কাঁদছো !! কান্নাতে তোমাকে দারুণ দেখায় ! জানালার গা ঘেষে আমার টেবিল, আর তাতে আমি প্রতিদিন ডায়রী লিখে যাই। জানালা দিয়ে তাকালে আমি খুঁেজ পাই নীল আকাশের বাদামী সুর্য আর ঝিরঝিরি বাতাস। কখনো সখনো অচেনা ফুলের গন্ধ আমার মনোযোগ নষ্ট করে। এরাই আমার ডায়রীর বাসিন্দা। কিন্তু আজ ডায়রী লিখছি ওদের ছাড়া।
অনেকদিন পর ভোর দেখলাম। এখন সকাল সাড়ে পাঁচটা বাজে । কিছুক্ষণ আগে মোয়াজ্জিন আযান দিল । অদ্ভুত ভালো লাগল ফজরের আযান শুনে । আমি সবগুলো আযান শুনি ।
কিন্তু সকালবেলাকার মতন এত চমৎকার নয়।
সকাল থেকে প্রচন্ড ক্ষিধা পেয়েছিল। আমি অনেকক্ষণ না খেয়ে বসে ছিলাম। আমার আশেপাশে অনেকগুলো মানুষ ঘোরাফেরা করছিল কিন্তু কেউ টের পায় নি। আসলে আমি এরকমই, প্রচন্ড কষ্ট হলেও চেপে যাই।
আমার এই চেপে যাওয়া অভ্যাস নাকি আমি জন্মের থেকে পেয়েছি এ কথা আমার নানু বলতেন।
একবার আমি লুকোচুরি খেলতে গিয়ে পায়ে পেরেক ফুটল, আমার পা পুরো লাল হয়ে গিয়েছিল। আমি এটুকু ভয় পাই নি , শুধু চেপে গিয়েছিলাম মা বকবে বলে। তখন আমার বয়স কতই ছিল দশ বারো।
আমি তখন ক্লাস এইটে পড়ি।
অংকে ভীষণ দূর্বল ছিলাম যে, প্রাইভেট পড়তে যেতাম। আর সেখানে পরিচয় হল একটি মেয়ের সাথে। সেই মেয়েটাকে একদিন না দেখলে ভালো লাগত না। আমি জানি না এর অর্থ কি ,“ভালোবাসা”!!! আমি ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা বলেছিল তুই প্রেমে পড়েছিস। আসলে ঐটুকু বয়সে ভালোবাসার সংজ্ঞা আমার কাছে ছিল রহস্যময়ী এবং অস্পষ্ট।
সেই মেয়েটাকে কোনদিন বলতে পারি নি এই সত্য কথাটা, এর জন্যে বোধহয় দায়ী আমার চেপে যাওয়া স্বভাবটা। চাপতে চাপতে ইন্টারমিডিয়েট পার করে ফেললাম। একদিন সে চলে গেল সানাইয়ের সুরে। আমি হাসতে হাসতে তাঁর বিয়েতে গিয়েছিলাম । ওকে বিয়ের বাড়ীতে নিয়ে গিয়েছিলাম আমি এবং ঐ গাড়ীটা চালিয়েছিলাম আমি।
এই সময় আমার অদ্ভুত একটা কষ্ট হল ওকে লাল বউ হতে দেখে। আমি যখন সেই গাড়ীটি স্টিয়ারিং ধরেছিলাম তখন আমি সামনে শুধু সেই স্মৃতিগুলো জীবিত হতে দেখলাম, সেই প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার দিনগুলো। আমি প্রচন্ড ঘোরের ছিলাম সারাটিক্ষণ। আমি পেলাম প্রথমবারের মতন প্রচন্ড যন্ত্রনা; ঠিক যেন আমার গায়ে অসংখ্য সূঁচ বিদ্ধ হচ্ছে।
একদিন হুট করে আমার প্রিয় নানু মারা গেলেন।
আমি দ্বিতীয়বারের মতন প্রচন্ড কষ্ট পেলাম। এই কষ্টটা আমাকে ভালোমতন যন্ত্রনার সংজ্ঞা শিখিয়ে দিল। আমি অঝোর বৃষ্টির মতন কাঁদলাম। এই নানুই, একমাত্র আমার চেপে থাকার স্বভাবটা ধরতে পেরেছিলেন। আমার কলেজ ছিল নানুর বাসার কাছে।
সেই সুবাদে নানুর বাসায় যেতাম । আমার চোখে মুখে যে প্রচন্ড ক্লান্তি, ক্ষুধা ছিল তা নানু খুব ভালো মতন বুঝতেন। আমার প্রিয় খাবারগুলো সঙ্গে সঙ্গে পেয়ে যেতাম।
আজকাল আমি মাঝে মাঝে নানুর কবরে যাই, আর মার ব্যাপারে নালিশ করি, কখনো সখনো নানুর সাথে একা একা কথা বলি। নানু শুধু শুনে যায়, কিছুই বলে না।
হঠাৎ জানালা দিয়ে দেখি আলো ঢুকছে। অথচ আমি ডায়রীতে এত বেশী মগ্ন ছিলাম যে , সেই কখন আকাশ ফর্সা হয়ে এল একদম টের পাই নি।
আমার সবচেয়ে প্রিয় মানুষগুলো ঐ দূর আকাশে। আর আমি আকাশের বুকে হাত বাড়িয়ে তাদের ডাকি প্রতিদিন। আর ঐ যে সুর্য আমাকে বলে,সবকিছু তো শেষ হয়ে যায় নি, আমার জন্যে আরো অনেকগুলো মানুষ স্বপ্ন দেখে, কষ্ট পায়, নতুন আশায় আশান্বিত হয় ।
আর আমিও উজ্জীবিত হয়ে নতুন সকালের মতন ভাঙ্গা ঘর গুছাই নতুন করে।
৯ই অক্টোবর,২০১২
--------------------------------------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজেক্ট ১১৮/৩৬৫
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।