চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার ভূজপুরে তাণ্ডবের ঘটনার দুই মাস পরও ১৬ হাজার ৪৭১ জন আসামির মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছে মাত্র ১৪০ জন।
ওই ঘটনায় করা পাঁচ মামলায় নাম উল্লেখিত আসামি ৪৭১ জন। অজ্ঞাতনামা আসামির সংখ্যা ১৬ হাজার। এজাহারভুক্ত আসামিরা শহর-গ্রামে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তার করছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
ফটিকছড়ি উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জামাল পাশা শওকত প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, ‘আমি নিজেও একটি মামলার বাদী।
’ বিএনপি, হেফাজত ও জামায়াত-শিবিরের অনেক এজাহারভুক্ত আসামি এখন প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু তাঁদের গ্রেপ্তারে পুলিশের তেমন কোনো ভূমিকা লক্ষ করা যাচ্ছে না। পুলিশের গ্রেপ্তার-বাণিজ্যের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তাণ্ডবের শিকার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. দিদারুল বশর চৌধুরী বলেন, ওই সহিংস তাণ্ডবের ঘটনার ইন্ধনদাতা উপজেলার সুন্দরপুর, হারুয়ালছড়ি ও ভূজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা। একাধিক মামলায় আসামি করা হলেও পুলিশ তাঁদের ধরছে না।
দলীয় মুখোশধারী কিছু নেতা তাঁদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছেন। পুলিশের ভূমিকাও সন্দেহজনক বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সোলাইমান বলেন, ‘তাণ্ডবকারীরা অগ্নিসংযোগ করে শত শত গাড়ি পুড়িয়ে দেয়। মধ্যযুগীয় কায়দায় হত্যা করা হয় আমাদের নেতা-কর্মীদের। এ নিয়ে দলের নেতা-কর্মীরা বাদী হয়ে ৩৩২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা পাঁচ হাজার লোককে আসামি করে ভূজপুর থানায় তিনটি মামলা করে।
কিন্তু এসব মামলায় দুই মাসে মাত্র ৩৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ’ তিনি আরও বলেন, দলের পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধিদল ১৫ জুন মামলাগুলোর অগ্রগতি নিয়ে কথা বলবেন।
মামলার আরেক বাদী জিয়াউল হক জিয়া অভিযোগ করেন, আসামিদের সন্ধান দেওয়ার পরও পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তারে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। তিনি রোমহর্ষক এ তাণ্ডবের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের দাবি করেন।
গ্রেপ্তার-বাণিজ্যের অভিযোগ অস্বীকার করে ভূজপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কবির হোসেন বলেন, আসামিরা পলাতক থাকায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা যাচ্ছে না।
তার পরও গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত আছে। এ ছাড়া, আসামিদের সন্ধান দেওয়ার জন্য বিভিন্ন স্থানে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা হলেও কারও সহায়তা পাওয়া যায় না।
জানতে চাইলে চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার (উত্তর) মো. ফরিদ উদ্দিন প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, প্রকৃত আসামিরা পলাতক। এ ছাড়া, প্রত্যন্ত এলাকা থেকে আসামি গ্রেপ্তার করা পুলিশের জন্য অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। আসামিদের সন্ধান পাওয়ার জন্য সাধারণ মানুষের কাছ থেকে তেমন একটা সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না।
তার পরও গ্রেপ্তার অভিযান চলছে। আসামি গ্রেপ্তারও সন্তোষজনক।
গত ১১ এপ্রিল উপজেলার ভূজপুরে পিটিয়ে হত্যা করা হয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের তিন নেতা-কর্মীকে। তাঁদের বহরে থাকা দেড় শতাধিক মোটরসাইকেল, ফায়ার সার্ভিসের একটি গাড়ি, পাঁচটি মাইক্রোবাস-প্রাইভেট কার, তিনটি পিকআপ ও চারটি চাঁদের গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়ে এখনো বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিত্সাধীন।
এ ঘটনায় ভূজপুর থানায় নিহত তিন ব্যক্তির পরিবার তিনটি, থানার পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের পক্ষে দুটি মামলা করা হয়। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।