চীনের থাং সাম্রাজ্যের এক রাজা নাকি তাঁর সেনাবাহিনীকে ৬০০ মাইল দূরে পাঠিয়েছিলেন লিচুর খোঁজে। রাজা লিচুর রং-রস-সৌরভ উপহার দিতে চেয়েছিলেন তাঁর প্রেয়সীকে। চীন দেশের ইতিহাসে লিচু নিয়ে এরূপ নানা গল্প প্রচলিত রয়েছে। রাজা থাং শেষ পর্যন্ত তাঁর প্রেয়সীর মন জয় করতে পেরেছিলেন কি না, তা অবশ্য অজানাই রয়ে গেছে। তবে এ কথা সত্যি যে লিচুর প্রতি প্রেম নেই এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দায়!
‘লিচুর উৎস চীন হলেও আমাদের দেশের আবহাওয়া ও মাটি লিচু চাষের জন্য বেশ উপযোগী।
আমাদের দেশের উত্তরবঙ্গে লিচুর চাষ ভালো হয়। বাজারে আমরা যে লিচুর দেখা পাই, সেগুলো দিনাজপুর, ঈশ্বরদী, পাবনা ও রাজশাহীতে চাষ করা। তবে সবার কাছে দিনাজপুরের লিচুর কদরটাই বেশি দেখা যায়। ’ বলেন কৃষি ও প্রকৃতিবিদ মৃত্যুঞ্জয় রায়।
বাজার ঘুরে ঘুরে আপনার চোখে বিভিন্ন প্রজাতির লিচুর দেখা মিলবে।
দেশি প্রজাতির লিচু তো রয়েছেই, তার পাশাপাশি ভারতীয় ও চীনা প্রজাতির লিচু রয়েছে। ভারতীয় ও চীনা প্রজাতির লিচুগুলো বহুদিন ধরেই আমাদের দেশে চাষ করা হচ্ছে এবং ভালো ফলনও পাওয়া যাচ্ছে।
আম, কাঁঠাল, লিচুর এই মৌসুমে নিজেকে লিচুর স্বাদ থেকে বঞ্চিত করার সুযোগ কোথায় বলুন? শুধু যে স্বাদ আর সৌরভের জন্য লিচু খাবেন তা কিন্তু নয়, লিচুর পুষ্টিগুণ অনেক।
আপনার জন্য রইল লিচুর বাজারের নানা খোঁজখবর। বাজারে বিভিন্ন প্রজাতির লিচু পাওয়া যাচ্ছে।
ঢাকার কারওয়ান বাজারের লিচু বিক্রেতা মোহাম্মদ আশরাফ বলেন, বাজারে এখন দেশি প্রজাতির লিচু ছাড়াও বোম্বাই, মাদ্রাজি, বেদানা, চায়না-২, চায়না-৩, আপেল লিচুসহ বিভিন্ন ধরনের লিচু পাওয়া যাচ্ছে। দেশি লিচুর দাম পড়বে শ হিসেবে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা, আপেল লিচু ২০০ থেকে ২৫০, চায়না-৩ ৭০০ থেকে ৮০০, বোম্বাই লিচু ৩৫০ থেকে ৪০০, কাজলি লিচু ২৫০ থেকে ৩০০, বেদানা লিচু ১৬০০-২০০০ টাকা।
কেনার সময় কোনটি কোন লিচু তা দেখে চেনার উপায় এবং ভালো লিচু কেনার নানা পরামর্শ দিয়েছেন মৃত্যুঞ্জয় রায়।
সাধারণত আমাদের দেশীয় প্রজাতির লিচুগুলো আকারে ছোট হয়। স্বাদেও কিছুটা টক হয়।
এর আঁটি থাকে বড়। দেশি প্রজাতির লিচুর গায়ের কাঁটাও তীক্ষ হয়।
বোম্বাই ও মাদ্রাজি লিচুর রং হয় টকটকে লাল। এর শাঁস মিষ্টি হয়, বিচিও ছোট হয়।
চায়না-৩ লিচুর গোলাকার হয়।
বিচি বোম্বাই লিচুর থেকে ছোট হয়। লিচুগুলো বড় আকারের হয়।
আপেল লিচুর রংটাও টকটকে লাল হয়। গোলাকার হলেও বিচিটা সাধারণত একটু বড় হয়।
বেদানা লিচুর আকৃতি চায়না-৩ থেকেও বড়।
খোসা খুব পাতলা হয়। কাঁটা প্রায় নেই বললেই চলে। এর বিচির আকৃতি খুব ছোট। এটি দেখতে পুরোপুরি টকটকে লাল নয়। তবে এই লিচুগুলো খেতে খুব মিষ্টি হয়।
লিচুর প্রকৃত স্বাদ পেতে হলে কিনতে হবে সবচেয়ে সতেজ লিচু। সে ক্ষেত্রে খেয়াল করতে হবে, লিচুর বোঁটা লিচুর সঙ্গে সতেজ ও শক্তভাবে আটকে আছে কি না।
লিচু কিনতে গিয়ে লক্ষ করুন লিচুর খোসার দিকেও। সাধারণত ভালো লিচুর খোসাটি সরস হয়। এর গায়ে কোনো দাগ থাকে না।
লিচুতে কোনো রকম রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়েছে কি না, তা চেনার জন্য খেয়াল রাখুন লিচুর গায়ে কোনো ধরনের কালো ছোপ আছে কি না। লিচুটি নাকের কাছে ধরে গন্ধ শুকতেও ভুল করবেন না। অনেক সময় লিচুতে পোকার উপদ্রব কমাতে কীটনাশক স্প্রে করা হয়। কোনো ধরনের বাড়তি গন্ধ মনে হলে সেই লিচু কেনা থেকে বিরত থাকুন।
লিচুকে মনোলোভা করে তুলতে অনেক সময় এতে রংও দেওয়া হয়।
সে ক্ষেত্রে বেশি টকটকে লিচু চোখে পড়লে লিচুর ঝাঁকা হাতে নিয়ে লক্ষ করুন ভেতর ও বাইরের উভয় পাশের লিচুর রং এক কি না।
লিচুর বোঁটার কাছে কোনো ধরনের সূক্ষ্ম ছিদ্র থাকার মানেই হলো লিচুগুলোতে পোকার উপদ্রব আছে। ছিদ্র ও গুঁড়ি গুঁড়ি দানাদার উপাদান চোখে পড়লে লিচুগুলো কিনবেন না।
গাছ থেকে পাড়ার পর থেকেই লিচুর গুণাগুণ ধীরে ধীরে কমতে থাকে। বাতাসে লিচুর তরতাজা ভাবটি দ্রুত শুকিয়ে যায় এবং খোসা শক্ত হয়ে যায়।
এই দিকটি লিচু কেনার সময় মাথায় রাখতে পারেন। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।