আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

"আজ জিদানের গায়ে হলুদ"

আমার নিজের সম্পর্কে আমার ধারণা নেই :) শায়না খুব ব্যস্ত। আজ সারাদিনে সে একটুও বসার সময় পায়নি । এখনও প্রায় দৌড়ে সারাবাড়িতে জিসানকে খুঁজতে লাগলো । জিসান সামনে পড়তেই শায়না প্রায় চেঁচিয়ে উঠল , "এই বাঁদর, তোকে যে বললাম গাঁদা ফুল কিনতে যা, কই উধাও হলি তুই? " জিসান মুখটা বেঁকিয়ে বলল, " বাবা তো আমাকে লাইটিং এর লোকদের মেইন সুইচ দেখাতে বলল। " শায়না একটু শান্ত হল।

বলল," আচ্ছা, এখন যা। ভালো মত কিনে আনবি। আর এই নে তোর লিস্ট। আংকেলের কাছ থেকে টাকা নিয়ে যা। " বলেই শায়না পাখির মত কোথায় যেন হাওয়া হয়ে গেল।

জিসানের মেজাজ খারাপ হল। বিয়েটা তার ভাইয়ের আর সব কাজ যত ঝামেলা তাকে পোহাতে হচ্ছে। আর বড় ভাইয়া তো মনের সুখে আরাম করছে। এসব ভাবতে ভাবতে সে বাজারের লিস্ট হাতে বের হয়ে গেলো। শায়না কড়া রোদে ছাদে দাঁড়িয়ে প্যান্ডেলের কাজ তদারকি করছে।

এমন সময় ছাদে আরমান ভাই আসলেন। "কি শায়না তুমি তো একাই সব কাজ করে ফেলবে মনে হচ্ছে। " শায়না হাসল। "কি যে বলেন না ভাইয়া। আপনিও তো সকাল থেকে লাফিয়ে বেরাচ্ছেন।

এখন আপনি প্যান্ডেল দেখেন। আমি নিচে গিয়ে বউয়ের স্যুটকেস গুছাতে হেল্প করি। আন্টি আর একা কত করবে। " বলেই নিচে চলে গেলো। আজ আরমানের খুব কাছের বন্ধুর গায়ে হলুদ।

আরমান আর জিদান একই স্কুলে কলেজে পড়েছে। তারপর দুইজন আলাদা ভার্সিটিতে পড়লেও তাদের বন্ধুত্বে কোনো ছেদ পড়েনি। ছুটি হলেই দুই বন্ধু একসাথে হয়ে অনেক মজা করত। শায়না মেয়েটা জিদানের ছোটো খালার মেয়ে। অসম্ভব দুরন্ত একটা মেয়ে।

আর কথা বলতে পটু। জিদানের বিয়ের প্রায় সব কাজেই তার দরকার পড়ছে। জিদানের বোন নেই তাই মেয়েদের ডিপার্টমেন্টে ওই হেড এখন । সন্ধ্যার সময় থেকেই মানুষজন আসা শুরু করেছে। শায়না এখনও রান্নাঘরে দৌড়াদৌড়ি করছে।

ওর খালা বারাবার তাড়া দিচ্ছে," কি রে আর কত। যা গিয়ে শাড়ি পড়ে রেডি হয়ে আয়। " শায়নার ছোটো বোনটা পিছনে পিছনে ঘুরছে। "আপু চলনা। আর কত? শাড়ি পরবি না? তুই পার্লারেও গেলি না।

তোকে আমি সাজিয়ে দেই চল। " বোনের ঘ্যানঘ্যানানিতে বিরক্ত হয়ে শায়না রেডি হতে গেলো। ছাদে লাউড স্পীকারে গান বাজছে। জিদানের বন্ধুরা সবাই মিলে জিদানকে ঘিরে বসে আছে। জিদানের আত্মীয়-স্বজনেরা সব চলে এসেছে।

জিদান জিসানকে ডাকল," এই শোন, শায়না কোথায় রে?" " আপুতো নিচে। রেডি হচ্ছে। " জিসান চলে যেতে্ই আরমান টিটকারি মারলো," আজকে থেকে শায়নার কথা ভুলে যা। এখন অন্যকারো কথা ভাব। " জিদানের মেজাজ একটু খারাপ হল।

