখানেক বাদে দুজনেই ফিরে এলো। দোকানদার তখন আমাকে বলল, 'ভাই তোমার টেনশন নেই। তোমার হেডফোন আমি বদলে দিচ্ছি।

কোন দাম দেওয়া লাগবে না। 'বলার সময় আমি খেয়াল করলাম যে সে মিটিমিটি একবার আমার দিকে আরেকবার মেয়েটির দিকে তাকিয়ে রহস্যময় ভঙ্গিতে মিটিমিটি হাসছে। অবশ্য আমি তাকে বেশিক্ষণ রহস্য করতে দিলাম না। নতুন হেডফোন প্যাক করা হলে সেটা হাতে নিয়ে ঘাড়ের পিছে ঝুলিয়ে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বললাম, 'থ্যাঙ্ক ইউ!' বলেই আর অপেক্ষা করলাম না। সালমান খান টাইপ স্টাইলে দোকান থেকে বেরিয়ে আসলাম।

দোকানদার তখন হতভম্ব হয়ে আমার দিকে চেয়ে আছে! ##### 'তুমি তাহলে জানতে যে সেদিন আমার জন্মদিন ছিল না?' আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম নিশিতাকে। 'ও মা! তোমার সবকিছু জানি আর তোমার জন্মদিন কবে, সেটা জানব না?' 'তাই! তুমি তাহলে সব জানো আমার সম্পর্কে?' 'হু মশাই। সঅঅঅব জানি!' 'আশ্চর্য! এতকিছু তুমি জানলে কিভাবে?' 'জানলাম তোমার খালাত বোনের কাছ থেকে। ' 'কার থেকে? সুমির কাছ থেকে? ও তো আবার তোমাদের সাথে একই ইয়ারে পড়ে, না?' 'হুম। ' 'আবার অবাক করলে! ও আমার ব্যাপারে এতসব জানল কিভাবে!' 'বা রে! তোমার খালাত বোন তোমার ব্যাপারে জানবে না? আমি তো আমার সব কাজিনের জন্মদিন নোটবুকে লিখে রেখেছি।

সবার জন্মদিনে মেসেজ করে উইশ করি। ' 'সে তোমার কথা আলাদা। তুমি তো অনেক মিশুক। কিন্তু আমার স্বভাব তো বেয়াড়া ধরণের। আমার তো আমার কাজিনদের সাথেও কখনোই খুব ভাল সম্পর্ক নেই।

' 'তাই নাকি?' 'হা। মাঝেসাঝে নানাবাড়ি দাদাবাড়ি গেলে ওদের সাথে দেখা সাক্ষাত হয়, এই যা। ওরা ওদের মতন থাকে। আমি ওদের ব্যাপারে মাথা ঘামাই না। ওরাও আমায় নিয়ে ভাবে না।

আর সুমির ব্যাপারে তো কথাই নেই! নিজের আপন খালাত বোন কিন্তু কখনো ওর সাথে এখন পর্যন্ত কথাই হয়নি ভাল করে। আমাকে সবসময় এড়িয়ে যায় মেয়েটা। চোখাচোখি হলেও মুখ ঘুরিয়ে নেয়। ' 'সত্যি?' 'শুধু তাই না। আরেকটা ব্যাপার আছে।

তোমার কাছে সেটা গোপন করব না। ' 'কি সেটা?' 'ও আমার সাথে যেরকম আড়ষ্ট আচরণ করে, তাই আমার অন্যান্য কাজিনরা আমাদের নিয়ে মশকরা করে। প্রায়ই ওদের বলতে শুনেছি, সুমি নাকি আমাকে খুব পছন্দ করে। এমনকি এ ব্যাপারে নাকি ওরা ওর সামনে বলতে ও মুখচোখ লাল করে একটা দর্শনীয় কাণ্ড করেছে!' 'হা হা হা। ভালই বলেছ।

তবে কথাটা কিন্তু একদম ঠিক। মোটেও ভুল নেই। ' 'তুমি জানলে কিভাবে?' 'ক্লাসে ও তো আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। দুজনে আমরা সব বিষয় শেয়ার করি। কিন্তু তোমার ব্যাপারে যে কবার জিজ্ঞেস করেছি, কেমন যেন অন্যমনস্ক হয়ে গেছে ও।

' 'যাহ! কি যে বল। এমনিতেই খুব পিকুলিয়ার মেয়ে ও। কি কারণে কি করেছে, আর তুমি কিনা তা থেকে কি ধরে নিয়েছ!' 'তুমি নিজেই তো একটা পিকুলিয়ার ক্যারেক্টার! নিজের কাজিনদের সাথে পর্যন্ত সম্পর্ক রাখ না আবার অন্যকে বল পিকুলিয়ার! কিন্তু সুমি মেয়েটা মোটেই পিকুলিয়ার না। ও খুবই স্বাভাবিক একটা মেয়ে। ' 'তাই নাকি?' 'অবশ্যই।

