আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সেই সময় এই সময় (রাজশাহী প্রকৌশল কলেজ থেকে রুয়েট)

শহরের দালানের ভীরে বাবুইর বাসা খুজি। ‘ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ রাজশাহী’তে ১৯৬৮ সালে যাঁরা ভর্তি হয়েছিলেন, পরীক্ষার সময় (জুলাই ১৯৭৩) তাঁরা একটা অদ্ভুত কাণ্ড করে বসলেন। তাঁরা ২২০ জন ছাত্র একসঙ্গে মস্তক মুণ্ডন করলেন। এরপর একসঙ্গে ছবি তুললেন। তাঁদের এই মস্তক মুণ্ডন আন্দোলন রোধ করতে তৎকালীন অধ্যক্ষ বিশেষ সভা ডেকে এক হুংকার ছেড়ে আদেশ জারি করেছিলেন।

এ বিষয়ে বহুল প্রচারিত দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় নানান ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বিশেষ তত্ত্ব ও তথ্যবহুল এক সম্পাদকীয় লেখা হয়েছিল। পরে জানা যায়, বিকেল হলেই ওই ছাত্রদের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মন্নুজান হলের সামনে আড্ডা দিতে যাওয়ার নেশা ছিল। পরীক্ষার সময় এই নেশা দমন করার জন্যই তাঁরা মস্তক মুণ্ডনের কৌশল নিয়েছিলেন। কারণ, মুণ্ডিত মস্তক নিয়ে তো আর ওদিকে যাওয়া যাবে না। ১৯৬৮ সালের শিক্ষার্থীদের এই গ্রুপ ছবিটি স্থান পেয়েছে সেই সময় এই সময় গ্রন্থে।

এটি প্রকাশ করেছে বর্তমান রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগ। বইটিতে এমন সব দুর্লভ স্মৃতিকথা রসবোধসহকারে উপস্থাপন করা হয়েছে, যা প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষক-শিক্ষার্থী ছাড়াও সাধারণ পাঠকের কাছে বইটিকে বেশ উপভোগ্য করে তুলেছে। ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ রাজশাহীর যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৬৪ সালে, যা ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, রাজশাহী এবং ২০০৩ সালে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়। এর পুরো সময়কাল ধরে সম্পাদিত বইটি তিনটি অংশে বিভক্ত করা হয়েছে। প্রথম অংশের নাম দেওয়া হয়েছে ‘স্মৃতির এ ঘর ও ঘর’।

এই অংশে রয়েছে ব্যক্তিগত অনুভূতি ও অভিজ্ঞতার আলোকে সেই সময়কার শিক্ষক এবং ছাত্রছাত্রীদের স্মৃতিচারণামূলক লেখা। দ্বিতীয় অংশের নাম দেওয়া হয়েছে ‘কথা ও ছন্দ’। এই অংশে প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী, যাঁরা ব্যক্তিগত, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শুধু প্রকৌশল অঙ্গনেই নয়, সাহিত্য, সংস্কৃতি এবং অন্যান্য বিষয়েও বিশেষ অবদান রেখেছেন, তাঁদের লেখা রয়েছে। আরও আছে বর্তমান ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে যাঁরা সেই ধারার দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের লেখা প্রবন্ধ, কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণ কাহিনি ইত্যাদি। শেষাংশের নাম দেওয়া হয়েছে ‘জীবন খাতার পাতায়’।

এই অংশে ১৯৬৪ সাল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত সংগৃহীত অত্যন্ত মূল্যবান দুই শতাধিক ঐতিহাসিক ছবি স্থান পেয়েছে। ছবিগুলো পাঠককে সেই সময়ে টেনে নিয়ে যাবে। স্মৃতির এ ঘর ও ঘর অংশে স্মৃতিচারণা করেছেন ভারতের প্রখ্যাত নদীবিজ্ঞানী মলয় মুখোপাধ্যায়। তিনি ২০১০ সালে রুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের একটি সেমিনারে যোগ দিতে এসেছিলেন। তাঁর লেখার শিরোনাম ‘আমার কাছে এক ফোঁটা জীবন্ত স্মৃতি রুয়েটের পুরকৌশল বিভাগ’।

ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ রাজশাহীর তৎকালীন অধ্যক্ষ ওয়াহিদ উদ্দিন আহমেদের বয়স এখন প্রায় ৯২ বছর। এই বয়সে কর্মজীবনের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘১৯৭২ সালে কলেজের ছাত্রাবাসের বার্ষিক প্রীতিভোজের আমি প্রধান অতিথি। আমার পাশে ছাত্রদের মধ্য থেকে একটা স্বাস্থ্যবান ছাত্রকে বসালাম। ছেলেরা আমার প্লেটে প্রধান অতিথি হিসেবে সমাদর করে বিশেষ খাবার পরিবেশন করতে লাগল। আর আমিও পাশের ছেলেটার প্লেটে সেগুলো চালান করে দিতে লাগলাম।

ছাত্রটি বেশ তৃপ্তিসহকারে খাচ্ছে দেখে সবাই তা উপভোগ করছিল। ’ যন্ত্রকৌশল বিভাগের তৎকালীন শিক্ষক এ কে এম রেজাউল করিম লিখেছেন, সেই সময় বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার খরচের প্রথম যে ভাউচার তিনি পেলেন, তাতে লেখা ছিল, ‘ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ রাজশাহীকে একটি লম্বা বাঁশ দিয়া পাঁচ টাকা বুঝিয়া পাইলাম। ’ আসলে পতাকার বাঁশ সরবরাহ করে বিক্রেতা এই ভাবে ভাউচার লিখেছিলেন। পুরোনো কাগজপত্র খুঁজলে এখনো হয়তো ভাউচারটি পাওয়া যেতে পারে। ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ রাজশাহীর প্রথম ছাত্রী ছিলেন মুসবাহ আলী ওরফে ডেইজী।

তিনি কলেজের ১৯৭১ সিরিজের ছাত্রী ছিলেন। কলেজের একমাত্র ছাত্রী হিসেবে বইটির এই অংশে তিনি তাঁর অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘পরিচিতি অনুষ্ঠানেই একজন শিক্ষক আমাকে পেছন থেকে গম্ভীর গলায় বললেন, “এই মেয়ে শোনো, মেয়ে বলে এখানে প্রিভিলেজ পাবে না, কথাটা মনে রেখো। ” আমি স্যারের কথা মনে রেখেছিলাম। নিজেকে কখনো মেয়ে মনে করিনি।

তবে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ রাজশাহীর প্রথম ছাত্রী বলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দল বেঁধে ছাত্রছাত্রীরা আমাকে দেখতে আসত। ’ বইটির মলাটের পেছনের পাতায় ব্যবহার করা হয়েছে দুটি ছবি। তার একটি হচ্ছে ১৯৬৫ সালের তৎকালীন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ রাজশাহীর প্রশাসনিক ভবনের ছবি। এখন এই ভবনের পাশে যে দেবদারুগাছগুলো মহিরুহ হয়ে উঠেছে, ছবিতে দেখা যাচ্ছে, সেই গাছগুলোকে ছাগলে মুড়ে খাওয়ার হাত থেকে রক্ষার জন্য সবেমাত্র ইট দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। ছবিটি দেখে যে কেউ রোমাঞ্চিত হবেন।

দ্বিতীয় ছবিটি পুরকৌশল বিভাগের বর্তমান ছবি। বইটিতে রুয়েটের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ৮৬টি লেখা স্থান পেয়েছে। এর সম্পাদনার প্রধান দায়িত্ব পালন করেছেন পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ইকবাল মতিন। সহযোগী সম্পাদক ওই বিভাগের শিক্ষক এন এইচ এম কামরুজ্জামান সরকার, নিয়ামুল বারী, আবু সুফিয়ান মো. জিয়া হাসান ও জাহাঙ্গীর আলম। ক্রাউন সাইজের বইটির পৃষ্ঠাসংখ্যা ৪৬০।

দাম রাখা হয়েছে ৫০০ টাকা। বইটির প্রকাশনা উৎসব আজ ৬ অক্টোবর। সুত্র ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।