আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ডা. নিতাইয়ের খুনিদের সাগর রুনির হত্যাকারী ঘোষণা : অনেক প্রশ্নের জবাব না দিয়েই সরাষ্ট্রমন্ত্রী আসন ত্যাগ করলেন : দারোয়ান হুমায়ুনকে গ্রেফতারে ১০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা

গনজাগরনের মাধ্যেমে পরিবর্তন সম্ভব....মানুষের চিন্তার পরিবর্তন করাটা জরুরি ....বুদ্ধিবৃত্তিক পুনরজাগরনে বিশ্বাসী চিকিত্সক নেতা ডা. নিতাইর খুনিদেরই সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারওয়ার ও মেহেরুন রুনির হত্যাকারী হিসেবে ঘোষণা করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, সাগর-রুনির খুনি হিসেবে তদন্তকারী দল এ পর্যন্ত ৮ জনকে শনাক্ত করেছে। এর মধ্যে ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার দেখানো রফিক, বকুল, রিন্টু ও সাঈদ হচ্ছে পেশাদার খুনি। এরা সাগর-রুনিকে হত্যা করেছে।

পরে এরাই ডা. নারায়ণ চন্দ্র দত্ত ওরফে নিতাইকেও হত্যা করেছে বলে দাবি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর। ডা. নিতাই হত্যা মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখানোর পর এখন সাগর-রুনি হত্যা মামলায়ও তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করার প্রক্রিয়া চলছে বলে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ওই দাবিকে তাত্ক্ষণিকভাবেই ‘আরেক জজমিয়া’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন সাগর-রুনির পরিবার। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর মহীউদ্দীন খান আলমগীর ১০ অক্টোবরের মধ্যে সাগর-রুনির হত্যাকারীদের গ্রেফতারের ঘোষণা দেন। নির্ধারিত তারিখের এক দিন আগেই গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে হত্যাকারীদের শনাক্তকরণ ও গ্রেফতারের বিষয়ে তিনি ঘোষণা দেন।

তিনি বলেন, আমরা জজমিয়া নাটকে বিশ্বাসী নই। এ হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে জনগণের দৃষ্টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য আমরা জজমিয়া নাটক সাজাইনি। তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃতদের ডিএনএ পরীক্ষাসহ তদন্তের সনাতন পদ্ধতি এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে খুনিদের শনাক্ত ও গ্রেফতার করা হয়েছে। গতকালের সংবাদ সম্মেলনে পরস্পর বিরোধী কিছু বক্তব্যও রাখেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, তদন্ত এখনও শেষ হয়নি।

আবার বলেন, প্রকৃত খুনিদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। তবে মোটিভ সম্পর্কে এখনও কিছু নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, সাগর রুনি হত্যার পরপরই ডিবি বলেছিল, তারা মোটিভ সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছে। কিন্তু খুনিদের চিহ্নিত করতে পারেননি। গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঠিক তার উল্টো কথা বলেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর তথ্যমতে, গ্রেফতারকৃত অপর তিনজন হচ্ছে গাড়িচালক (নিহত ডা. নিতাইয়ের ব্যক্তিগত গাড়িচালক) কামরুল, সাগর-রুনির বাড়ির দারোয়ান পলাশ ওরফে রুদ্র ও সাগর-রুনিদের পারিবারিক বন্ধু তানভির। বাড়ির অপর দারোয়ান হুমায়ন কবির ওরফে এনামুল পলাতক রয়েছে। গতকালের সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সাগর-রুনি যে বাসায় ভাড়া থাকত, সেই বাসার পলাতক হুমায়ুন ওরফে এনামুলকে ধরিয়ে দিলে ১০ লাখ টাকা পুরস্কার দেয়া হবে। পলাতক দারোয়ান হুমায়ুন ওরফে এনামুলকে এর আগেও একবার ডিবি পুলিশ আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দিয়েছে। এখন আবার তাকে গ্রেফতারের জন্য ১০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণার কারণ কী? এমন প্রশ্ন করার সঙ্গে সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তার নির্ধারিত আসন ত্যাগ করে উঠে যান।

