ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলার শুভাঢ্যা খাল আবারও দখল ও দূষণের কবলে পড়েছে। খাল দখল করে কমপক্ষে ২১টি টংঘর তুলে দোকান হিসেবে ভাড়া দিয়েছেন প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। এর মধ্যে উপজেলার আগানগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও আগানগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য শেখ জুয়েল ১৫টি দোকান তুলে ভাড়া দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
খালের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকায় ময়লা-আবর্জনা ও পোশাক কারখানার টুকরা বর্জ্য ফেলে ধীরে ধীরে ভরাট করা হচ্ছে। এতে খালের স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে।
দূষিত পানির দুর্গন্ধ ও মশার উৎপাতে চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন খালের দুই পাড়ের বাসিন্দারা।
উপজেলা প্রশাসন জানায়, ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা শুভাঢ্যা খালে বুড়িগঙ্গা নদীর মুখ থেকে শুরু করে চর কালীগঞ্জ ও গোলাম বাজার এলাকা পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকায় উভয় পাশে অভিযান চালান। উচ্ছেদ করা হয় ১৮৬টি ছোট-বড় অবৈধ স্থাপনা। এরপর খালটি খনন করে সেখানে নাব্যতা সৃষ্টি করে সরকার। পরে গত বছরের জুলাই মাসের শেষের দিকে উপজেলা প্রশাসন ৫৪ লাখ ৮৮ হাজার টাকা ব্যয়ে খাল উদ্ধার ও খননের কাজ শুরু করে।
মাস খানেকের মধ্যে কাজ শেষ হয়। কিন্তু কয়েক মাস যেতে না-যেতেই দখল ও দূষণের ফলে খালটি আগের অবস্থায় ফিরে আসে।
দখল: গত সোমবার শুভাঢ্যা খাল ঘুরে দেখা গেছে, নয়া শুভাঢ্যায় ১৩টি, কদমতলীতে তিনটি, আমবাগিচায় দুটি, চর কুতুবে দুটি ও পূর্ব আগানগর জোড়া সেতুসংলগ্ন জেলা পরিষদ মার্কেটের পেছনে খালের ওপর একটি টিনশেডের টং দোকান রয়েছে। এর মধ্যে নয়া শুভাঢ্যা ও আমবাগিচা এলাকার ইউপি সদস্য ও আওয়ামী লীগের নেতা শেখ জুয়েল সেখানে ১৫টি দোকান তুলেছেন বলে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন।
এসব দোকানের মধ্যে বেশির ভাগই ক্ষুদ্র পোশাক কারখানা।
রয়েছে মুদি ও জেনারেটর ভাড়া দেওয়ারও দোকান। একেকটি দোকান থেকে মাসে তিন থেকে চার হাজার টাকা করে ভাড়া তোলা হয়।
নয়া শুভাঢ্যায় সুমন গার্মেন্টসের কর্মচারী সোহেল মিয়া জানান, বছর খানেক আগে আওয়ামী লীগের নেতা জুয়েলের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা অগ্রিম দিয়ে ভাড়া নিয়েছেন তাঁরা।
শেখ জুয়েল দাবি করেন, ‘আমি একটি টংঘর তুলে নামমাত্র মূল্যে ভাড়া দিয়েছি। খালের ওপর আরও ২০-২৫টি দোকান তুলে স্থানীয় প্রভাবশালীরা ভাড়া দিয়েছে।
’ খাল দখল ও দূষণ রোধে এলাকাবাসীর স্বার্থে তিনি সহযোগিতা করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন।
ভরাট: সরেজমিনে দেখা গেছে, পূর্ব আগানগর জোড়া সেতু, কালীগঞ্জ বাজার-সংলগ্ন জোড়া সেতু, গোলাম বাজার, বেগুনবাড়ী ও নয়া শুভাঢ্যা এলাকায় শুভাঢ্যা খালে পোশাক কারখানার টুকরা কাপড়, বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য ও পলিথিন।
কথা হয় পূর্ব আগানগর খেয়াঘাটের মাঝি আমির শেখের সঙ্গে। তিনি বললেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে খাল খনন করায় খালে নাব্যতা সৃষ্টি হয়। আমরা খুব সহজেই নৌকা চালাতে পারতাম।
লোকজনও অতি সহজে যাতায়াত করতেন। কিন্তু খালটি আবার ভরাট হয়ে যাওয়ায় আমরা আর নৌকা চালাতে পারছি না। ’
ঝাউবাড়ী এলাকার বাসিন্দা আবদুর রহমান বলেন, ‘খালে ময়লা-আবর্জনা ফেলায় মশা-মাছির উৎপাত ও দুর্গন্ধে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। ’
খালে পোশাক কারখানার বর্জ্য ফেলার ব্যাপারে কথা হয় কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ও দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মিলন খানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘খালে যাতে কেউ ময়লা-আবর্জনা ও টুকরা কাপড় ফেলতে না পারেন, সে জন্য সমিতির পক্ষ থেকে নিজস্ব খরচে ভ্যানগাড়ির মাধ্যমে বর্জ্য সংগ্রহ করে অন্যত্র ফেলার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
আর এই খাল উদ্ধার হলে এর সুফল ব্যবসায়ীরাই ভোগ করবেন। তাই আমরাও চাই, অতিসত্বর খালটি দখল ও দূষণমুক্ত করা হোক। ’
কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. বাবুল মিয়া বলেন, ‘যেকোনো মূল্যে খালটি উদ্ধার করা হবে। খাল দখল ও দূষণমুক্ত করে পানিপ্রবাহ সৃষ্টির জন্য অচিরেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।