"তোর এসব ফাইজলামি আমার ভালো লাগে না। কেউ শুনলে কি ভাববে?" আরমান হাসলো শুধু। জিদান আর শায়নার মধ্যে যা কিছু সব শুধু ও ই জানে এখানে। মেয়েটা জিদানকে খুব ভালোবাসে। কিন্তু জিদান তার ফ্যামিলির মধ্যে ঝামেলা চায়না।

তাই ও শায়নাকে পছন্দ করা সত্তেও কাউকে বলতে পারেনি এই কথা। শায়নাও মেনে নিয়েছে ব্যাপারটা। জিদানের মা বাবা যে পাত্রী দেখেছে তার সাথেই জিদানের বিয়ে আর শায়নাও বাসার মেয়ের মত সেই বিয়ের সব কাজ নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে। আরমান শায়নাকে দেখতে পেলো। লাল রংএর একটা শাড়ি পরেছে শায়না।

আর কপালে লাল বড় টিপ। খুব সুন্দর লাগছে মেয়েটাকে। আরমান ডাকলো ,"এ্যাই শায়না। এইদিকে আসো। " শায়না হাসিমুখে এগিয়ে আসলো।

পিছে তার ছোটোবোন শিমিন। আরমান: "কি বড়দের সাথে গিয়ে বসে আছ? এইখানে এসে বস। তোমার ভাইয়া তো তোমাকে খুঁজতেছে। " শায়না: "কেনো? কি হইছে ভাইয়া? " জিদান একটু অস্বস্তি নিয়ে বলল,"এমনি। তোমাকে দেখতে পাচ্ছিলাম না তাই ।

" শিমিনের দিকে তাকিয়ে জিদান বলল," তুই আমার পাশে বসে থাক। " হলুদ শুরু হল। সবাই জিদানকে হলুদ লাগাচ্ছে। শায়না জিদানের বন্ধুদের সাথে বসে কি সব জানি গল্প করছে আর খিলখিল করে হাসছে। জিদান আড়চোখে ওকে দেখে নিল।

কেন জানি ওর খুব রাগ হচ্ছে। মেয়েটা এত হাসছে কিভাবে? ওর কি একটুও খারাপ লাগছে না? হলুদ শেষের পর শুরু হল ডিজে পার্টি। ছাদের উপর সবাই নাচছে। জিদান তার বন্ধুদের সাথে নাচছে। হঠাৎ খেয়াল হল শায়না কোথায়? খুঁজে দেখে শায়না আরমানের সাথে নাচছে।

ও চোখ ফিরিয়ে নিল। পার্টি প্রায় শেষের দিকে। শায়না ছাদের এককোণে দাড়িয়ে আছে। ওর চোখভর্তি জল। আজ সারাদিন সে অসম্ভব ব্যস্ত থেকেছে।

তার কারণ সে চায়নি ওর কষ্টের ছায়া ওর মুখে একবারও পড়ুক। ওর পাশে আরমান এসে দাড়াল। শায়না চোখের পানি মুছার চেষ্টা করলো। আরমান বলল," এই পানি মুছার চেষ্টা করে লাভ কি? এই পানি কি কখনও থামবে? আজ সারাদিন এত হাসলে তাও কি কষ্ট কমলো?" শায়না বলল," আমার কোনো কষ্ট নে্ই। " পাশে জিদান এসে দাড়িয়েছে।

আরমান চলে গেলো। ওদের দুজনকে একটু একা থাকতে দেওয়া উচিত। জিদান শায়নার পাশে দাড়িয়ে আছে। শায়না অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। আজকের রাতটার পরেই তারা ভিন্ন পথের পথিক হয়ে যাবে।

আকাশের রংটা আজকে মনে হচ্ছে একটু বেশি কালো। সেই কালো রংএর অতল গহীনে আজ হারিয়ে যাবে শায়নার অনেক স্বপ্ন। সামনের পথটা ওর শুধুই একার। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।