নিহত সাগর ও রুনির পরিবারের সদস্যরা বলেছেন, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। একে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্যই ছিঁচকে চোরদের গ্রেফতার করা হয়েছে। তাছাড়া তানভির নামে সাগর-রুনির কোনো পারিবারিক বন্ধু নেই বলেও জানান উভয়ের পরিবারের সদস্যরা। সাগরের মা সালেহা মনির বলেন, পেশাদার খুনিরা যদি খুন করতে আসত তাহলে অস্ত্র নিয়ে আসত। পাটি দিয়ে খুন করত না।

তাছাড়া দারোয়ান যদি পেশাদার খুনি হয় তাহলে আগে কেন তাকে গ্রেফতার করা হলো না। সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ ঘোষণাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন সাংবাদিক নেতারা। সাংবাদিক নেতারা বলেন, সরকারের নানামুখী কর্মকাণ্ডে আমাদের কাছে আগেই প্রমাণিত হয়েছিল, এ হত্যাকাণ্ড নিয়েও সরকার ‘জজমিয়া’ কাহিনীর অবতারণা করতে যাচ্ছে। শেষপর্যন্ত আমাদের সে আশঙ্কাই সত্য হলো। প্রসঙ্গত, গত ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর রাজাবাজারের সুরক্ষিত অ্যাপার্টমেন্টে নৃশংসভাবে খুন হন সাংবাদিকদের প্রিয় মুখ সাগর সারওয়ার ও মেহেরুন রুনি।

নির্মম এ হত্যাকাণ্ডের আগের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেফতার ও হত্যার প্রকৃত রহস্য উন্মোচনের ঘোষণা দেন। এরপর পুলিশের আইজি প্রণিধানযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে বলেও জানান। এ হত্যার বিচারের দাবিতে সাংবাদিকরা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলেন। এরই একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কারও বেডরুম পাহারা দেয়া সম্ভব নয় বলেও ঘোষণা দেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনের বিদায়ের পর ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর দায়িত্ব নেয়ার ক’দিনের মাথায় সাংবাদিক নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে ১০ অক্টোবরের মধ্যে খুনিদের গ্রেফতার ও প্রকৃত রহস্য উন্মোচনের অঙ্গীকার করেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এ ঘোষণা অনুযায়ী নির্ধারিত তারিখের একদিন আগেই গতকাল সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। সাগর-রুনি খুনের ৬ মাস পর গত ২৪ আগস্ট গভীর রাতে নিজ বাসায় খুন হন চিকিত্সক নেতা ডা. নিতাই। চিকিত্সকদের অব্যাহত আন্দোলনের একপর্যায়ে ডা. নিতাই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে র্যাব গত ২ সেপ্টেম্বর ক’জনকে গ্রেফতার করে। তাদের গ্রেফতারের পর বলা হয়েছে যে, ডা. নিতাইর ব্যক্তিগত গাড়িচালক কামরুল হাসান সম্পত্তি আত্মসাতের উদ্দেশে ভাড়াটে ডাকাতদের দিয়ে তাকে খুন করায়। গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উভয় খুনের দায়ে অভিন্ন খুনিদের চিহ্নিত করে।

উল্লেখ্য, সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড নিয়ে শুরু থেকেই অনেক সন্দেহজনক ঘটনা ঘটেছে। অনলাইনে খুনিদের সম্পর্কে নানা তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। এ নিয়ে নিউইয়র্কে এক সংবাদ সম্মেলনে এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান বলেছিলেন, রুনির পরকীয়ার বলি হয়েছে ওই সাংবাদিক দম্পতি। তার কাছে এর প্রমাণ আছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তার বক্তব্য নিয়ে সারাদেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দাবি : ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর যুক্তি পেশ করে বলেন, আমাদের আজকের এ সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, সচিব, র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত রয়েছেন। এতেই প্রমাণিত হয় যে, আমরা এ মামলাটির বিষয়ে যথেষ্ট যত্নবান। ডিবি পুলিশ প্রথমে এ মামলার তদন্ত করেছে। পরে উচ্চ আদালতের নির্দেশে র্যাব এ মামলার তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। তদন্তের বিষয়ে সনাতন পদ্ধতির পাশাপাশি অত্যাধুনিক প্রযুক্তিও ব্যবহার করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের দুটি খ্যাতিমান ল্যাবরেটরিও ব্যবহার করা হয়েছে। এর মাধ্যমেই প্রকৃত খুনিদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, তদন্ত টিম ৮ জনকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। এর মধ্যে ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের বিচারের আওতায় আনলে অনেক রহস্য উন্মোচন হবে।

