আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যে কথা বলা হয়নি

যার আছে তার হারানোর ভয় ও আছে, যার নাই তার হারানোর ভয় ও নাই সেই ৮:৩০ থেকে শুরু হয়ে শেষ হত দুপুর ২ টায়। এভাবেই আমার স্কুলের সময় পার হত। মাঝে একটা ব্রেক দিলে কি হয় স্যাররা কি বোঝেনা আমাদের ক্ষুদা পেয়ে যায়। আম্মু অবশ্য বাসা থেকে টিফিন দিত কিন্তু রোজ রোজ বাসা থেকে নিয়ে যেতে ভাল লাগতনা। স্কুল থেকে বাসা খুব কাছে ছিল তবুও ছুটির পর ক্ষুদা সহ্য করে দারিয়ে থাকতাম একজনের জন্যে।

সে আমার সহপাঠী আমার সবচেয়ে ভাল বন্ধু অহনা। যদিও নচিকাতার নিলাঞ্জনার মত আমার তখনও অহনার প্রতি প্রেম জন্মায়নি। খুব ভাল কাটছিল আমাদের সময়। একসাথে স্কুলে যাওয়া এবং একসাথে স্কুল থেকে আসা আমাদের রোজকার রুটিং। আমাদের সেকশন ছিল এলাদা ছেলেরা পদ্মা শাখা আর মেয়েরা মেঘনা শাখা প্রতিদিন স্কুল ছুটির পর আজ কোন টিচার কি করল তা নিয়ে মজা করতাম।

এস, এস, সি পাশ করে অহনা ভর্তি হল ভাওয়াল কলেজে আর আমি ঢাকা কলেজ। তাই আমাদের যোগাযোগ খুব কম হত। তবে বিভিন্ন উৎসবে আমাদের মাঝে মাঝে দেখা হত। তখন কত জমানো কথা যে বলা হত। ওর অভাব আমাকে অনেক তারা করত।

ওর হাসি ওর অভিমান কথায় কথায় কান্না করা সবকিছু আমি বড় মিস করতাম। ধীরে ধীরে অনুভব করতে লাগলাম ও আমার মনের একটি বিশেষ স্থান জুড়ে রয়েছে। নজরুলের গানেন লাইটি বারেবার মনে পড়ত “মোর প্রিয়া হবে এসো রামী দিব খুপায় তারার ফুল”। যেহেতু তেমন দেখা হতনা আর ও আমার সবচেয়ে ভাল বন্ধু তাই ভয় পেতাম যদি না করে দেয় তাহলে আমি আমার বন্ধুকেও হারাতে পাড়ি। আমি ঢাকা কলেজেই অনার্সে ভর্তি হলাম আর ও হল ইডেন কলেজে।

তাই আমাদের প্রায়ই দেখা হত। মাঝে মাঝে নিউমার্কেটের ফুচকা বা কলা বাগানের মামা হালিম হাওয়া হত। টি এস সি তে আড্ডা বা কোথাও ঘুরতে যাওয়া এভাবেই কাটত আমাদের দিন। প্রতিদিন ভাবতাম আজই বলব ভালবাসি তোমায় হয় আমার হাতটি ধর নয় আমায় শূলীতে চরাও যা ইছে তোমার। তবুও বলি ভালবাসি।

কিন্তু এত ভীতুন ডিম ছিলাম যে কাছে গেলে বলতে পাড়তামনা। ও হয়ত বোঝত কিন্তু নিজে কিছুই প্রকাস করতনা। একদিন ওকে বললাম “ প্রেয়সী করে পেতে চাই তারে বারাবে কি সে হাত?” অহনা বলল কাকে পেতে চাস মেয়েটা কে? আমি ভেবচেকিয়ে গেলাম বললাম আছে একজন তুই যেহেতু সবচেয়ে কাছের বন্ধু তকেই বলব সবার আগে। ওকে প্রশ্ন করলাম তর মনের ঘরে কে বসবাস করে ত তো কখনও জানলামনা। কেউ কি আছে? থাকলে কি আর তর মত হাদারামের সাথে বসে বসে বাদাম খাই? রাতে অনেক ভাবলাম তাহলে অহনা কি আমায় চায়? অহনাকে একটা মাসেজ করলাম I don’t know what is love would u care to teach me? মেসেজ করেই ঘামতে শুরু করলাম।

