তবু সে তো স্বপ্ন নয়, সব-চেয়ে সত্য মোর, সেই মৃত্যুঞ্জয় সৃজনশীল মানুষের কোন কোন নৈতিক দুর্বলতা অনেকে তাঁদের গুণের সাথে অবিচ্ছেদ্য মনে করেন। চিত্রশিল্পী, অভিনেতা, গায়ক, কবি , সাহিত্যিক এদের নিয়ে নানান স্ক্যান্ডাল খবরের কাগজের বিনোদন পৃষ্ঠার অনিবার্য অংশ। কিছু মিথ্যা, আবার কিছু সত্যি। রাজনীতিবিদ বা ব্যবসায়ীরাও সৃজনশীল বটেন, না হলে সারাক্ষণ এত মিথ্যা বলেন কি করে।
কিন্তু বিজ্ঞানীরা? তাঁরা তো সত্য আবিষ্কারে ব্যস্ত থাকার কথা।
বদমায়েশীর রুচিই থাকার কথা নয়, সময়ও না। কিন্তু সৃজনশীল তো, তাই একটু-আধটু দোষ থাকতেই পারে। সবার মধ্যে নয়। আমাদের পরিচিত সত্যেন্দ্রনাথ বসু একজন আদর্শ স্বামী ছিলেন। একমাত্র স্ত্রী, এবং এক ডজন বাচ্চাই প্রমাণ করে তাঁকে কত ভালোবাসতেন এবং অন্য কারো ওপরে চোখ দেয়ার অবকাশই পান নি।
আরেক উপমহাদেশী আব্দুস সালাম। চাচাতো বোনের সাথে বিয়ে। শিক্ষিত ডাক্তার স্ত্রী, গোটা চারেক বাচ্চা-কাচ্চা। প্রৌঢ়ত্বে পৌঁছানোর পরে কি হলো, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মোলিকিউলার বায়োফিজিসিস্ট লুইস জনসনকে দেখে মাথা খারাপ হয়ে গেল। বয়সের কিছু পার্থক্য তো ছিলই, যদিও আমাদের কেমিস্ট-সাহিত্যিক ও তার নববধূর সমান নয়।
সালাম ইংল্যান্ডে থেকেই কিভাবে আইন না ভেঙ্গে দু বিয়ে করেছিলেন, তা আমার পরিচিত কারো জানা নেই। চাচাতো বোনটি বোধহয় আসলেই ভাইটিকে ভালোবেসে ফেলেছিল, সব অপরাধ মাফ। নোবেল নেয়ার সময় দু'জনকেই নিয়ে গেছিলেন। সেখানকার ব্যবস্থাপকরা কিভাবে চলে-ফেরা-বসা ম্যানেজ করেছিলেন তাঁরাই জানেন। যদি চার বৌ-ওয়ালা এক আরব শেখ নোবেল পায় ( পদার্থবিদ্যায় না হোক, শান্তির জন্য হতে পারে), তাহলে নিশ্চয়ই বড় সমস্যা হতে পারে।
সবার প্রিয় বিজ্ঞান গুরুটিকে ধরা যাক। বিয়ের আগেই সহপাঠিনী মিলেভা মারিতসের গর্ভে সন্তান দেন, কিন্তু নিজে তার মুখ না দেখেই ত্যাগ করতে কুমারী মা-টিকে বাধ্য করেন। । দুজন মিলে নাকি ১৯০৫ সালের সেই তিন পেপারে কোলাবরেশন করেছিলেন, যদিও স্ত্রীর নাম দেন নি কোনোটিতে। তাঁর পেপারে কারো রেফারেন্সও দেন নি।
ফলে লোরেন্তসের আর পোয়াঙ্কারের আগের কাজেই যে রিলেটিভিটির সব ফর্মুলা দেয়া আছে, এমন কি ই= এম সি স্কোয়ারও, উনি নাকি আগে কখনো দেখেন নি বলে দাবি করলেন। এমন চমৎকার দার্শনিক চেহারা, মিডিয়া ভাবলো এঁর পক্ষে মিথ্যা বলা সম্ভব নয়। চার দিকের সবাইকে তিনি গরু ভাবতেই পারেন। যদিও হয় তো স্ত্রীকে নয়, ফলে লাগল ঝগড়া। বড় বিজ্ঞানী নামে মিডিয়ার রাজা হয়ে ধরাকে সরা ভাবা যায় বটে।