তিনি বলেন, গ্রেফতার করা ৭ জনের মধ্যে ৪ জন পেশাদার খুনি। অপর তিনজনের মধ্যে তানভির সাগর-রুনি পরিবারের পুরনো বন্ধু। একজন গাড়িচালককেও হত্যাকারী হিসেবে শনাক্ত করে গ্রেফতার করা হয়েছে। দুই দারোয়ানের মধ্যে একজনকে গ্রেফতার করা সম্ভব হলেও অপরজন পলাতক রয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতি সাংবাদিকদের প্রশ্ন : এ হত্যার প্রকৃত মোটিভ সম্পর্কে কিছু জানা গেছে কিনা? সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মোটিভ সম্পর্কে এখনও কিছু নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ হলেই প্রকৃত মোটিভ সম্পর্কে জানা যাবে। আপনি বলেছেন গ্রেফতারকৃতরা পেশাদার খুনি। তারা কি নিজেরাই খুন করেছে, নাকি তাদের কেউ ভাড়া করে খুনের কাজে লাগিয়েছে? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়টি তদন্তের পরই বলা যাবে। আপনি এর আগে ১০ অক্টোবরের মধ্যে খুনিদের গ্রেফতারের কথা বলেছিলেন।

সে কথা রাখতেই কি আরেকটি জজ মিয়া নাটক সাজিয়েছেন? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা জজ মিয়া নাটকে বিশ্বাসী নই। প্রকৃত ঘটনা আড়াল করে জনগণের দৃষ্টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য আমরা জজ মিয়া নাটক সাজাইনি। সাগর-রুনি খুন হন ৮ মাস আগে। অপরদিকে ডা. নিতাই খুন হন গত ২৪ আগস্ট। উভয় খুনের দায়ে একই ব্যক্তিদের গ্রেফতার করা হয়েছে।

উভয় ঘটনা মিলে যাওয়ার কারণ কি? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি এখনও তদন্তাধীন। তদন্ত শেষ হওয়ার পরই সবকিছু পরিষ্কার হবে। চিকিত্সক নেতা ডা. নিতাইর গাড়িচালক কামরুল কেন সাংবাদিক সাগর-রুনিকে হত্যা করতে গেল? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখনও তদন্ত শেষ হয়নি। তদন্তের স্বার্থেই অনেক কিছু প্রকাশ করা যাচ্ছে না। আপনার দাবি অনুযায়ী গ্রেফতার পেশাদার খুনিরা সাগর-রুনিকে হত্যার পর দীর্ঘদিন পলাতক থেকে আবার ডা. নিতাইকে খুন করেছে।

ডা. নিতাইকে খুন করার পর তাদের গ্রেফতার করা হলো। কিন্তু সাগর-রুনিকে হত্যার পর তাদের গ্রেফতার করা হলো না কেন? এটা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতা কিনা? এ প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতা নয়। প্রথমে ডিবি তদন্ত করেছে। পরে উচ্চ আদালতের আদেশে র্যাব তদন্ত করে ঘটনা উদঘাটনের চেষ্টা করছে। আপনি দাবি করেছেন যে, গ্রেফতারকৃতরা পেশাদার খুনি।