এই বয়সী একটা মেয়ের তোমার মত একটা ছেলেকে পছন্দ হওয়াই স্বাভাবিক। ওর-ও তাই হয়েছে। তাহলে ও অন্যরকম হল কিভাবে?' 'ওর কথা ছাড়ো। এইমাত্র যা বললে, তা দিয়ে তুমি কি বোঝাতে চাচ্ছ? এই যে তুমি আমাকে পছন্দ কর, সেটাও তোমার টিন-এজ ইমোশন? তাহলে কি আমার প্রতি তোমার যে ভালবাসা, তা সত্যিকারের ভালবাসা নয়?' 'উফ! তুমি পারোও বটে কথা ঘোরাতে! একটা সামান্য কথা ঘুরিয়ে নিজে নিজেই কতশত মিন করছ! আমি তো জাস্ট বললাম যে তোমাকে দেখে সব মেয়েরাই কেমন যেন হয়ে যায়। তোমাকে ভাল না বেসে থাকতে পারে না।

কিন্তু সেটাতো লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইটের মত ব্যাপার। শুধুই ভাল লাগা, ভালবাসা নয়। কয়েকদিন মেলামেশার পরই সেই ভাল লাগাটা কেটে যায়। তাই বলে কি তোমার সাথে আমার এই এতদিনের ভালবাসা, সেটা মিথ্যে হয়ে যাবে? এটা ভাঙার থাকলে তো কত আগেই ভেঙে যেত!' 'আমি কিন্তু অতটা শিওর হতে পারছি না! কত সম্পর্ক তো দেখেছি পাঁচ-দশ বছর কন্টিনিউ করার পরও ফট করে শেষ হয়ে যাচ্ছে। আর সেখানে তো তোমার সাথে আমার রিলেশনের বয়স এখনো এক বছরও পার হল না!' 'আহ এসব বাজে কথা রাখ তো! সেই তখন থেকে উল্টাপাল্টা কথা বলে চলেছে! আমি কি তোমার কাছ থেকে এইসব কথা শোনার জন্যে ক্লাস ফাকি দিয়ে আসলাম? এর থেকে তো ফিজিক্স স্যরের লেকচার শোনা ভাল ছিল!' 'আচ্ছা আচ্ছা যাও আর বলব না।

কিন্তু এখন তুমি আমাকে একটা কথা বল, সেদিন কম্পিউটারের দোকানে ওরকম নাটক করলে কেন?' 'বা রে! নাটকটা আমি করলাম নাকি তুমি করলে? তুমিই তো আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বললে, তোমার নাকি জন্মদিন তুমি নাকি বার্থডে বয় আরও কত কি!' 'কিন্তু তুমিই তো প্রথম সেটার শুরু করেছিলে। দোকানে গিয়ে আমাকে না দেখার ভান করে আমারই পাশে দাঁড়িয়ে থাকলে!' 'থাকলাম! আমার ইচ্ছা!' 'আসলে তুমিই তো একটা পিকুলিয়ার ক্যারেক্টার। খামোকা সেদিন আমার জন্যে কতগুলা টাকা নষ্ট করলে। ' 'খামোকা করলাম কই! ওটা তো তোমার বার্থডে গিফট ছিল। ' 'কিন্তু তুমিই তো বললে তুমি জানতে ওটা আমার জন্মদিন ছিল না।

' 'তাতে কি হয়েছে? তোমার একটা জিনিস দরকার ছিল, তাই সেটা আমি পূরণ করেছি। আমারও যখন কিছু প্রয়োজন হবে, তুমি তখন সেটা দেবে। ' 'এই রে! তাহলে তো সেরেছে। তোমরা বড়লোক মানুষ। তাই তোমারও প্রয়োজন হবে বড় আর দামি কিছু।

আমি তা কিভাবে দিব তোমাকে?' 'তুমি আসলে ঠিকই ধরেছ। আমি আসলেই তোমার থেকে একটা খুব দামি জিনিস চাই। ' 'কি সেটা?' 'তোমাকে!' এই বলে নিশিতা আমাকে ভরা পার্কের মধ্যে জড়িয়ে ধরল। আহ, কি এক চরম অস্বস্তি। আবার কি নিদারুণ ভালোলাগা! কিন্তু এই ভালোলাগা কি হবে চিরদিনের, চিরন্তন? নাকি অতিথি পাখির মত কদিন থেকে ফের উড়াল দেবে অজানা গন্তব্যে? আর আমায় 'বনের চাতক--মনের চাতক' বানিয়ে আমার মনের দিঘিতে পড়ে থাকবে সেই অচিন পাখির ঝরা পালক! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।