আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আরব আমিরাতে বাংলাদেশী নারীদের দুরবস্থা চরমে : বাসাবাড়িতে নির্যাতন ও যৌন হয়রানির শিকার

ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত কাজ করা সত্ত্বেও ভাষা না জানা ও অদক্ষতার দরুন গৃহকর্তাদের যৌন হয়রানিসহ শারীরিক ও মানুষিক নির্যাতনের ফলে সংযুক্ত আরব আমিরাতে কর্মরত বাংলাদেশী নারীদের দুরবস্থা চরমে। ঠিকমত বেতন, চিকিত্সা, খাবার না পেয়ে অনেকে পালিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে চাকরি বা আশ্রয় দেয়ার নাম করে পালিয়ে আসা নারীদের আদম পাচারকারীরা যৌন কাজে বাধ্য করছে। দুবাই, সারজা, আবুধাবীসহ সব এলাকার পতিতালয়গুলোতে বাংলাদেশী মেয়েদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। শুধু ‘টেরা দুবাই’ নামক পতিতালয়ে প্রায় পাঁচ শতাধিক বাংলাদেশী আছে।

সেই সঙ্গে মিসর, লেবানন, ভারত, ফিলিপিন, ইথুপিয়া, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, ঘানা, নাইজেরিয়ার মেয়েরাও রয়েছে। তারা গৃহকর্তা এবং ঘরের অন্যান্য সদস্য দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে এ ব্যবসায় নেমেছে। পুরো দেশজুড়ে প্রায় ১০ হাজারের মতো বাংলাদেশী মেয়ে মদের দোকানে বা হোটেলে ড্যান্সার হিসেবে কাজ করছে। শুক্রবার কর্মবিরতি থাকায় আমিরাতের পতিতালয়গুলোতে ভোট কেন্দ্রের মতো লাইন দিতে দেখা যায় খদ্দেরদের। পনের থেকে পঁচিশ বছরের মেয়েদের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি।

অনেকে প্রতি রাতে হাতবদল হয় স্থানীয় আরবি ও বিদেশিদের ভিলা বাড়ি বা হোটেলগুলোতে। যাদের বয়স খুব কম তাদের যৌনপল্লীতে স্থায়ীভাবে বিক্রি করে দেয়। অনেক দালাল বাসা ভাড়া করে এক রুমের মধ্যে হার্ডবোড কিংবা পর্দা লাগিয়ে আট থেকে দশটি কক্ষ করে নির্বিকারে চালাচ্ছে এ ব্যবসা। জনপ্রতি দশ দিরহামের বিনিময়ে প্রকাশ্যে খদ্দের ডেকে দিচ্ছে বেকার শ্রমিকরা। পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন তেমন গুরুত্ব না দেয়ায় এ ব্যবসা ক্রমেই বিস্তার লাভ করছে।

যারা একেবারে নতুন তাদের মোবাইল, ঘড়ি, মানিব্যাগসহ সর্বস্ব কেড়ে নিচ্ছে পতিতা বা তাদের দালালরা। অনেকে এইডসসহ জটিল রোগে আক্রান্ত হলেও তেমন কোনো চিকিত্সা পাচ্ছে না। হাসপাতালগুলোতে বাংলাদেশী মেয়ে রোগীদের সংখ্যাই বেশি। দুবাইতে লাইসেন্স নিয়েও চলছে দেহ ব্যবসা। সাধারণ মেয়েরা বিশ থেকে ত্রিশ দিরহাম আর মিসরীয় বা লেবাননী মেয়েরা তিনশ’ থেকে চারশ’ দিরহাম নিয়ে থাকে।

তবে তারা বেশিরভাগ কলগার্ল হিসেবে পরিচিত। ধনীরাই তাদের নিয়মিত কাস্টমার। কলগার্ল হিসেবে জুমারা নামক সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে গিয়ে প্রতিদিনই গ্রেফতার হচ্ছে অনেক পতিতা। কতিপয় বাংলাদেশী শ্রমিক দেশে বউ ছেলেমেয়ে থাকা সত্ত্বেও বিদেশি মেয়েদের খপ্পরে পরে সর্বস্ব হারাচ্ছে। পরিবার ও দেশ ভুলে গিয়ে মাস শেষে যা বেতন পায় তা এ পথেই খরচ করছে বলে জানান আবুধাবীতে কর্মরত কুমিল্লা জেলার জসিম উদ্দিন।

আবার কেউ কেউ যৌন সম্পর্কে জড়িয়ে বিয়ে করতেও বাধ্য হচ্ছে। এছাড়া অনেক মেয়েও বাসাবাড়ির পুরুষদের বিয়ে করছে। বাসাবাড়ি, হাসপাতাল, বিউটিপার্লার, ছোটদের দেখাশোনার ভিসার নাম করে ট্রাভেল এজেন্সি আর আদম পাচারকারীরা নারীদের জিম্মি করে ফেলেছে। নানা কৌশলে মাসিক বেতন ও সতীত্ব কেড়ে নিচ্ছে। অধিকাংশ নারী পতিতালয়গুলোতেও চরম নির্যাতনের স্বীকার।

কষ্টার্জিত টাকা হুন্ডির মাধ্যমে দেশে পাঠালে অনেক সময় গায়েব করে দেয় দালালচক্র। অনুসন্ধানে জানা যায়, আরব আমিরাতে কর্মরত বাংলাদেশী নারীদের চল্লিশভাগ বাসাবাড়ি ও পতিতালয়ে যৌন হয়রানির স্বীকার। পঁয়ত্রিশভাগ নারী ঠিকমত বেতন, খাবার, চিকিত্সাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়। বাকি পঁচিশভাগ বৃদ্ধ নারী অধিক পরিশ্রম করা সত্ত্বেও পাঁচ থেকে ছয় বছরেও দেশে যেতে পারছে না। তাছাড়া বাংলাদেশ দূতাবাসের কাছে অভিযোগ করলে মাসের পর মাস পেরিয়ে গেলেও কোনো সমাধান পায় না বলে জানান চিটাগাং জেলার মর্জিনা।

আমিরাতে বাংলাদেশীদের সব ধরনের ভিসা বন্ধ থাকা গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশ প্রশাসন ডেড়া, সারজা, দুবাই, রাসুল খিমা, আজমান, অমল গইন, ফজিরা, হাসন ডিব্বা, আলাইন, আবুধাবীসহ অন্যান্য এলাকায় অবস্থানরত বাংলাদেশীরা কড়া নজরে। জুলুম-নির্যাতনে অতীষ্ঠ হয়ে এর মধ্যে ভারত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা, ইথুপিয়া এমনকি সোমালিয়া পর্যন্ত নারী শ্রমিক পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে। আগামীতে যদি শুধু মধ্যপ্রাচ্যে নারী শ্রমিক পাঠানো বন্ধ করে দেয়া হয় তবে হয়তো বাংলাদেশের সুনাম আরও বৃদ্ধি পাবে বলেও জানান স্থানীয় শ্রমিকরা। তাছাড়া বিশ্ব মিডিয়ার নারীদের অপরাধ সমূহ ব্যাপক আকারে তুলে ধরায় সব প্রবাসী ক্ষুব্ধ। Click This Link  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৫ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।