স্ত্রী বোধ হয় বললেন - দেবো সব ফাঁস করে। অগত্যা তালাকের শর্তে নোবেল পুরস্কারের টাকাটা তাকে দিয়ে দিতে হলো। বাকি দুটি বৈধ সন্তানেরও কোন খোঁজ রাখেন নি আমাদের সবার এত প্রিয় বিজ্ঞানী বাবাটি।
সম্পর্ক ছেদের আগেই ভাব জমিয়েছিলেন কাজিন এলসার সাথে। এমন কি তার ২০ বছরের মেয়েটিকেও খুব পছন্দ ছিল।
শোনা যায়, একদিন বলেছিলেন - দু জনের একজন হলেই আমার চলবে। বড় জনই জিতে যায়। আইন্সটাইনের জীবনকালে ও মৃত্যুর পরেও বহু মহিলা এই লোককেই তাঁদের বাচ্চার পিতা বলে দাবী করেন। ভাগ্য ভালো তখনও ডি, এন, এ,র গঠন বা কাজই আবিষ্কার হয় নি, পিতৃত্বের টেস্ট তো দূরের কথা।
আপেক্ষিক তত্ত্ব যাঁর পরীক্ষার ফল থেকে এসেছে, যিনি তাঁর নামের সেই বিখ্যাত ব্যতিচার যন্ত্র দিয়ে প্রমাণ করেন যে আলোর বেগ সব সময় সমান, সেই মাইকেলসনও কম যান নি।
প্রায়ই কাজের মেয়েদের ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়তেন। একজন তো পুলিশের কাছেই চলে গিয়েছিল। কিন্তু এত বড় বিজ্ঞানীর কথার পাশে গরীবের অভিযোগের কি দাম! তখন তো খবরের কাগজের এই স্বাধীনতা ছিল না। শ'য়ে শ'য়ে বিভিন্ন মতের টিভি চ্যানেলও আসে নি।
কি মাদাম কুরির নামে সবার মাথা শ্রদ্ধায় নিচু হয়ে যায়? তাঁর স্বামী, আসল বড় বিজ্ঞানী পিয়েরে কুরি এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার পরে তিনি আরেক বিখ্যাত বিবাহিত বিজ্ঞানী লাঞ্জভ্যানের (Langevin) সাথে এক সঙ্গে থাকা শুরু করেন।
এ সময় দ্বিতীয় নোবেলটির জন্য নির্বাচিত হন, কিন্তু নোবেল কমিটি ঘটনা জানতে পেরে এই কুলটাকে নিজে এসে সুইডেনের মহান রাজার সাথে হাত না মেলাতে পরামর্শ দেন। কিন্তু তিনি তা শোনেন নি। ইনি ছাড়াও মাদামের নাকি অনেক ছাত্রের সাথে সম্পর্ক ছিল।
আমাদের দেশে কালো বিড়ালের নামে অনৈতিকতার অভিযোগ এসেছে। এরউইন শ্র্যোডিঙ্গারের বিড়াল সারা পৃথিবীর পদার্থবিদদের কাছে আরো বিখ্যাত, কিছুটা জ্যান্ত, আর কিছুটা মৃত হওয়ায়।
এই বিখ্যাত বিজ্ঞানী পদার্থবিজ্ঞানের সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমীকরণটি আবিষ্কার করেন, এবং ইতিহাসবিদদের মতে এই বিরাট কীর্তিটি ঘটে তিনি যখন তাঁর রক্ষিতার সাথে সপ্তাহান্তের ছুটিতে এক পাহাড়ি শ্যালেতে অবস্থান করছিলেন।
বিজ্ঞানী পাউলি খুব স্পষ্ট কথার লোক বলে পরিচিত ছিলেন। সব সেমিনারে ভিন্নমতকে সাঙ্ঘাতিক আক্রমণ করতেন। তিনি তাত্ত্ব্বিকভাবে নিঊট্রিনোর জনক, এবং ফার্মি পরিসংখ্যানেরও যুগ্ম আবিষ্কারক। এ ছাড়াও তাঁর অনেক অবদান ছিল।
