অন্যায় গুলো সূর্যের আলো দিয়ে জ্বালিয়ে দিতে চাই গরীবের বাহন হিসেবে রেলের একটা পরিচিতি ছিল সেই আদিকাল থেকেই। ঘন্টার পর ঘণ্টা মানুষ ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করে ষ্টেশনে বসে থাকে শুধু মাত্র আর্থিক সাশ্রয়ের জন্য। এক ঘন্টার পথ তিন ঘণ্টা লাগলেও আর্থিক বিষয় বিবেচনা করে সে কষ্ট সহ্য করে যাত্রীরা। দীর্ঘ দিনেও বাংলাদেশে রেলের সেবার মান বাড়েনি বললেই চলে। এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে রেলে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি।
রেল খাতে সরকার বছরে প্রায় ৫৯৮ কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়ে থাকে। গত ২০ বছরে রেলর ভাড়া বাড়েনি। এই দীর্ঘ সময়ে বাস-ট্টাকসহ বিভিন্ন পরিবহণের ভাড়া বেড়েছে ২৮০ শতাংশ, জ্বালানী তেলের দাম বেড়েছে ৪২০ শতাংশ। এ সব দিক দিয়ে বিবেচনা করলে রেলের ভাড়া বাড়ানো সময়ের দাবী ছিল।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, রেলের যাত্রী সেবার মান না বাড়িয়ে হঠাৎ ভাড়া দ্বিগুণ করার যুক্তি কতটা গ্রহণ যোগ্য? যাত্রীরা সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে যে পদ্ধতিতে সেবা পাচ্ছে, তার তুলনা করেই যাত্রীসেবা-পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করা প্রয়োজন ছিল, কিন্তু সরকার তা করেনি।
যদি কোন পণ্যের মান খারাপ হবার পরও যদি ঐ পণ্যের দাম বাড়ে, তবে মুক্ত বাজার অর্থনীতির এই সময়ে সে পণ্য বাজারে টিকে থাকতে পারবে না। রেলের বর্তমান অবস্থা যে সেই দিকেই অগ্রসর হচ্ছে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
কিছু উদাহরণ দিয়ে তা প্রমাণ করা যাক। রংপুর থেকে ঢাকাগামী আন্তঃনগর “রংপুর এক্সপ্রেস” এর শোভন চেয়ারের টিকিট মূল্য ২৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৬৫ টাকা করা হয়েছে। রংপুর থেকে ঢাকাগামী বিলাসবহুল বাসের ভাড়া ৪০০-৪৫০ টাকা।
বাসে ঢাকা যেতে সময় লাগে প্রায় ৭ ঘণ্টা আর ট্রেনে লাগে প্রায় ১২ ঘণ্টা। এছাড়া ট্রেনের প্রায়ই শিডিউল বিপর্যয়ে ২০ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লাগার নজিরও খুব কম নয়। এছাড়া কম দূরত্বের ষ্টেশনগুলোতে বর্তমান বাসের থেকে ট্রেন বাড়া কয়েক গুণ বেশী। রংপুর থেকে কাউনিয়ার ১৮ কি:মি: রাস্তা যেতে ট্রেনের ভাড়া ৪৫ টাকা আর বাসের ভাড়া ১৫ টাকা। তা হলে একজন যাত্রী কি কারণে সড়কপথের পরিবর্তে রেলপথে যাতায়াত করবে?
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে রেলের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে ৫০ শতাংশ।
কিলোমিটার প্রতি ২৪ পয়সার স্থলে বর্তমান ৩৬ পয়সা পয়সা করা হয়েছে। কিন্তু আসলে কি তাই? ঢাকা-চট্টগ্রাম লাইনে আন্তঃনগর ট্রেনের শোভন ১২৫ থেকে বেড়েছে ২৬৫, শোভন চেয়ার ১৫০ থেকে ৩২০, প্রথম শ্রেণী সিট ২৯০ থেকে ৪২৫, প্রথম শ্রেণী বার্থ ৪৫৫ থেকে ৬৩৫, স্নিগ্ধা ৩৮০ থেকে ৬১০, এসি সিট ৪৯৫ থেকে ৭৩১, এসি বার্থ ৭৫৬ থেকে ১১৪৩ টাকা করা হয়েছে।
একইভাবে ঢাকা-সিলেট রুটে আগের ভাড়া বাতিল করে আন্তঃনগর ট্রেনের শোভন ২৪৫, শোভন চেয়ার ২৯৫, প্রথম চেয়ার ৩৯৫, প্রথম শ্রেণী বার্থ ৫৯০, স্নিগ্ধা ৫৬৪, এসি সিট ৬৮৯, এসি বার্থ ১০৫৮ টাকা করা হয়েছে।
রংপুর ঢাকা রুটে শোভন চেয়ারের টিকিট মূল্য ২৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৬৫ টাকা, প্রথম শ্রেণীর চেয়ারের ভাড়া ৪০০ থেকে বাড়িয়ে ৬২০ টাকা, প্রথম শ্রেণীর নন-এসি বার্থ ৫৭৫ থেকে ৯৩০ টাকা, এসি বার্থ ৯৬৬ থেকে বাড়িয়ে ১৬০৫ টাকা করা হয়েছে।
সরকার ৫০ শতাংশের কথা বললেও প্রকৃত পক্ষে ভাড়া বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ।
৫০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধির পাশাপাশি আগে রেলের প্রতি মানুষকে আকৃষ্ট করার উপায় হিসেবে রেলের সেবার মান বাড়ানো যায়নি বলে যে রেয়াত (মওকুফ) দেয়া হতো তা তুলে দেওয়া হয়েছে। ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভাড়া প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।
যানজট সমৃদ্ধ ভাঙ্গাচোরা রাস্তার কারণে মানুষ যখন রেল-মুখি হতে শুরু করছিল। আর এতে করে বিপাকে পরে পরিবহন মালিকরা। পরিবহণ ব্যবসায় লাভবান হবার জন্য একটি মহল দীর্ঘ দিন ধরেই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে।
তারা কখনও চায় না রেল সমৃদ্ধ হোক। এই কুচক্রী মহলের পাতানো ফাঁদে পা দিয়েছে সরকার। অযৌক্তিক ভাবে ভাড়া বৃদ্ধির ফলে মানুষ রেল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে। এতে করে লাভবান হবে বেসরকারি পরিবহণ মালিকরা। বিপুল পরিমাণ ভাড়া বাড়ানোর পরামর্শদাতারা যে রেলের মঙ্গল চায় না তা স্পষ্ট।
সরকার চলে জনগণের ট্যাক্সে তাই জনগণ সরকারি যোগাযোগব্যবস্থায় যদি একটু সাশ্রয় আশা করে তবে তা দোষোর কিছু নয়। বিশ বছরে যে ভাড়া বাড়ানো হয়নি সেই ভাড়া একসঙ্গে বাড়িয়ে দিয়ে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা জন-বান্ধব সরকারের কাজ হতে পারে না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।