কিন্তু এর আগে সাগর-রুনির মেডিকেল রিপোর্টে বলা হয়েছে খুনিরা পেশাদার নয়। সাগরের দেহে ২৫টি আঘাতের চিহ্ন ছিল বলে তাতে বলা হয়েছে। পেশাদার খুনিরা এক আঘাতে হত্যা না করে কেন ২৫টি আঘাতে তাকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করল? সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তদন্ত এখনও শেষ হয়নি। তদন্ত শেষেই সবকিছু পরিষ্কার হবে। সাগর-রুনির বাসা থেকে তাদের ব্যবহৃত ল্যাপটপ ছাড়া আর কিছুই চুরি হয়নি।

তাহলে এটাকে চুরি কিংবা ডাকাতির ঘটনা বলা হচ্ছে কেন? তাছাড়া তাদের খোয়া যাওয়া ল্যাপটপ উদ্ধারের বিষয়ে কোনো অগ্রগতি আছে কিনা? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ঘটনাকে আমি চুরি কিংবা ডাকাতি হিসেবে উল্লেখ করিনি। তদন্ত সংস্থা খোয়া যাওয়া জিনিসপত্র উদ্ধারে চেষ্টা করছে। সময় মতো সবকিছুই আলামত হিসেবে আদালতে পেশ করা হবে। পলাতক দারোয়ান হুমায়ুন ওরফে এনামুলকে এর আগেও একবার ডিবি পুলিশ আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দিয়েছে। এখন আবার তাকে গ্রেফতারের জন্য ১০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণার কারণ কি? এ প্রশ্নের সঙ্গে সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তার নির্ধারিত আসন ত্যাগ করে উঠে যান।

মর্মান্তিক সেই হত্যাকাণ্ড : গত ১১ ফেব্রুয়ারি রাতের যে কোনো এক সময় রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজার এলাকার ৫৮/এ/২ নম্বর ভবনের এ-৪ ফ্ল্যাটে খুন হন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার ও এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন রুনি। সাগরের শরীরে ২৫টি ও মেহেরুনের পেটে তিনটি ছুরিকাঘাত করে নৃশংসভাবে তাদের হত্যা করা হয়। পরদিন সকালে ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ব্যাপারে নিহত রুনির ভাই নওশের আলম রোমান বাদী হয়ে শেরেবাংলা থানায় ‘অজ্ঞাত পরিচয়’ ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। শেরেবাংলা থানা পুলিশের কাছ থেকে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি পুলিশ) কাছে মামলা তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় প্রথমে।

তদন্তে কোনো অগ্রগতি না থাকায় দেশ বিদেশে সমালোচনার একপর্যায়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি উচ্চ আদালতে একটি রিট আবেদন করা হয়। আদালত ২২ মার্চ মধ্যে সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য পুলিশের আইজিকে নির্দেশ দেন। গত ২০ মার্চ অগ্রগতি প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয়া হয়। এ প্রতিবেদন দেখে আদালত অসন্তোষ প্রকাশ করেন এবং ডিসি-ডিবি মনিরুল ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রবিউল আলমকে ১৮ এপ্রিল তলব করেন। ১৮ এপ্রিল তারা আদালতে হাজির হয়ে ব্যর্থতার দায় স্বীকার করেন।

এরপর মামলাটি ডিবি থেকে র্যাবে হস্তান্তরের জন্য পুলিশের আইজিকে নির্দেশ দেন আদালত। তদন্তের দায়িত্ব পেয়ে হত্যাকাণ্ডের ৭৫ দিন পর ২৬ এপ্রিল আজিমপুর কবরস্থান থেকে সাগর-রুনির লাশ তোলা হয় ভিসেরা রিপোর্ট তৈরি করতে আলামত সংগ্রহের জন্য। ২৯ মে দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাওয়া যায়। সেখান থেকে কোনো অগ্রগতির খবর জানাতে পারেনি র্যাব। এরপর নিহতদের ডিএনএ টেস্টের জন্য নমুনা পাঠানো হয় যুক্তরাষ্ট্রে।