কিন্তু শেষের দিকে খুব ফ্রাস্টেশনে ভুগতেন। তখন মন ঠান্ডা রাখতে পতিতা পল্লীতে যেতেন, ড্রাগ খেতেন, পর্নোগ্রাফী দেখতেন, সে যুগে যা খুব নিন্দনীয় ছিল।
ওপেনহাইমার ছিলেন আণবিক বোমা তৈরীর জন্য ম্যানহাটান প্রজেক্টের নেতা। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে এক সহকর্মীর স্ত্রীকে ভাগিয়ে তার গর্ভে সন্তান তৈরী করেন। ফলে সে মহিলা, কিটি নামে এক কড়া কমিউনিস্ট, স্বামীকে তালাক দিয়ে ওপিকে বিয়ে করেন।
অবশ্য যুদ্ধের আগে থেকেই মেডিকেল ছাত্রী জীন ট্যালকের সাথে ওপেনহাইমারের সম্পর্ক তৈরী হয়েছিল যা কিটিকে বিয়ের পরেও অব্যাহত ছিল। আরেক বিখ্যাত সহকর্মী বিজ্ঞানী টলমানের দারুন সুন্দরী স্ত্রী রুথের সাথে কি কি করেছেন তা তাঁদের প্রকাশিত চিঠি দেখলেই বোঝা যায়। কিটির মাধ্যমে ওপির কমিউনিস্ট সংযোগ পরে তাঁকে মার্কিন সরকারের কাছে অচ্ছুত করে ফেলেছিল। মহিলাদের প্রতি দুর্বলতা সব সময়ই ছিল। দুবার নোবেল বিজেতা লাইনাস পলিং-এর স্ত্রীর পেছনেও লেগেছিলেন।
রিচার্ড ফাইনম্যানকে দিয়ে শেষ করা যাক। ইনি কোয়ান্টাম ফীল্ড তত্ত্বের অন্যতম পিতা, তাঁর পদ্ধতিটিও খুবই অভিনব। কোয়ান্টাম তত্ত্বের অপারেটর বাদ দিয়ে তিনি বিভিন্ন পথে কণাদের চালিয়ে সেই সব পথের ইতিহাসের যোগ ফল থেকে (পাথ ইন্টিগ্রাল) একই ফলাফল পান, যা অপারেটর দিয়ে পাওয়া যায়। ওপেনহাইমারের ম্যানহাটান প্রজেক্টেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল তাঁর। প্রথম জীবনে ভালোবেসে যাকে বিয়ে করেছিলেন সেই মেয়েটি যক্ষায় মারা যায়।
তার পরে যাকে বিয়ে করেন তিনি খুব ভালো বংশের মহিলা ছিলেন। ফাইনম্যানের ক্ষ্যাত মার্কা ব্যবহার ও সংস্কৃতিজ্ঞানহীনতা এই স্ত্রীকে এত পীড়িত করে যে তিনি চলে যান। এর পরে ফাইনম্যান ইংল্যান্ড থেকে এক মহিলাকে কাজের মেয়ে হিসেবে নিয়ে আসেন এবং তাকেই বিয়ে করেন। কিন্তু প্রায় রোজই চলে যেতেন টপলেস বার-এ, ন্যুড ছবি আঁকতেন। পতিতাদের সাথে চলতেন।
কিন্তু সব চেয়ে মারাত্মক ব্যাপার হলো নিজের সহকর্মী ও ছাত্রদের বৌদেরকেও সুযোগ পেলেই সিডিউস করতেন, এবং সেই কারণে ক্যালটেকের বহু লোক তাঁকে খুব অপছন্দ করত, বিজ্ঞানী হিসেবে যতই মর্যাদা দিক না কেন।
Richard Feynman: “Physics is like sex: Sure, it may give some practical results but that’s not why we do it.”
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।