ঠিক ৩ ঘণ্টা পর ওর উত্তর আসল ক্লাস নাইন থেকে এ পর্যন্ত কি শিখিয়ে আসছি এখনও যদি না জানস ভালবাসা কি তাহলে বোঝাযায় আমি খুবই বাজে শিক্ষক। তবে এটাই ভাল হয়েছে আমি তর শিক্ষক হয়ে নয় তর পাশে থাকতে চাই তর সহপাঠী, বন্ধু, এবং সহধর্মিণী হয়ে। ও আর একটা কথা এখন থেকে আমরা তুমি করে বলব ঠিক আছে আমার হুতুম পেঁচা। মেসেজটা পড়ে আমার মাঝেছ যেন আমি নেই। অহনাকে ফোন করলাম আমি কথা বলি কিন্তু ও চুপ।

কি আশ্চর্য যেই মেয়ের বকবকানিতে কথা বলার সুযোগ পেতামনা আর আজ সে চুপ কেন? ও শুধু বলল আজ চোখ ই মনের সকল কথা বলে দিবে। আমি বললাম আমার ময়না পাখির চোখের ভাষা আমি পরতে চাই এবং তখনই আমি বলব যা বলার জন্য ব্যাকুল হয়ে রয়েছি। তুমি শাহাবাগ আস আমি আসতেছি। অহনার প্রিয় রঙ কালো আর আমার নীল তাই আমি কালো পাঞ্জাবি পরেছি আর ওকে বলেছি নীল শাড়ি পরতে। দু নয়ন ভরে আমার নীল পরীকে দেখার বাসনা নিয়ে এক গুচ্ছ রজনীগন্ধা হাতে প্রতিক্ষয়ার প্রহর গুনছি কখন আসবে আমার প্রেয়সী।

ঐ তো অহনাকে দেখা যায় ঐ রিকশায়। হটাত বিরোধী দলের মিছিল শুরু হলো আর তার উপর পুলিশ ও সরকারি বাহিনির হামলা। চারিদিক টিয়ারসেলের ধুয়ায় আচ্ছন্ন। কিছুই ঠিক মত দেখা যাচ্ছেনা। দৌরে ছুটে গেলাম রাস্তার ঐ পারে যেখানে অহনার মুখটা শেসবার দেখেছিলাম।

হুম খুজে পেলাম আমার প্রেয়সীকে রক্তে তার নীল শারি ভিন্ন রঙ ধারন করেছে। তারপর আর কিছু মনে নেই জ্ঞান ফিরে নিজেকে আবিষ্কার করি হাঁসপাতালে পাশে আমার অহনা নেই। দ্রুত ছুটে গেলাম অহনার বাড়ি জানাজা শেষ হয়ে গেছে। ভেবেছেলাম যেই হাত দিয়ে ধরে রাখব তারে আজ সেই হাত দিয়ে মাটি ঢালছি তার কবরে। ও বলত আমার হাত ধরে চলে যাবে দূর কোন অজানায়।

কখনও ভাবিনি এ যাত্রা শুধু তার একার হবে। অহনা তোমাকে বলছি “যদি মন কাদে তুমি চলে এসো এক বরষায়, আমি যে বেচে আছি তোমারই অপেক্ষায়” এভাবে কত নিরীহ জীবন বলি হবে রাজনৈতিক সহিন্সতায়? এর জন্যেই কি যুদ্ধকরে দেশ স্বাধীন করেছিল? অপেক্ষায় আছি নতুন সূর্যোদয়ের ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।