"You may like a situation which is not good for you And You may dislike a situation which is good for you." (Al- Quran)
এ বছর সাহিত্যে নোবেল পেয়েছেন চীনা লোককাহিনীর লেখক মো ইয়ান। মো ইয়ান নামের অর্থ হল “কথা বলবেন না”। জর্জ ডাব্লিউ বুশ যেবার শান্তিতে(!) নোবেল পেলেন এরপর থেকে নোবেল প্রাইজ কে পেল আর পেল না সে বিষয়ে আমার আর অত আগ্রহ নেই।
এখন প্রশ্ন হতে পারে যে তাহলে এবারের সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী নিয়ে লিখছি কেন? আসলে মো ইয়ান এর কোন বই পড়ার সুযোগ হয় নি। এমনকী এর আগে তার নামও শুনিনি।
তাই আসলে তাকে নিয়ে লিখছি না লিখছি তার নাম মো ইয়ান এর অর্থ অর্থাৎ “কথা বলবেন না” নিয়ে।
আমার শুভাকাঙ্খী ও “অ”শুভাকাঙ্খী সবাই একটি বিষয়ে একমত আর তা হল আমি না কী বেশি কথা বলি।
এর প্রতিক্রিয়ায় আমি শুধু বলতে পারি “হতে পারে”।
(দুই শব্দে বললাম। জ্ঞানী পাঠকরা এখানে “ইউ লুজ” গল্পটা স্মরণ করতে পারেন।
)
আমার ধারণা বাঙালী মাত্রই বেশি কথা বলে। যেমন- মঞ্চ পেয়ে তারা একবার দাঁড়িয়ে গেলে আর বসতে চায় না!(কোন দুর্মুখ বলে বাঙালী আরামপ্রিয়?!)
আবার হালের টিভি চ্যানেলের মাইক পেলে নিজের সম্পত্তি মনে করে কথা বলা শুরু করে; উপস্থাপক মাইক বা ফ্লোর সরিয়ে নিতে চাইলে টানাটানি শুরু করে দেয়, মাইক সরে গেলেও মুখ চলতে থাকে!অথচ তার পরের জন ইতিমধ্যেই কথা বলা শুরু করেছে!
কোন কোন টক শোতে উপস্থাপক হয়ত বলছেন,”দর্শক আমরা চলে এসেছি অনুষ্ঠানের শেষ প্রান্তে… “ কে শোনে কার কথা! অতিথি দুজন তখনো সমানে কথা বলে চলেছে!! আরও যদি ধরেন এফ এম রেডিও নামক এক উদ্ভট তরঙ্গের কথা, সেখানে কী হয়? যে বা যারা যত বেশি কথা যত অল্প সময়ে বলতে পারে তারাই চাকরি পাবে!
এবার আসেন আড্ডার বিষয়ে। বাঙালী না কী আড্ডাপ্রিয়। আড্ডায় কী হয়? যদি ভাবেন খালি মালপানি খাওয়া হয় তবে ভুল করবেন। আড্ডার মূল বিষয় হল কথা বলা।
অনেক কথা বলা হয়। একেবারে যা তা বলা হয়!
হেড বা বেহেড সবাই সেখানে কথা বলে! সব আড্ডার সব কথা যদি পরদিন পত্রিকায় ছাপা হত তবে শত হাজার লোক প্রতিদিন রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় অভিযুক্ত হত!
মোবাইলের কথা আর কী বলব! যখন মিনিটপ্রতি ৭ টাকা ছিল তখন এদেশের মানুষ যে পরিমাণ কথা বলেছে আর এখন একটাকা দেড়টাকা মিনিটে কী পরিমাণ কথা বলে তা সহজেই অনুমেয়।
এবার বলি ফেসবুকের কথা। দিনে গড়ে ১০ টা স্ট্যাটাস (মনের কথা) না দিলে অনেকের রাতে ঘুমই হয় না! অন্যের স্ট্যাটাস আর ছবিতে কমেন্ট অথবা পেজের কন্টেন্ট এগুলোর মন্তব্যসহ যদি ধরি তবে দেখা যাবে আমরা প্রতিমূহুর্ত কথার মধ্যেই আছি। হয় বলছি না হয় শুনছি।
কথা বিহীন বাঙালী জীবন কল্পনা করা যায় কী?
এবার লেখকদের কথা নিয়ে কথা বলব। হ্যাঁ আমিই বলব। কারণ আমি সামান্য লিখি। আমার ধারণা “সামান্য” লেখক এবং “অসামান্য” লেখক সবাই বেশি কথা বলে!এই যে লেখকরা শত শত হাজার হাজার পৃষ্ঠা লেখেন এগুলো কী? সবই কথা!এজন্য অনেক লেখককে স্পেশাল সম্মান দিয়ে বলা হয় “কথাশিল্পী”!
তাহলে যেটা দাঁড়াল তা হল কথা বলা একটা শিল্প। উদাহরণ হিসেবে অস্কার ওয়াইল্ডের কথা বলা যায়… যিনি কথা বলাকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যই বেশি বিখ্যাত!
কথা বলা বাঙালীর ঐতিহ্য।
কিংবা এভাবেও বলা যায় কথা বলা বাঙালীর শিল্প সংস্কৃতিরই একটা অংশ!
নোবেলজয়ী লেখক মো ইয়ান (কথা বলবেন না) দিয়ে শুরু করেছিলাম অথচ কত অপ্রাসঙ্গিক কথা বলে ফেললাম!আমার শুভাকাঙ্খী ও “অ”শুভাকাঙ্খী সবাই তাহলে ঠিকই বলে!তাহলে “অ”শুভাকাঙ্খীদেরও কী “শুভাকাঙ্খীর” তালিকায় গণ্য করব? ভেবে দেখতে হবে!
অনেক কথাই বললাম কিন্তু নীতিকথা(এখানেও কথা!) ই বলা হল না। যে যাই বলুক কথা কম বলাই উত্তম। সর্বোৎকৃষ্ট পন্হা।
পরিশেষে আমার লেখার শিরোনাম “মো ইয়ান, তাহলে নোবেল পেয়েছেন…” এটাকে পুরো বাংলায় অনুবাদ করে দিচ্ছি “কথা বলবেন না, তাহলে নোবেল পেয়েছেন…”
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।