এরপর চাঞ্চল্যকর মামলা হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। গত ২১ জুন মাহফুজুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করে র্যাব। কারওয়ানবাজারে এটিএন বাংলা কার্যালয়ে গিয়ে মাহফুজুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করে র্যাবের তিন সদস্যের একটি টিম। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা এটিএন কার্যালয়ে অবস্থান করেন র্যাবের তিন সদস্যের তদন্ত দল। এ সময় র্যাব সদস্যরা এটিএন বাংলা চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমানের কাছ থেকে একটি ভিডিও ফুটেজ উদ্ধার করে।

এছাড়া রুনির বেশ কয়েকজন সহকর্মীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেন র্যাব কর্মকর্তারা। র্যাব জানায়, তারা এ মামলা তদন্ত করছে। তাই এটিএন কার্যালয়ে যাওয়া ছিল তাদের রুটিন কাজ। তদন্ত নিয়ে যত কথা : তদন্তের শুরু থেকেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বিভিন্ন সময় বিভ্রান্তিমূলক ও স্ববিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন। সাংবাদিক দম্পতি হত্যাকাণ্ডের পর সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বলেছিলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেফতার করা হবে।

এরপর তিনি বলেছিলেন, খোদ প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিক দম্পতি হত্যা মামলার বিষয়টি তদারকি করছেন। পুলিশ এ মামলা ‘ধামাচাপা’ দেবে এমন আশঙ্কা অমূলক। তিনি এও বলেছেন, আপনারা অপেক্ষা করুন, যে কোনো সময় সুখবর শুনতে পাবেন। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু চট্টগ্রামে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডে জামায়াত-শিবির জড়িত রয়েছে। পুলিশের ওপর আস্থা রাখতে বলেছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার বেনজির আহমেদ।

পরে তিনি বলেছিলেন, ডেডলাইন দিয়ে এসব হয় না। গোয়েন্দা পুলিশের তদন্ত চলাকালে ডিসিডিবি মনিরুল ইসলাম দাবি করেছিলেন তদন্তে গতি বেড়েছে। ডিএমপির মিডিয়া সেলে সংবাদ সম্মেলন করে ডিসি ডিবি মনিরুল ইসলাম বলেছেন, সাংবাদিক দম্পতি হত্যারহস্য উন্মোচন সময়ের ব্যাপার। তিনি আরও বলেছিলেন, তথ্য যাচাই-বাছাই করে বেশ কয়েকজনকে সন্দেহের তালিকায় রাখা হয়েছে। শতভাগ নিশ্চিত হওয়ার পরই তাদের গ্রেফতার করা হবে।

কিন্তু এতো কিছুর পরও তারা আদালতে গিয়ে এ মামলা তদন্তে নিজেদের ব্যর্থতা স্বীকার করে। এদিকে বিদেশে এক অনুষ্ঠানে সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ড নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেন এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান। এ হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে তার কাছে অনেক তথ্য ও ভিডিওচিত্র রয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। একই সঙ্গে সাগর-রুনির ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও আপত্তিকর মন্তব্য করেন তিনি। এ নিয়ে সাংবাদিক সমাজ প্রতিবাদ করে।

দুই গার্ডকে আটক করে ছেড়ে দেয় ডিবি : ভবনের দুই সিকিউরিটি গার্ড ও ম্যানেজারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করার পরও ছেড়ে দেয় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ডিবি বলেছিল, জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে এ হত্যাকাণ্ডের কোনো ক্লু পাওয়া পায়নি। হত্যাকাণ্ডের সাতদিন পর ডিবির ডিসি (উত্তর) মাহবুবর রহমান বলেছিলেন, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেয়া ওই ভবনের গার্ড হুমায়ুন কবীর, পলাশ ওরফে রুদ্র পাল এবং ভবনের ম্যানেজার আবু তাহেরকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের পরদিন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের আটক করা হয়েছিল। প্রয়োজনে তাদের আবারও ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

এদের মতো আরও বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কিন্তু কারও কাছ থেকে তথ্য পাওয়া যায়ানি। সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের পর গোয়েন্দা পুলিশের আটক করা সেই দুই গার্ডকেই এখন হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বলে দাবি করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।